বিক্ষিপ্ত সহিংসতার মধ্যে দিয়ে রবিবার (৭ জানুয়ারি) বিকালে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। সহিংস ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম ও মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মুন্সিগঞ্জে একজন নিহত হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে ভোটকেন্দ্রের পাশে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের এক সমর্থককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত মো. জিল্লুর রহমান মিরকাদিম পৌর শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।
মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সালের সমর্থকরা হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, ঘটনাটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে ঘটেছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিলো। তারপরও কারা, কেন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
চট্টগ্রামে দু’জন গুলিবিদ্ধ
চট্টগ্রাম-১০ আসনের কলসি পাহাড়তলী এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মনজুর আলম মঞ্জুর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়।
রবিবার বেলা ১১টার দিকে ভোট চলাকালে পাহাড়তলী ডিগ্রি কলেজের সামনে এই ঘটনা ঘটে।গুলিবিদ্ধ দুইজন হলেন; শান্ত বড়ুয়া (৩০) ও মো. জামাল (৩২)।
আহত দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ফুলকপি প্রতীকের মনজুর আলম মঞ্জুর কর্মী বলে জানা গেছে। গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সংঘর্ষ খুলশী এলাকার জাকির হোসেন রোডে ছড়িয়ে পড়ে। পরে, পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নেয়ামত উল্লাহ বলেন, দুইপক্ষের মারামারিতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গুলির ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে এটি পিস্তলের গুলি।
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ
চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁও এলাকায় পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণ শুরুর এক ঘণ্টার মাথায় সকাল ৯টার দিকে মৌলভী পুকুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রে ভোটার আসতে বাধা দিলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে। এ সময় তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। পরে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মহানগরীর মৌলভী পুকুর এলাকায় ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর, বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
ঢাকায় শিশুসহ আহত ৪
রাজধানী ঢাকার হাজারীবাগের বটতলায় ভোটকেন্দ্রের সামনে ককটেল বিস্ফোরণে নারী-শিশুসহ চারজন আহত হয়েছেন।
রবিবার (৭ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বটতলা জামেয়া আনওয়ারুল উলুম মাদরাসা ভোটকেন্দ্রের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন; আমির হোসেন (৬০), বাদল আহমদ (৫০), তার ছেলে তানভীর আহমেদ (৮) ও মাকসুদা বেগম (৫০)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বটতলা জামিয়া আনোয়ারুল উলুম মাদরাসার সামনে দুটি বোমা বিস্ফোরিত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, আহতরা সামান্য আহত হয়েছেন এবং এখন তারা আশঙ্কামুক্ত।
আনসার আহত
যশোরের শংকরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন বাংলাদেশ আনসারের সহকারী প্লাটুন কমান্ডার (এপিসি) মারুফ হোসেন। তিনি সেখানে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা তাকে যশোর ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছেন।মারুফ হোসেনের ডান পায়ে আঘাত লেগেছে।
অনিয়ম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহিংসতা ও অনিয়মের কারণে ৬ জেলার ৯ টি আসনের ২১ কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
একই সঙ্গে নির্বাচনে অনিয়ম ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০ জনের অধিককে সাজা দেয়া হয়েছে। সাতটি কেন্দ্রে ভোট বাতিল হয়েছে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) সন্ধায় ইসির নির্বাচনী মনিটরিং সেল থেকে এই তথ্য জানা যায়।
ইসির মনিটরিং সেল জানায়, নির্বাচন স্থগিত হওয়া কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে; সুনামগঞ্জ ২- আসনে মিরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭ নং কেন্দ্র), নোয়াগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৫৬ নং কেন্দ্র), শুকুরনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭০ নং কেন্দ্র)।
আরো যেসব কেন্দ্র স্থগিত হয়েছে, সেগুলো হলো; কক্সবাজার ১- আসনের চরনদীপ ভূমিহীন প্রাইমারি স্কুল (২৫ নং কেন্দ্র), দক্ষীন ফুল ছুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭৪ নং কেন্দ্র), মরংগুনা অসুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮০ নং কেন্দ্র)। জামালপুর ৫- জাগির মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৭০ নং কেন্দ্র)।
নরসিংদি ৪- ইব্রাহীমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৩৪ নং কেন্দ্র)। নরসিংদি ৩ - দুলালপুর সিনিয়র ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা ( ৫ নং কেন্দ্র), ভিটিচিনাদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( ৮ নং কেন্দ্র) টাঙ্গাইল ২- কাহেতা সরকারি প্রাথমিক স্কুল ( ১৬ নং কেন্দ্র)।
কুমিল্লা- ৩- ৭৬ নং গুর্গারাম (ডি.আর) পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (৭৬ নং কেন্দ্র), ধনিরামপুর ডিডিএসওয়াই উচ্চ বিদ্যালয় ( ৮১ নং কেন্দ্র), কুমিল্লা ৪- সূর্যপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৮৪ নং কেন্দ্র)।
কুমিল্লা ১১- বগৈর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (২৮ নং কেন্দ্র), গোবিন্দপুর শামসুল হুদা দাখিল মাদ্রাসা (৩৫ নং কেন্দ্র), ধনিজকরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (৩৮ নং কেন্দ্র)। আমানগন্ডা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (৪৯ নং কেন্দ্র), হিংগুলা হাছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় -১ (৭৪ নং কেন্দ্র)। হিংগুলা হাছানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়-২ (৭৫ নং কেন্দ্র) এবং বাতিসা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়-১ (৮৩ নং কেন্দ্র)।