বাংলাদেশ নির্বাচনঃ আচরণবিধি লংঘনের কারণে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ইসির ৭৬২ শোকজ ও ৬৩ মামলা

ফাইল ছবি

৭ জানুয়ারী, রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

১৮ দিন প্রচার প্রচারণার মধ্যে দিয়ে শেষ হচ্ছে এই নির্বাচন।

কিন্তু, নির্বাচনের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বড় ধরনের অভিযোগ আসলেও খুব একটা পাত্তা দেয়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এইসব অভিযোগের একটা বড় অংশ নিস্পত্তি করেছে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কেবল শোকজ কিংবা ইসিতে তলব করে।

পাশাপাশি অর্ধশতাধিকের বেশি প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা এবং কয়েকজনকে জরিমানা করেই নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে।

তবে বড় ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার মধ্যে কেবল একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করলেও পরে তিনি আদালতের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন।

আগামী ৭ জানুয়ারীর বেশিরভাগ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিপরীতে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকলেও আচরণবিধি মানছেনা অনেক প্রার্থী।

এতে করে দলটির বর্তমান মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের সমর্থক স্বতন্ত্র প্রার্থীরা নিয়মিতভাবেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও উল্লেখ করার মতো কোন শাস্তি পেতে হয়নি।

তবে ৫ জানুয়ারী পর্যন্ত নির্বাচন অনুসন্ধান কমিটি ৭৬২ জনকে শোকজ করেছে।

মামলা করা ৬৩ জনের বিরুদ্ধে। যার অধিকাংশ ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সমর্থক। অর্থ জরিমানা করা হয়েছে নৌকার দুই প্রার্থীকে।

এবারই প্রথমবারের মত নির্বাচনী আচরণবিধি মানাতে ৩০০ আসনে জেলা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, সিনিয়র সহকারী জজ ও সহকারী জজদের নিয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন।

এছাড়াও, বিভিন্ন প্রার্থীর পাশাপাশি তাদের অনুসারী নেতাকর্মী-সমর্থক এবং কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগও রয়েছে।

আচরণবিধি ভঙ্গ ও ব্যাবস্থা

ইসি লক্ষ্মীপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবনের প্রার্থীতা বাতিল করছে।

তবে তিনি পরবর্তীতে আদালতের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন।

এছাড়াও, কুমিল্লা-৬ আসনের নৌকার প্রার্থী আ.ক.ম বাহাউদ্দীন বাহারকে ১ লাখ টাকা ও বরগুনা-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

যে ৭৬২ টি শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তিন শতাধিক। এদের মধ্যে শতাধিক বর্তমান সংসদ সদস্য।

পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও রয়েছেন।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের তালিকায় দেখা যায়, ঝিনাইদহ-১ আসনের নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাইকে তিনবার, কুমিল্লা-৬ আসনের আ. কম বাহাউদ্দীন বাহারকে তিনবার, বরগুনা-১ নৌকার প্রার্থী ধীরেন্দ্র নাথ শম্ভুকে চারবার শোকজ করা হয়েছে।

এছাড়া, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী গাজীপুর-২ আসনের সংসদ জাহিদ আহসান রাসেল ও ঢাকা-১৯ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান।

সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ও নরসিংদী-৫ (রায়পুরা আসনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, মাগুরা-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী (ক্রিকেটার) সাকিব আল হাসান, ঝালকাঠি-২ আসন থেকে আমির হোসেন আমু, সহ আরো অনেকে।

এছাড়াও বগুড়া-১ আসনে স্ত্রীর পক্ষে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা অংশ নেওয়ায় বরিশাল মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হামিদুল আলমকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে মামলা তালিকায় রয়েছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজশাহী-৪ আসনের আবুল কালাম আজাদ ও নোয়াখালী-২ আসনে মোরশেদ আলম, একই আসনের স্বতন্ত্র আতাউর রহমান; জয়পুরহাট-২ আসনে স্বতন্ত্র গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, ঠাঁকুরগাঁও-২ আসনের স্বতন্ত্র মো. আলী আসলাম, নেত্রকোণা-১ আসনের স্বতন্ত্র জান্নাতুল ফেরদৌস আরা, মাগুরা-২ আসনে জাতীয় পার্টির মো. মুরাদ আলী ও মেহেরপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে এদিন মামলা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে ইসি।

এর আগে ঝিনাইদহ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হাই ও চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকার প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশন কী বলছে

এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ শনিবার (৬ জানুয়ারি) ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে আমাদের ৩০০টি নির্বাচনী এলাকায় ৩০০ জন ইলেকট্রলার ইনকোয়ারি কমিটি যে জুডিশিয়াল ম্যাজিজেষ্ট্র রয়েছে তারা ইতিমধ্যে ৭৬২ জনকে শোকজ করেছে। এর আলোকে যাদেরকে দ্বিতীয়বার শোকজ করেছে তাদের অনেককে জরিমানা করা হয়েছে। আবার কাউকে সর্তক করে নির্বাচন কমিশনে তলব করে জরিমানা করা হয়েছে। এদের মধ্যে লক্ষীপুর-১ আসনের এক প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়াও রংপুর ও কুমিল্লায় দুইজন প্রার্থীকে জরিমানা করা হয়েছে।"

কেউ যদি একই অপরাধ দ্বিতীবার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে, অশোক কুমার দেবনাথ ভয়েস অফ আমেরিকা কে বলেন, একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে তাদের জরিমানা করার বিধান রয়েছে। এছাড়াও কমিশন ওই প্রার্থীকে কমিশনে তলব করে প্রার্থীতাও বাতিল করতে পারে। এছাড়াও সারাদেশে ৬৩ জন প্রার্থীর বিরুেদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

মামলা কিভাবে দায়ের করা হয় এবং এই মামলার ভবিষ্যৎ কি জানতে চাইলে ইসির অতিরিক্ত সচিব বলেন, "এই মামলাগুলো থানায় করা হয়েছে। এসব মামলা চলবে এবং মামলাগুলোতে জেল জরিমানার বিধান রয়েছে। তদন্ত হবে, চার্জশিট আসবে, তারপর ব্যবস্থা। ফলে মামলার কার্যক্রম একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার । এসব মামলাগুলো আমাদের ৩০০ ইলেক্টরাল ইনকোয়ারি কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে থানায় এসব মামলা করা হয়েছে।"