উদ্ধারকাজে তৎপর নৌসেনা
ভারতের একটি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। নাবিকসহ ১৫ জন ভারতীয় বন্দি তাদের হাতে। জলদস্যুদের থেকে তাদের উদ্ধার করতে ইতিমধ্যে উপকূলে পৌঁছেছে ভারতীয় নৌসেনার প্রশিক্ষিত কম্যান্ডোরা।
উপকূলে পৌঁছে গেছে ভারতীয় নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ আইএনএস চেন্নাই। আকাশপথে নজরদারি চালাচ্ছে নৌসেনার বিমানও।
বৃহস্পতিবার ৫ জানুয়ারি ভারতীয় সময় বিকেলের দিকে জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি লীলা নরফোক নামে ভারতীয় এই বাণিজ্যিক জাহাজটি। লাইবেরিয়া থেকে জাহাজটি যাত্রা শুরু করেছিল। তারপরে সোমালিয়ার উপকূলে পৌঁছতেই জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাণিজ্যতরীটি।
জাহাজটিতে ছিলেন নাবিকসহ ১৫ জন। তাদের সকলকেই বন্দি করে রাখা হয়েছে। জলদস্যুদের থেকে উদ্ধার করতে সোমালিয়া উপকূলে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে ভারতীয় নৌসেনা। আকাশপথেও নজরদারি চলছে। সতর্ক করা হয়েছে জলদস্যুদের।
সেনা সূত্রের খবর, জাহাজে থাকা ভারতীয় কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা গেছে। তারা সকলে সুস্থ আছেন বলে জানা গেছে।
দু'মাসেরও বেশি সময় ধরে লোহিত সাগরে হামলা চালচ্ছে ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠী। সেখানে হামলা হয়েছিল ভারতীয় বাণিজ্যতরীতেও। এবার ফের জলপথে আক্রান্ত হল ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ।
সোমালিয়ার জলদস্যুরা মূলত জাহাজ ছিনতাই করে মুক্তিপণ আদায় করে। আন্তর্জাতিক সমুদ্র বাণিজ্যের কারবারিরাই তাদের টার্গেট হয়। মাঝে কিছু বছর উপদ্রব কিছুটা কমলেও গত কয়েক মাসে ফের তৎপর হয়ে উঠেছে এই জলদস্যুরা।
কম্যান্ডো বাহিনী 'মার্কোস' নিযুক্ত উদ্ধারকাজে
নৌসেনা সূত্র জানিয়েছে, প্রশিক্ষিত কম্যান্ডো বাহিনী মার্কোসকে পাঠানো হয়েছে উদ্ধারকাজে। তারা নিরাপদে অপহৃতদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।
দেশের সবচেয়ে এলিট কম্যান্ডো বাহিনী এই মার্কোস। যুদ্ধজাহাজ আইএনএস চেন্নাইতে করে মার্কোস বাহিনী পৌঁছে গেছে উপকূলে। জলদস্যুদের সঙ্গে লড়াই করে ভারতীয় নাবিকদের বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনবে তারা।
ভারতের মেরিন কম্যান্ডো ফোর্স ১৯৮৭ সাল থেকে সক্রিয়। জল এবং স্থলে যে কোনও অবস্থায় মার্কোস অপারেশন চালাতে সক্ষম। বস্তুত, ভারতীয় বাহিনীদের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী এই মার্কোস। ভারতীয় নৌসেনার বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনী ‘মার্কোস’ (মেরিন কম্যান্ডোস)। সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে উদ্ধারকাজ সামলাতে পাঠানো হয় তাদের।
যুদ্ধজাহাজ, অফশোর ইন্সস্টলেশন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সমরাঙ্গনে অতি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই কমান্ডো বাহিনীকে কাজে লাগানো হয়। শত্রুপক্ষের উপর অতর্কিত হামলা চালানোয় বিশেষভাবে দক্ষ এই বাহিনী। সামুদ্রিক বাতাবরণে যুদ্ধ করতেও পারদর্শী মার্কোস।
মার্কোস বাহিনী ব্যবহার করে পিস্তল অটো ৯ এমএম এবং সেমি অটোমেটিক পিস্তল, বেরেট্টা ৯২ এফসি পিস্তল, এসএএফ কার্বাইন ২ এ-ওয়ান বন্দুক, একে ১০৩ অ্যাসল্ট রাইফেল-এর মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র।
মুম্বইয়ের আইএনএস অভিমুন্যতে এই কম্যান্ডো বাহিনীর প্রথম ট্রেনিং শুরু হয়। এরপর আগ্রায় প্যারাট্রুপারের ট্রেনিং দেওয়া হয়। এরপর সবচেয়ে শেষে কোচির ডাইভিং স্কুলে তাদের ট্রেনিং চলে। হাইজ্যাকিং, জঙ্গি হানা, যুদ্ধের মতো আরও বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার ট্রেনিং দেওয়া হয় তাদের। এছাড়াও প্যারা জাম্পিং এর পাশাপাশি ‘ফ্রিং ফল’-এর ট্রেনিংও চলে।
বিশ্বের মুষ্টিমেয় কয়েকটি সেনাবাহিনীর মধ্যে এই মার্কোস বাহিনী সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র পিঠে নিয়ে প্যারা ড্রপিং এর মাধ্যমে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে সক্ষম। ১৯৮৮ সালে অপ ক্যাকটাস নামের একটি বিশেষ অপারেশনে এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল। ২০০৮ সালের মুম্বই হামলাতে মার্কোস বাহিনী জঙ্গি নিধন অভিযান চালায়।