শান্তিতে নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, তিনি যে অপরাধ করেননি তার জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকার একটি শ্রম আদালতের দেয়া দণ্ডাদেশের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ড. ইউনূস সাংবাদিকদের বলেন, “আমি এমন একটি অপরাধের জন্য শাস্তি পেয়েছি, যা আমি করিনি। আপনি যদি এটিকে ন্যায়বিচার বলতে চান, বলতে পারেন।”
এই মামলায়, ড. ইউনূসের পাশাপাশি গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান এবং দুই পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
চুরাশি পৃষ্ঠার রায়ে বিচারক বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
শ্রম আইন লঙ্ঘন
এ মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, আদালতে শ্রম আইন ভায়োলেশনের (লঙ্ঘনের) বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।
''যেহেতু শ্রম আইন ভায়োলেশন (লঙ্ঘন) প্রমাণ হয়েছে, সেজন্য ওনাকে আদালত সাজা দিয়েছেন,'' তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সময় দেওয়া হয়েছে। ''তিনি জামিন চেয়েছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ওনাকে জামিন দিয়েছেন। এক মাসের জামিন দিয়েছে আপিল করার শর্তে,'' তিনি বলেন।
'হয়রানি করার জন্যই সাজা'
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ড. ইউনূস বলেন, “আজ রায় ঘোষণা শুনতে আমার অনেক বিদেশি বন্ধু-বান্ধব এসেছেন; যাদের সঙ্গে বহুদিন দেখা হয়নি। আজ তাদের দেখে খুব আনন্দ লাগছিলো।”
বন্ধুদের একজন ছিলেন মানবাধিকারকর্মী এবং অ্যামনেসটি ইন্টারন্যাশনালের প্রাক্তন মহাসচিব আইরিন খান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ড. ইউনূসের সাজার রায়ে তিনি বিস্মিত।
''তাঁকে (ড. ইউনূস) হয়রানি করার জন্যই এই সাজা দেয়া হয়েছে,'' খান বলেন।
বিচারক দুপুর ২টার পর এজলাস গ্রহণ করেন। পরে রায় পড়া শুরু করেন তিনি। বিচারক বলেন,৮৪ পৃষ্ঠার রায়ের মধ্যে সব পড়া সম্ভব নয়।
এরপর তিনি বলেন, “আজ নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিচার হচ্ছে না। এখানে বিচার করা হচ্ছে গ্রামীন টেলিকমের চেয়ারম্যান হিসেবে। আমি শুধু সারাংশ পড়ে শোনাচ্ছি।”
রায় পড়ার সময় ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার মামুন অনেকবার বিচারকের দৃষ্টিআকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, তাদের বক্তব্য রায়ে আনা হয়নি। এতে আদালতের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
বিচারক রায়ে বলেন, আদালতের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘন হয়েছে।
এর আগে, গত ২২ আগস্ট এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে গত ৮ নভেম্বর আত্মপক্ষ সমর্থনে বক্তব্য দেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।
হাছান মাহমুদ
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার রায় প্রসঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, "পৃথিবীতে অনেক নোবেলজয়ী ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকে জেলও খেটেছেন। ড. ইউনূসের প্রতি সম্মান রেখেই বলতে চাচ্ছি, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে না-দেয়ার জন্য। তিনি শ্রমিকের পাওনা বুঝিয়ে দেননি, বহু বছর ধরে।"
একই সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম অধিকার বিষয়ে বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর ভূমিকার সমালোচনাও করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, "আশা করি, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও এ নিয়ে কথা বলবেন। শ্রমিকের অধিকার ও পাওনা বুঝিয়ে না দেয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে মামলা হয়েছে।"
সোমবার (১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হাসিবুল হাসান।