বাংলাদেশ নির্বাচন: হাবিবুল আউয়াল জানালেন ‘ভোটার উপস্থিতি ৪০ শতাংশ হতে পারে’

নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। ২৬ নভেম্বর, ২০২৩।

বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণণা চলছে, আসছে ফলাফল। এর আগে ভোট গ্রহণ শেষ হয় নির্ধারিত সময় বিকেল ৪টায় (৭ জানুয়ারি)।

কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া, শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক তথ্য মতে, ভোটের হার ৪০ শতাংশ।

সকাল ৮টায় যখন ভোট গ্রহণ শুরু হয়, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি এবং সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো হরতাল পালন করে।

সিইসির সংবাদ ব্রিফিং

ভোটগ্রহণ শেষে বিকেল ৫টার দিকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় নির্বাচন কমিশন।

এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনা কাজী হাবিবুল আওয়াল জানান যে প্রাথমিক তথ্য মতে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ। চূড়ান্ত গণনায় এ হার কিছুটা কম-বেশি হতে পারে বলে জানান তিনি।

সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আন্তরিকতা ও সহযোগিতার কারণে রবিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেন, “যেহেতু সরকারের আন্তরিকতা রয়েছে..... এবং সরকারের আশ্বাস অনুযায়ী আমরা সহায়তা পেয়েছি, তাই দলীয় সরকারের অধীনে সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

সিইসি জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি প্রায় ৪০ শতাংশ হতে পারে। তিনি বলেন, “নির্বাচনে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে (চূড়ান্ত অনুমান) সব তথ্য সংগ্রহের পরে এটি পরিবর্তিত হতে পারে।”

এক দলের পোলিং এজেন্ট

এর আগে, সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হতে হলে অবশ্যই প্রত্যেকটা কেন্দ্রে প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট থাকতে হবে। কিন্তু তিনি যে ভোটকেন্দ্রগুলোতে গেছেন, সেখানে সব একই দলের পোলিং এজেন্ট পেয়েছেন।

“নৌকার পক্ষের একজন করে পোলিং এজেন্ট পেয়েছি।বাদ বাকি প্রার্থী বা অন্য কোন লোকজন দেখতে পাইনি;” তিনি বলেন।

রবিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে আটটায় রাজধানীর হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ কেন্দ্রে নিজের ভোট দিযে এসে সকাল সাড়ে ১০ টায় নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

সিইসি বলেন, “মনে হচ্ছে, প্রতিপক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী যারা তাদের অনেকের বোধ হয়, সেই সামর্থ নাই। আমরা খুব জোর দিয়ে বলেছিলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হতে হলে অবশ্যই প্রত্যেকটা কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট থাকতে হবে।”

আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল

চট্টগ্রাম-১৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বিকাল ৪টায় নির্বাচন ভবনে সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে তার প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে।

ইসি সচিব বলেন, “তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হুমকি দিয়েছেন। এর আগেও তিনি কোড লঙ্ঘন করেছেন।”

মুস্তাফিজুর রহমান এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য।

আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যা ছয়টায় আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জনগণ তাদের পছন্দমত প্রার্থীদেরকে ভোট দিয়েছে।

''ভোট প্রদানে কোনো প্রকার ভয় ভীতি হস্তক্ষেপ হয়নি। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে শক্তিশালী করবে,'' তিনি বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, পৃথিবীর কোথাও পারফেক্ট গণতন্ত্র নেই। ''খোদ যুক্তরাষ্ট্র কতটা মানবতা, গণতন্ত্র প্রতিপালিত হয় সেটা সবাই জানে;” বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা যে ভোট সুষ্ঠু ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন, এজন্য জনগণের প্রতি তাঁরা কৃতজ্ঞ।

''নির্বাচনে ভোট দেয়ার পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পেরেছি। আশা করি এই নির্বাচনে নৌকা মার্কা বিজয়ী হবে। শেখ হাসিনার দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা, সাহসিকতায় নৌকার পক্ষে রায় আসবে বলে মনে করি,'' তিনি বলেন।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

একতরফা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনে বিএনপির আহ্বানে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ভোটারদের অভিনন্দন জানিয়েছে বিএনপি।

দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা ড. আবদুল মঈন খান দাবি করেছেন নির্বাচন বর্জনে তাদের আহ্বান সফল হয়েছে।

রবিবার (৭ জানুয়ারি) গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই দাবি করেন।

মঈন খান আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন গত দুটি জাতীয় নির্বাচনের মতো ভোটার উপস্থিতির সংখ্যা বাড়িয়ে দেখাবে।

তিনি বলেন, "কিন্তু এটা আমাদের উদ্বেগের বিষয় নয়, কারণ বাংলাদেশের ভোটাররা কীভাবে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে, তা দেশের জনগণ এবং সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে।"

মঈন খান আরো বলেন, ক্ষমতাসীন দলের অনেক সমর্থক ভোটকেন্দ্রে যাননি; কারণ তারা জানতেন যে তাদের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল রয়েছে ৪৪টি। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি দল অংশ নিচ্ছে। আর, অন্যতম প্রধান দল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে।