বাংলাদেশ নির্বাচনঃ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করতে যাচ্ছে

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে বেসরকারি ফলাফলে ২৯৮ টি আসনের মধ্যে এককভাবে ২২২ আসনে জয়ী হয়ে টানা চতুর্থবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

একজন প্রার্থীর মৃত্যু এবং একজনের প্রার্থীতা বাতিলের কারণে ২ টি আসনের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী এই নির্বাচনে ভোট হার ৪০ শতাংশ।

ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টার দিকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় নির্বাচন কমিশন।

সিইসি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রায় ৪০ শতাংশ হতে পারে। তিনি বলেন, “নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে (চূড়ান্ত অনুমান) সব তথ্য সংগ্রহের পরে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।”

২০০৮ সাল থেকে টানা ৩ বার রাষ্ট্র ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। তার মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এই নির্বাচনে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। আর ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, ভোটের আগের রাতে ভোট কারচুপি করা হয়েছে।

কিছু বিচ্ছিন্ন সহিংসতার ঘটনা ছাড়া, শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়।

বিএনপিসহ ১৬ টি নিবন্ধিত দল বিহীন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সারাদেশে নির্বাচনী সহিংসতায় ২ জন গুলিবিদ্ধ ও ১ নিহত হয়েছে।

এছাড়া জাল ভোটের কারণে কয়েকটি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়েছে।

সারাদেশে বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

নির্বাচন শেষে (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, "জনগণ তাদের পছন্দমত প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়েছে। ভোট প্রদানে কোনও প্রকার ভয়-ভীতি ও হস্তক্ষেপ হয়নি। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে শক্তিশালী করবে।"

তবে নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির পক্ষ থেকে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, "একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভোটারদের অভিনন্দন জানাচ্ছি দলের পক্ষে।"

তার দাবি, নির্বাচন বর্জনে তাদের আহ্বান সফল হয়েছে।

মঈন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের মতো ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাবে, "কিন্তু এটা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়, কারণ বাংলাদেশের ভোটাররা কীভাবে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে, তা দেশের জনগণ এবং সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।"

আসন ভাগাভাগির এই নির্বাচনে নৌকা মার্কা ২২৪টি আসনে জয়লাভ করে।

আর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে নির্বাচনে অংশ নেওয়া জাতীয় পার্টি ১১ টি আসনে জয়লাভ করে।

যদিও তাদেরকে আওয়ামী লীগ ২৬ টি আসন ছাড় দিয়েছিল।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকা প্রতীকে একটি করে আসন পেয়েছে।

হঠাৎ করে বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান পেয়েছেন ১ টি আসন।

এছাড়া নির্বাচনে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন।

এবারের নির্বাচনে ৯২ জন নারী প্রার্থী অংশ নিলেও ভোটে জয়লাভ করেন ১৯ জন।

নির্বাচন কমিশনের হিসেবে অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে ২৮ টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে।

এদিকে ভোট বর্জন করা বিএনপিসহ দলটির আন্দোলনে সঙ্গী ৩৬ টি দল ভোটের আগের দিন (৬ জানুয়ারি) ও ভোটের দিন (৭ জানুয়ারি) ৪৮ ঘন্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে।

পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে ৮ জানুয়ারি (সোমবার) বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।