করোনার নতুন প্রজাতি নিয়ে ভারতে নতুন করে উদ্বেগ বেড়েছে। পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাসহ বিভিন্ন জেলায় করোনার নতুন ভ্যারিয়ান্ট জেএন.১ উপপ্রজাতির খোঁজ মিলেছে। গত কয়েক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হলেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে জেএন.১। এক্ষেত্রে শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা নেওয়া জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু) জানাচ্ছে, পিরোলা অথবা BA.2.86-এর মিউটেশনের পরিবর্তিত রূপ হল জেএন.১ (JN.1)। কোভিড ভ্যাকসিন এই প্রজাতির সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষ সতর্কতা মেনে চলা জরুরি।
রাস্তায় বেরোলে মাস্ক পরা, হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ ঢেকে রাখা জরুরি। অসুস্থ হলে বা উপসর্গ দেখা দিলে আইসোলেশনে থাকতে হবে। টানা জ্বর, শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তার দেখিয়ে নিতে হবে।
সংক্রমণ রুখতে শিশুদের জন্য গাইডলাইন
৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য ফেস-মাস্ক বাধ্যতামূলক। পাঁচ বছরের নীচে শিশুদের মাস্ক পরাতে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। বাবা-মায়েদের এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।
ওবেসিটি, টাইপ-১ ডায়াবেটিস, ক্রনিক কার্ডিওপালমোনারি রোগ থাকলে নিয়মিত চেক আপ করাতে হবে। শিশুদের আগে থেকে কোনও জটিল রোগের ইতিহাস থাকলে বা কোমর্বিডিটি থাকলে বেশি সতর্ক হতে হবে।
শিশুরা এখন যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকলেই ভাল। গণপরিবহন (পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট) এই সময়ে এড়িয়ে চলাই উচিত। সার্জিক্যাল মাস্কের বদলে বাচ্চাদের নন-মেডিক্যাল তিন স্তরের ফ্যাব্রিক মাস্ক পরালে বেশি ভাল হয়।
শিশুর কোভিড সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা কিছু লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে। যেমন--হাল্কা জ্বর, সর্দি-কাশি, তারা খাবার খেতে চাইবে না, দুর্বল হয়ে পড়বে, ঝিমুনি আসবে সবসময়। এধরনের লক্ষণ দেখা দিলে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করে নিতে হবে। যদি অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫% এর নীচে নেমে যায় তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
উপসর্গহীন বা মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ বা প্রোফ্যাইল্যাক্টিক ওষুধ দেওয়া যাবে না। ভাইরাল লোড খুব বেশি হলে তবেই চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ দেওয়া যেতে পারে, তবে নির্দিষ্ট ডোজে। মৃদু সংক্রমণের ক্ষেত্রে শিশুদের জ্বর হলে প্যারাসিটামলের ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
শিশুদের কোভিড সংক্রমণ হলেও তা হাল্কা বা মৃদুই হচ্ছে। সেক্ষেত্রে বাড়িতেই আইসোলেশন-এ থাকা ভাল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি নজর দিতে হবে বাবা-মা বা অভিভাবকদের।
উষ্ণ গরম জলে শিশুদের গার্গল করাতে হবে, দু'বছরের বেশি বয়সি শিশুদের সকাল ও রাতে ব্রাশ করা জরুরি। পাঁচ বছরের ওপরে বাচ্চাদের প্রাণায়াম ও হাল্কা যোগব্যায়াম করালে ভাল। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতি স্বাভাবিক থাকবে।
হাত ধোওয়া, পারস্পরিক দূরত্ব মেনে চলার দিকে নজর রাখতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে শিশুদের।
বাড়ির বড়দের থেকে বাচ্চাদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাই বড়দেরও সাবধানে থাকতে হবে। কোনও রকম উপসর্গ বুঝলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আইসোলেশনে যেতে হবে।