যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন রবিবার জর্ডানে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ব্লিংকেন ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের একটি গুদামও পরিদর্শন করেছেন। ওই গুদাম থেকে গাজার জন্য ট্রাকে সহায়তা বোঝাই করা হয়।
জর্ডান হলো এই অঞ্চলে ব্লিংকেনের সফরের সর্বসাম্প্রতিক স্থান যেখানে ইসরাইল-হামাস লড়াইয়ের উত্তাপ পৌঁছেছে। অক্টোবরে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে জর্ডান এবং অন্যান্য আরব দেশগুলো অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছে, কিন্তু ইসরাইল সেই আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গাজায় ইসরাইলের সামরিক পদক্ষেপের কঠোর সমালোচক তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সাথে আলোচনার পর শনিবার গভীর রাতে ব্লিংকেন সাংবাদিকদের বলেন, গাজার সংঘাত কমিয়ে আনা এবং ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে তুরস্ক মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সাথে তাদের প্রভাব ব্যবহার করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি উভয়ের জন্য স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার আহ্বান জানিয়েছে। এর মধ্যে ফিলিস্তিনিদের রাজনৈতিক অধিকার অর্জন বিশেষ করে ইসরাইলের নিরাপত্তার নিশ্চয়তাসহ একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারটিও জড়িত।
৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিরা ইসরাইলের সীমান্ত অতিক্রম করে দক্ষিণাঞ্চলে আক্রমণ করে। ইসরাইল জানায়, এই হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছে এবং হামাস প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করেছে। এরপরই ইসরাইল হামাসকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য তাদের সামরিক অভিযান শুরু করে।
কিছু জিম্মিকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এখনো প্রায় ১৩০ জন বন্দীকে গাজায় জিম্মি করে রাখা হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ২২ হাজার ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলের সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছে। নিহতদের বড় একটি অংশ নারী ও শিশু।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গাজায় চলমান যুদ্ধের একটি নতুন পর্যায়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ভূখণ্ডের উত্তরে আরও লক্ষ্যযুক্ত কৌশল এবং দক্ষিণে হামাস নেতাদের দমন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইসরাইলি সরকার এখনো প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এই পরিকল্পনার কোনো আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, মঙ্গলবার বৈরুতে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা সালেহ আল-আরৌরির হত্যার পর যুক্তরাষ্ট্র সংঘাত আরও ছড়িয়ে পরার ঝুঁকির ব্যাপারে “ভীষণ উদ্বিগ্ন”।
ইসরাইলের সেনাবাহিনী বলেছে, তারা লেবাননের জঙ্গি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর হামলার জন্য উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। বৈরুতে একটি ড্রোন হামলার পরে এই সতর্কতা জারি করা হয়। ঐ হামলায় হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত আল-আরৌরিকে হত্যা করা হয়েছিল।
এদিকে গাজায় হামাস জঙ্গিদের হাতে আটক বাকি জিম্মিদের উদ্ধারে ব্যাপক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় হামাস এবং অন্যান্য জঙ্গিদের হাতে ১২৯ জন মানুষ জিম্মি হয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়।
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য রয়টার্স এবং এপি থেকে নেয়া হয়েছে।