ডিপফেক: ভারত সরকারের ভাইরাল ভিডিও রুখতে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি

ডিপফেক প্রযুক্তি প্রতীকী ছবি।

ডিপফেক প্রযুক্তি নিয়ে এ বার কড়া অবস্থান নিতে চলেছে ভারতের কেন্দ্র সরকার। গুগল, ফেসবুক-এর পরিচালক সংস্থা মেটা-সহ অন্যান্য তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। সেই বৈঠকের শেষেই জানা যায়, ডিপফেক প্রযুক্তির মোকাবিলায় উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে কেন্দ্র।

মঙ্গলবার ২৬ ডিসেম্বর ডিপফেক-এ ভুয়ো ছবি-ভিডিও ছড়ানো বন্ধ করতে সোশ্যাল মিডিয়াগুলির উদ্দেশে নির্দেশিকা জারি করে কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক।

তাতে বলা হয়েছে, কোনও মানুষের অধিকার কিংবা তার শরীর সংক্রান্ত বিষয়ে হস্তক্ষেপ, অশ্লীল অথবা পর্নোগ্রাফিক বিষয় সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো বা পোস্ট করা বন্ধ করতে হবে।

ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৩(১)(বি) ধারায় বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে কারও ছবি বা ভিডিও বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করলে তার শাস্তি হবে। উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বর্তমানে ভারতে যে তথ্যপ্রযুক্তি আইন রয়েছে, তা মেনেই সোশ্যাল মিডিয়াগুলিকে ডিপফেক ভিডিয়োর সমস্যা সমাধানের নির্দেশ কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি তথ্য প্রযুক্তি আইন অনুযায়ী কোন কোন কনটেন্ট নিষিদ্ধ, তা জানাতে বাধ্য।

অন্যের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করে, এমন কনটেন্ট আপলোড বা শেয়ার করা নিষিদ্ধ। এমন কনটেন্ট শেয়ার করা যাবে না যা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আসল তথ্য থেকে বিভ্রান্ত করে।

কেন্দ্রের নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, যখন কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কেউ রেজিস্টার করবে, তখনই নিষিদ্ধ কনটেন্ট ও শর্তাবলী সম্পর্কে তাকে জানাতে হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবহারকারীরা লগ ইন করে কোনও কনটেন্ট আপলোড বা শেয়ার করার সময় রিমাইন্ডার পাঠানো হবে। সেখানে কোন কনটেন্ট আপলোড করা যাবে আর কোনটা যাবে না সেই বিষয়ে ব্যবহারকারীদের সচেতন করা হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতাতেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে এই ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে কেন্দ্র সরকারের তরফে।

ভারতে প্রথম অভিনেত্রী রশ্মিকা মান্দানার ডিপফেক ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপর প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, ক্যাটরিনা কাইফ, আলিয়া ভাট সহ আরও অনেক বলিউড অভিনেত্রীর ডিপফেক ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী, বিশেষত মহিলাদের অনলাইন নিরাপত্তায় ডিপফেক প্রযুক্তির অপপ্রয়োগনিয়ে তখন থেকেই সর্বস্তরে উদ্বেগ বাড়তে থাকে।

ডিপফেক প্রযুক্তিতে কৃত্রিম মেধার সাহায্যে বদলে দেওয়া যায় কারওর শরীর, কারওর মুখ। এক জনের শরীরে অন্যের মুখ বসিয়ে তৈরি করা যায় ভুয়ো ভিডিও, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

ডিপফেক নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি বলেছেন, "এখন কৃত্রিম মেধার মতো উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে। আমাদের উচিত দায়িত্ববোধের সঙ্গে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা। কেউ যেন এই ধরনের প্রযুক্তি অপব্যবহার না করেন, তার জন্য এ ব্যাপারে উপযুক্ত শিক্ষার প্রসার ঘটানো জরুরি।"

বর্তমানে কেন্দ্র সরকারের জারি করা নির্দেশিকায় ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার রুখতে প্রাথমিক পদক্ষেপ নেওয়া হল।