আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পাঁচজন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে চারজন গোপালগঞ্জ-৩ আসনের ভোটার নন। ভোটার নয় এমন চার প্রার্থীর মধ্যে একজন মাদারীপুর সদর উপজেলার ভোটার, বাকি তিনজনের দুইজন গোপালগঞ্জ-২ আসনের এবং অপরজন গোপালগঞ্জ-১ আসনের ভোটার।
৪৪ নিবন্ধিত দলের মধ্যে গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রার্থী ছয়জন
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ নির্বাচনে ছয়জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করছেন। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ হাসিনাসহ পাঁচজন প্রার্থী পাঁচটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
অপরজন নিবন্ধিত দলের জোটের প্রার্থী। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৪৪টি।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে দলের প্রার্থীরা হলেন-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) শেখ আবুল কালাম, জাকের পার্টির মাহবুব মোল্যা বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) এম নিজাম উদ্দিন লস্কর, এবং বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে মো. সাহিদুল ইসলাম (মিঠু)।
অন্যদিকে, ‘জনতার কথা বলে’ দলটির ইসির নিবন্ধন না থাকলেও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা লিমা হাসান গণফ্রন্ট জোটের প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। গণফ্রন্টের নিবন্ধন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত নন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়া পাঁচ প্রার্থীর প্রায় সবাই নির্বাচনী এলাকায় অপরিচিত। তাদেরকে চেনেননা এলাকার আওয়ামী লীগ নেতারাও।
গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দনাথ বিশ্বাস। তিনি ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "এসব প্রার্থীর আগে কখনো আমরা নামও শুনিনি, এলাকাবাসীও এদের কাউকে চেনে না।'
তিনি আরও বলেন, "একজনের বাড়ি মাদারীপুর। আমাদের ভোটারদের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগও নেই। নির্বাচনে নূন্যতম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না।"
প্রার্থীদের এলাকাবাসী না চেনা প্রসঙ্গে এনপিপি‘র প্রার্থী শেখ আবুল কালাম ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "প্রার্থী হিসেবে আমাকে এলাকাবাসী চিনে না এটা ঠিক আছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি ভোটারদেরকে চিনানোর জন্য।"
তিনি আরও বলেন, "ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সারাদেশে কমিটি আছে। তবে গোপালগঞ্জে ওইভাবে আমাদের কোন কমিটি না থাকায় আমাদেরকে চিনে না, এটা ঠিকই আছে। আমি স্বীকার করছি এলাকাবাসী আমাদের একটু কম চিনে।"
প্রধানমন্ত্রীর আসনে ৪৪ নিবন্ধিত দলের মধ্যে ৩৯টি দলের কোনো প্রার্থী নেই
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে ইসির নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) ২৭টি দল চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
অন্যদিকে, রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপিসহ ১৭টি রাজনৈতিক দল ভোট বর্জন করে তত্ত্বাবধায়ক/জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসনে পাঁচটি নিবন্ধিত দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, বাকি ৩৯টি দল এই আসনে কোন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি।
ফলে আসনটিতে বড় কোনো দলের কিংবা শক্তিশালী কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী না থাকায় গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচিত হওয়া নিশ্চিত বলেই ধরে নেওয়া যায়।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী ৫ প্রার্থীর চারজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অপরজন গৃহিণী
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চারজন নিজেকে ছোটখাটো ব্যবসায়ী বলে দাবী করছেন এবং অপর প্রার্থী একজন গৃহিণী। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো 'ভিভিআইপি প্রার্থী'র সঙ্গে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর প্রত্যেকেরই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দনাথ বিশ্বাস ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যারা নির্বাচন করেছেন, তাদের কেউ জামানত নিয়ে ফেরত যেতে পারে নাই। ফলে এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। কাজেই যারা নির্বাচনে আসছে আমরা কাউকে নিরুৎসাহিত করব না। তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাবে, আমরা কোনো বাধা সৃষ্টি করব না। আমাদের দল কিছু বলবে না। তাদের নির্বাচন করার, ভোট চাওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। ভোটাররা নির্ধারণ করবে তারা কাকে ভোট দিবেন, আর কাকে দেবেন না।"
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সবাই বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী পাঁচ প্রার্থীর সবাই বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বিজয়ী হলে তারা এলাকার উন্নয়নে কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
পাশাপাশি প্রায় সবাই বলেছেন নির্বাচন করতে গিয়ে তাদের কোন ধরনের ভয়ভীতি ও বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কারা?
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বরাবরের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চারবারের প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন, জাকের পার্টির গোপালঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব মোল্যা, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য এম নিজাম উদ্দিন লস্কর, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) শেখ আবুল কালাম, গণফ্রন্টের সৈয়দা লিমা হাসান ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সাহিদুল ইসলাম মিঠু।
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) প্রার্থী
বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সদস্য এম নিজাম উদ্দিন লস্কর। এম নিজাম উদ্দিন লস্কর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আমার কাছে ভালো লাগছে। আমার দলীয় প্রতীক একতারা। আমি জনগণের সঙ্গে যখন কথা বলছি সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমি বিজয়ের বিষয়ে আশাবাদী এবং সাংবিধানিক ধারা রক্ষার্থে আমি শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব। জয়ী হলে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করবো।
নিজের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী (সিজনাল ব্যবসায়ী)। এক সময় আমি টেইলাররিং ব্যবসা করতাম। এখন বয়স হয়ে গেছে এখন আর টেইলার্স ব্যবসা করি না। যখন যেটা পারি বিভিন্ন সময় মালামাল কিনে কিছুদিন রেখে দিয়ে পরে আবার বিক্রি করি।"
জাকের পার্টির প্রার্থী
জাকের পার্টির গোপালঞ্জ জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক
। তিনি নিজেকে একজন বাইসাইকেলের পার্টস ব্যবসায়ী বলে দাবি করার পাশাপাশি নিজ বাড়িতে গরুর খামার রয়েছে বলেও জানান।
মাহবুব মোল্যা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "প্রার্থী হওয়ার কারণে আমি কোন ধরনের ভয়ভীতির সম্মুখিন হচ্ছি না। আমার দলীয় প্রতীক গোলাপ ফুল। আমি আমার পার্টির কমান্ডে চলছি। পার্টি যখন যে সময় যা বলবে হুকুম দিবে আমি সেটা মেনে চলবো। কে আমাকে মারবে, কে বাঁচাবে সেটা আমি ভাবি না। পার্টি থাকতে বললে নির্বাচনে থাকব। পার্টি না করলে প্রত্যাহার করে নেব।"
জাকের পার্টির প্রার্থী মাহবুব মোল্যা ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, তিনি গোপালগঞ্জ-১ আসনের মকসুদপুর উপজেলার প্রচারঘাটি ইউনিয়নের বাহিরবাগ গ্রামের বাসিন্দা এবং ভোটার। তবে তিনি প্রার্থী হয়েছি গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে।
গণফ্রন্টের প্রার্থী
গণফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দা লিমা হাসান ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "আমি মাছ মার্কা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। আমি পাস করলে এলাকার জনগণের পাশে থেকে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা মসজিদ করব। যাতে জনগণের সুবিধা হয়।"
তিনি আরও বলেন, "আমি ৬/৭ বছর ধরে রাজনীতি করি। আগে জনতার কথা বলে এই দলের সঙ্গে ছিলাম। দলটির চেয়ারম্যান আমার স্বামী নাঈম হাসান।"
নিজের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি কিছু করি না, আমি একজন গৃহিণী।"
সৈয়দা লিমা হাসানমাদারীপুর জেলার ভোটার। তার পিতার নাম সৈয়দ ছালাম মাতব্বর, গ্রাম, পূর্ব শ্রীনাথদী, উপজেলা ও জেলা মাদারীপুর সদর।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী
এনপিপি‘র প্রার্থী শেখ আবুল কালাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "আমার দল আমাকে আম প্রতীকে নমিনেশন দিয়েছে। মূলত গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য আমার দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন করার।"
তিনি আরও বলেন, "নির্বাচনই হচ্ছে একমাত্র সরকার পরিবর্তনের পথ। সরকার পরিবর্তনের অন্য কোনো পথ নেই। শুধু নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়। আমার দল সেটাই বিশ্বাস করে। সেই আলোকে আমরা বিগত দিনে প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছি।"
নিজের পেশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি মূলত রাজনীতি করি। পাশাপাশি আমার ভাইয়ের ঠিকাদারি ব্যবসা আছে। আমি ভাইয়ের সঙ্গে থেকে ব্যবসা দেখি। আমাদের একটা ১৮ দলীয় জোট রয়েছে। সেই জোটের নাম গণতন্ত্র বিকাশ মঞ্চ। সেই জোটের মূল দল হলো ন্যাশনাল পিপলস পার্টি। যেটি নিবন্ধিত দল।
শেখ আবুল কালাম গোপালগঞ্জের জোয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। তবে তিনি গোপালগঞ্জ পৌরসভার ভোটার। ঐ এলাকা গোপালগঞ্জ-২ আসনে পড়েছে।
বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী
বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সাহিদুল ইসলাম। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, "গোপালগঞ্জ-২ আসনের ভোটার হলেও আমি গোপালগঞ্জ-৩ আসনে নির্বাচনে ডাব প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছি।"
নির্বাচনে কোনো ধরনের বাধা বিপত্তি আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমি গোপালগঞ্জের ছেলে আমাকে কে ভয় দেখাবে? নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী না হলেও তিনি সম্মানজনক ভোট পাবেন বলেও জানিয়েছেন।"
বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. সাহিদুল ইসলাম মিঠু নিজেকে রড সিমেন্ট ব্যবসায়ী বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান। তিনি বলেন, "গোপালগঞ্জ সদরে সুলতানশাহী কালাবাজারে আমার রড সিমেন্টর দোকান আছে।"
আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে ২৭ টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ ১৭টি দল নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।