আগামী ৭ জানুয়ারী বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি'র নেতৃত্বে ৩৬ টি রাজনৈতিক দল ও ইসলামী আন্দোলন সহ বেশ কিছু ইসলামপন্থী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে।
সেইসাথে হরতাল, অবরোধ, অসহযোগ আন্দোলন সহ, ৭ তারিখের নির্বাচন বর্জনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ ইত্যাদি নানা রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সহ নিবন্ধিত ৪৪ টি দলের মধ্যে ২৭ টিই এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
পাশাপাশি, বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন দমনে সরকার কঠোর ভূমিকাও নিয়েছে। সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীও একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল এর সাথে সাক্ষাৎকারে গত ১৭ ডিসেম্বর বলেছেন, হরতাল, অবরোধ মোকাবেলা করে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে সরকারের কাছে বিরোধীদলের নেতা কর্মীদের ব্যাপক হারে গ্রেফতার করা ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।
এর মাঝেই আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনায় ট্রেনে আগুন লেগে চারজন নিহত হয়েছেন। এ জন্য সরকার ও আন্দোলনরত দলগুলি পরস্পরকে দোষারোপ করে যাচ্ছে।
এদিকে, নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার ঘটনাও বেড়েই চলেছে।
অতীতের নির্বাচনগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা যায় নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর সম্মিলিত ভোট চল্লিশ শতাংশের কিছু বেশি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সমর্থনপুষ্ট দলগুলির অংশগ্রহণ ছাড়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি দলের একটি বিএনপি'র অংশগ্রহণ ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহনমূলক হতে যাচ্ছে তা নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্ন উঠেছে।
পাশাপাশি বিএনপি ও নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে তা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেয়ে অপেক্ষাকৃত সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতো কিনা এই প্রশ্নটিও জোরালোভাবে নানামহলে আলোচিত হচ্ছে।
আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র , ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতের ভূমিকা নিয়েও চলছে নানামুখী আলোচনা।
এসব বিষয় নিয়ে কী ভাবছেন দেশের আন্দোলনপন্থী ও নির্বাচনপন্থী রাজনৈতিক নেতৃত্ব? এ নিয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা কথা বলেছে দেশের প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাথে।
এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন হাসিবুল হাসান।
সাক্ষাৎকারঃ সাদ্দাম হোসেন, সভাপতি, ছাত্রলীগ
ভয়েস অফ আমেরিকা: ৭ জানুয়ারির নির্বাচন দেশে ও গণতান্ত্রিক বিশ্বে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আপনি মনে করেন? যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাহলে তার প্রধান তিনটি কারণ কি?
সাদ্দাম হোসেন: বাংলাদেশের মানুষ ইতোমধ্যে এই ভোট উৎসবে সামিল হয়েছে। তারা মনে করে ভোট তাদের নাগরিক অধিকার এবং রাষ্ট্রের উপর মালিকানা প্রতিষ্ঠায় আইনগত উপায়। যারা সন্ত্রাস-সহিংসতা করেছে, বিদেশী প্রভুদের দালালী করে, অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে মানুষ ভোটে সামিল হবে। আমরা মনে করি এই নির্বাচনে দেশের বেশিরভাগ মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলে কি অপেক্ষাকৃত বেশি গ্রহণযোগ্য হতো?
সাদ্দাম হোসেন: আমরা মনে করি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা গণতান্ত্রিক ধারনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ন নয়। বরং আমরা আগে দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বিতর্কিত করা হয়েছে এবং এটা করার ক্ষেত্রে বিএনপি-জামায়াত বিচার ব্যবস্থাকেও দলীয়করণ করার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল। আরেকটি বিষয় হচ্ছে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এক কোটি ত্রিশ লাখ ভূয়া ভোটার তৈরী করা হয়েছিল। তত্ত্ববধায়ক সরকারের প্রধান হিসাবে যখন দলীয় রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব গ্রহন করেছে, তখন কিন্তু এই ব্যবস্থা দেশের জনগণের আস্থা হারিয়েছে।
পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে, যেখানে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের ধারণা রয়েছে, সেখানে কিন্তু এটি বিবেচনাযোগ্য কোনো বিষয়ই নয়। আমাদের যেটি দরকার সেটি হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও বেশি প্রতিষ্ঠানিক করা। নির্বাচন কমিশনকে আরও বেশি শক্তিশালী করা। নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের বিষয়টি আরও বেশি সচ্ছ করা। এই তিনটি বিষয়ই শেখ হাসিনার সরকার , জনগণের সরকার হিসাবে করেছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: বিএনপিকে ছাড়া এ নির্বাচন কতটা অংশগ্রহনমূলক ও গ্রহনযোগ্য?
সাদ্দাম হোসেন: একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করবে কী-না এটি তাদের নিজস্ব বিষয়। উপরন্তু যে বিষয়টি দেশে জনগণকে হতাশ করেছে, সেটি হচ্ছে আপনি আন্দোলন বলুন, জনগণের সমর্থন আদায় বলুন, প্রতিটি বিষয়ে কিন্তু জনগণই মৌল বিষয়বস্তু। কিন্তু আমরা দেখি বিএনপি-জামায়াত কিন্তু জনগণকে ভরসায় নেয়নি। বিদেশীদের দালালী করাতেই তারা ভরসায় নিয়েছে। জনসম্পৃক্ত আন্দোলন কিন্তু তারা গড়ে তোলার চেষ্টা করেনি বা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
ভয়েস অফ আমেরিকা: বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূমিকা আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
সাদ্দাম হোসেন: শেখ হাসিনার সরকার বৈশ্বিকভাবে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। আমরা মনে করি যে আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে, সেখানে মানুষ ভোট উৎসবে সামিল হচ্ছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের জনগণ যে রায় দেবে, জনগনের রায়কে সম্মান করা আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারের লক্ষণ বলেই আমি মনে করি। বাংলাদেশের জনগণ যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে, সেটাকে আমাদের সকল আন্তর্জাতিক ফোরাম সাদরে গ্রহন করবে বলেই আমি মনে করি।
ভয়েস অফ আমেরিকা: ৭ তারিখের নির্বাচন নিয়ে ভারতের ভূমিকাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
সাদ্দাম হোসেন: ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছে। আমাদের অনেক বড় ডেভোলপমেন্ট পার্টনার । আমাদের দেশে যেন স্থিতিশীলতা থাকে, অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ যেন স্থিতিশীল থাকে এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়া যেন শান্তিপূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ায় পরিনত হয়, বাংলাদেশের জনগণ তার সিদ্ধান্ত গ্রহন করবে, এব্যাপারে ভূমিকার রাখার চেষ্টা করছে। এটিকে আমি ইতিবাচক হিসেবে দেখি।
ভয়েস অফ আমেরিকা: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ কতদিন টিকে থাকবে? তিনমাস, ছ'মাস এক বছর পূর্ণমেয়াদ?
সাদ্দাম হোসেন: আমরা মনে করি পূর্ণ মেয়াদ থাকবে। কারণ, এক- এটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ কিন্তু পাঁচ বছরের জন্য তাদের সরকার বেছে নিচ্ছে। জনগণের চাওয়া বাস্তবায়ন করাই সরকারের দায়িত্ব। সেটিই হতে যাচ্ছে। আর যেহেতু ভোট উৎসবের মাধ্যমে জনগণের নিরঙ্কুস সমর্থন নিয়ে নতুন একটি সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমরা মনে করি এ সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী ও টেকসই হবে। আমরা চাই, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও তারুণ্যের জন্য শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিকতা থাকুক।
ভয়েস অফ আমেরিকা: আপনি এবার ভোট দিতে যাবেন?
সাদ্দাম হোসেন: হ্যাঁ, অবশ্যই।