ভারতঃ বিজেপি-বিরোধী জোট জাতীয় নির্বাচনের আগে সমঝোতার পথ খুঁজছে

জোট বাঁধার জট কি খুলবে?: তৃনমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁয়ে) এবং কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধি।

ভারতে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের মাসচারেক আগে এখনো বিরোধী জোটের – যার আনুষ্ঠানিক নাম 'ইন্ডিয়া' – কোনো নির্দিষ্ট চেহারা বা কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। ডিসেম্বর মাসের ১৯ তারিখে ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে বলে ধারনা করা হয়েছিল। তেমন কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

শুধু তাই নয়, বিরোধী জোটের বিভিন্ন নেতারা যে ভাষায় কথা বলেছেন তা থেকে স্পষ্ট যে তাদের গঠনমূলকভাবে কাছাকাছি আসার কোনো সম্ভাবনা আপাতত নেই। যদিও তার অর্থ এই নয় যে ভারতে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) খুব নিশ্চিন্তে আছে কারণ দশ বছরের (২০১৪-২৪) একটা স্বাভাবিক ‘অ্যান্টি-ইনকাম্বেন্সি’ বা প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে।

কিন্তু সেই হাওয়া কাজে লাগাতে মাঠ পর্যায়ে যে একতা প্রয়োজন, বছরের শেষে তা দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিষ্কার হবে।

পাঁচ বছর আগে অনুষ্ঠিত ২০১৯ সালের লোকসভার ফলাফলের নিরিখে বিজেপি বিরোধী দলগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে ছিল কংগ্রেস। তারা পেয়েছিল ৬০ আসন। দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাডুর ডিএমকে, তারা পেয়েছিল ২৪ আসন এবং তৃতীয় স্থানে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল ২২ আসন। ফলে কংগ্রেস ও ডিএমকে’র পরেই যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শক্ত অবস্থান

তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কংগ্রেসের যা সম্পর্ক তাতে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে রয়েছে ৪২টি লোকসভা আসন, সেখানে তাদের মধ্যে আসন সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে অত্যন্ত ক্ষীন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীঃ বিরোধীরা আসন সমঝোতা না করতে পারলে তাঁর বিজেপির সুবিধা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূল কংগ্রেসের এক বর্ষীয়ান এমপির কথায়, “কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে ৮ থেকে ১০টি আসন আশা করছে। কংগ্রেস গত লোকসভা নির্বাচনে ৫.৬ এবং বিধানসভা নির্বাচনে ২.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। এই অবস্থায় তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে তাদের একটি কি দু’টির বেশি আসন ছাড়া সম্ভব নয়। তবে আলোচনার পথ সব সময়ই খোলা রয়েছে।”

তৃণমূল কংগ্রেসের ওই এমপির কথা থেকে স্পষ্ট যে অন্তত পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম।

পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য সমঝোতা ব্যর্থ হলে, তার বিরাট সুবিধা বিজেপি পাবে না কারন ২০১৯-এর লোকসভা এবং ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন বলছে পশ্চিমবঙ্গে সংঘাতটা সরাসরি হচ্ছে দু’টি দলের মধ্যে – তৃণমূল এবং বিজেপি। কংগ্রেস বা বামফ্রন্টের বিরাট ভোট কাটার সম্ভাবনা নেই।

কিন্তু যেখানে আছে, সেখানে বিরোধী জোটের মধ্যে লড়াইয়ে বিজেপির উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা প্রভূত। যেমন দিল্লী।

দিল্লিতে আম আদমি

এখানে ইন্ডিয়া জোটের দুই দল আম আদমি পার্টি (আপ) এবং কংগ্রেস দু’জনেই শক্তিশালী। গত লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে কংগ্রেস পেয়েছিল সাড়ে ২২ শতাংশ ভোট, আবার গত দু’টি মেয়াদে (২০১৫, ২০২০) রাজ্য বিধানসভায় জিতে দিল্লিতে ক্ষমতায় এসেছে আপ।

এই দুই দলের মধ্যে ভোট কাটাকাটি হলে বিজেপির বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। এই ধরনের ভোট কাটাকাটির ফলে ২০১৯ সালের নির্বাচনে বিজেপির ভোট চলে গিয়েছিল ৫০ শতাংশের উপরে এবং তারা দিল্লিতে জিতেছিল সাতটির মধ্যে সাতটি আসনেই।

ফলে আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে দিল্লির সাতটি আসন নিয়ে সমঝোতার প্রয়োজন। সেটা হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনাও কম, কারণ পাঞ্জাব রাজ্যে ক্ষমতাসীন আপের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে যে সেই রাজ্যে কংগ্রেস এবং আপের মধ্যে কোনো আসন সমঝোতা তারা সমর্থন করছে না। ফলে দিল্লিতেও সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা কম।

আম আদমি পার্টি নেতা আরভিন্দ কেজরিওয়াল (ডানে), সাথে পাঞ্জাবে দলের নেতা ভাগওয়ান্ত মান, বিধানসভা নির্বাচনে দলের বিজয়ের পর।

এই ধরনের আসন সমঝোতা যদি ইন্ডিয়া জোটের শরিকদের মধ্যে বড় রাজ্যগুলিতে না হয় তবে প্রশ্নাতীত ভাবে তার সুবিধা পাবে বিজেপি।

ভারতে ২৮ রাজ্য এবং দিল্লির মধ্যে অন্তত ১০টি এমন বড় রাজ্য রয়েছে (মোট ৫৪৩টি লোকসভা আসনের মধ্যে তিনশো’রও বেশি আসন) যেখানে ইন্ডিয়ার শরিকদের মধ্যে আসন সমঝোতা না হলে লাভ একক ভাবে বিজেপি্র।

বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আদর্শ

ভারতের পত্রপত্রিকা তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন সূত্র উদ্ধৃত করে বলছে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতার বিষয়টি তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত করে ফেলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যদি ধরেও নেওয়া যায় যে এর পরে বাকি দলগুলির মধ্যে জানুয়ারি মাসের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হবে, তাহলেও সেই সমঝোতা নিয়ে নানান প্রশ্ন ওঠে।

“যেমন একটা সম্ভাব্য প্রশ্ন হল, শেষ মুহূর্তে জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা এই সমঝোতা কি একটা সুবিধাবাদী (ওপারচুনিস্টিক) সমঝোতা নয়?” প্রশ্ন দিল্লির রাজনৈতিক বিশ্লেষক শান্তনু চক্রবর্তীর।

“বিজেপির মত একটা দল একদিকে অর্থনৈতিক এবং সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী। অন্যদিকে দলটি একটা আদর্শের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এবং ভারতের একটা অংশের মানুষের পছন্দ হোক বা না হোক সেই হিন্দুত্ববাদী আদর্শ গত এক দশক ধরে বিজেপিকে সাহায্যই করেছে,” মন্তব্য চক্রবর্তীর।

হিন্দুত্ববাদী আদর্শঃ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এলাহাবাদে কুম্ভ মেলা উদ্বোধনের রীতি পালন করছেন। ফাইল ফটো, ২৭ জুলাই, ২০১৮।

এই রকম একটা আদর্শের বিপরীতে একটা সুবিধাবাদী আদর্শ নিয়ে নির্বাচন লড়তে গেলে কি ফল হয়, সেটা অতীতের নির্বাচন থেকেই প্রমাণিত বলে মনে করেন চক্রবর্তী।

“তা সত্ত্বেও ভারতের ২৮ দলের বিরোধী জোট এখনো পর্যন্ত কোনো নির্দিষ্ট ন্যারেটিভের ভিত্তিতে একটা দিকনির্দেশনা দেয়নি, একটা ন্যূনতম অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি এবং পারবে কিনা তাও বোঝা যাচ্ছে না। তাদের শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো পরস্পরের বিরুদ্ধে ছোট ছোট ইস্যুতে বিষোদগার করছেন (জনতা দল ইউনাইটেডের নেতা নীতিশ কুমার ডিএমকে দলের তামিল নেতা টি আর বালুকে বৈঠকে বলেছেন ভারতীয়দের হিন্দি ভাষা শেখা জরুরি, যেহেতু তামিলভাষী বালু নিতীশ কুমারের হিন্দি ভাষনের ইংরেজি অনুবাদ চেয়েছিলেন)। এই অবস্থায় ইন্ডিয়া জোট নিয়ে খুব একটা আশা না রাখাই ভালো,” বলেন চক্রবর্তী।

কংগ্রেসের সমস্যা

এইরকম উদাহরণ আরো রয়েছে।

কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব যেমন একটি বাংলা পত্রিকাকে বলেছেন, ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকের দিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন এবং এই বৈঠকে চূড়ান্ত অসন্তুষ্ট কংগ্রেস। পরস্পরের পিছনে ছুরি মারামারির এই বাতাবরণে ইন্ডিয়া জোট শেষ পর্যন্ত কত দূর এগোতে পারবে বলা মুশকিল।

কংগ্রেসেরও সমস্যা অনেক।

সম্প্রতি ভারতের যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হলো, তার মধ্যে অন্তত চারটি রাজ্যে শক্তিশালী শরিকের ভূমিকায় ছিল কংগ্রেস। কিন্তু তারা ছোট দলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় কোনো উৎসাহ দেখায়নি।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের সাথে রাহুল গান্ধী (বাঁয়ে)।

ভারতের একাধিক পত্র-পত্রিকা জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্বে থাকা নেতা কমলনাথ সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধতে রাজি হননি। মধ্যপ্রদেশে কমজোরি হলেও উত্তরপ্রদেশের প্রধান বিরোধী দল সমাজবাদী পার্টি। এই অবস্থায় ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন সমাজবাদী পার্টি কংগ্রেসকে উত্তরপ্রদেশে আসন ছাড়বে সেটা একটা বড় প্রশ্ন। আর তাদের মধ্যে ভোট ভাগাভাগি হলে তাতে লাভ বিজেপির।

দ্বিতীয়ত, কংগ্রেসের শীর্ষ দুই নেতা রাহুল গান্ধী এবং দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে রাজস্থানে কংগ্রেসের সেনাপতি অশোক গেহলোতকে এটা বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কেন ওই রাজ্যে কংগ্রেসের পুরনো প্রার্থীদের মনোনয়ন না দিয়ে নতুন মুখ আনা প্রয়োজন। প্রচার মাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছে কংগ্রেসেরই সুত্র। রাজস্থানে পুরনো কংগ্রেসের প্রার্থীদের প্রায় সবাই হেরে গিয়েছেন।

ইন্ডিয়া জোট নিয়ে 'আশাবাদী'

“কংগ্রেসের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে যে রাহুল গান্ধীর পক্ষে রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের পুরস্কৃত করা বা শাস্তি দেওয়া কোনোটারই ক্ষমতা নেই। যেটা নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপির আছে। ফলে কমলনাথ বা গেহলতের মত আঞ্চলিক স্তরে প্রভাবশালী নেতারা কংগ্রেসের দিল্লির নেতৃত্বকে মানতে নারাজ। তাঁরা লোকসভা নির্বাচনে রাহুলের কথা শুনে নিজ নিজ রাজ্যে অন্য দলকে আসন ছাড়বে এমনটা ভাবতে অসুবিধা হচ্ছে,” মন্তব্য চক্রবর্তীর।

বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং আইনজীবী তিস্তা শেতলবাদ অবশ্য জোটের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে কিছুটা আশাবাদী। তিনি বললেন যে বিজেপির মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে খানিকটা হলেও একটা আশা তৈরি করতে পেরেছিল ইন্ডিয়া জোট।

ভারতে পিছিয়ে পড়া শ্রেণীদের নিয়ে আলোচনা হতে পারে এই জোটের অধীনে।

গত জুলাই মাসে জোট তৈরি হওয়ার পরে আশাহত হওয়ার মতো অনেক কিছু ঘটলেও, অন্তত কিছু বিষয়ে একমত হওয়া গেছে বলে মনে করেন শেতলবাদ।

“একটা দিকনির্দেশনা তো পাওয়া গিয়েছিল। যেমন এই যে বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দল জাতপাত-ভিত্তিক সংরক্ষণের কথা বলছে…সেটা নিয়ে একটা মত বিনিময় হয়েছে, অনেক শরিক একমতও হয়েছেন অন্যান্য পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর নির্দিষ্ট শুমারি হতে হবে। এখন প্রশ্ন হল, শুমারির পরে সংরক্ষণের ধাপগুলি কি হবে। কিভাবে সরকারি চাকরিতে খালি পদ পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে থেকে পূর্ণ করা হবে? প্রশ্নগুলি কঠিন, ঠিকই। কিন্তু জোট গঠন না হলে বিষয়টি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করা যেতো না। এটাকে আমি একটা ইতিবাচক ধাপ হিসাবে দেখছি,” মন্তব্য শেতলবাদের।

সামাজিক অসাম্য

গুজরাট দাঙ্গায় নিহতদের পরিবারের হয়ে দীর্ঘ লড়াই চালিয়েছেন শেতলবাদ। বর্তমানে লড়াই করছেন সামাজিক অসাম্যের বিরুদ্ধে এবং এই সামাজিক অসাম্যকেই একটা ন্যারেটিভের মধ্যে দিয়ে লোকসভা নির্বাচনে সামনে আনা জরুরী, বললেন তিনি।

“শুধু সংরক্ষণ নয়, কর্মহীনতা ভারতে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই জোট যদি সেটা সামনে আনতে পারে…আগামী এক-দেড় মাসে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষক, দলিত, মহিলা এবং পিছিয়ে পড়া শ্রেণীর কাছে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারে এবং তাদের কিছুটা এক করতে পারে, তাহলে একটা বড় লড়াই দিতে পারবে ইন্ডিয়া জোট।

''সব মিলিয়ে ইন্ডিয়া জোট গঠনের ফলে, ক্ষীন হলেও একটা আশার আলো কোথাও দেখা যাচ্ছে,” বললেন তিস্তা শেতলবাদ।

বিজেপির অস্বস্তির অবশ্য আরো একটা কারণ রয়েছে। সেটা হলো প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া।

অনেক রাজ্যে কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলের ভাল সংখ্যক ভোট আছে।

একশো কোটি ভোটারের দেশে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়া থাকবেই, আছেও। ফলে লড়াইকে হালকা ভাবে নেওয়া চলবে না বলে মন্তব্য করলেন করলেন হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অর্থনীতি শাখা স্বদেশী জাগরণ মঞ্চের সর্বভারতীয় যুগ্ম আহবায়ক ধনপতরাম আগরওয়াল।

তিনি বললেন, বিরোধীদের ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই।

“একাধিক রাজ্য যেমন মহারাষ্ট্র, হিমাচল প্রদেশ, তেলেঙ্গানা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, পাঞ্জাব, তামিলনাড়ু, দিল্লি, বিহার-সহ বেশ কিছু রাজ্যে বিরোধীদের ভাল রকম ভোট রয়েছে। অনেক জায়গা তারা ক্ষমতায় রয়েছে। যেখানে ক্ষমতায় নেই সেখানেও তাদের ভালো ভোট রয়েছে।

''সাম্প্রতিক, বিধানসভা নির্বাচনেও দেখা গেল, তিন রাজ্যে হেরে গেলেও প্রধান বিরোধী কংগ্রেস ভালো রকম ভোট পেয়েছে (৪০ শতাংশ বা তার বেশি)। অনেক রাজ্যেই বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও, কংগ্রেসের ভালো রকম ভোট রয়েছে, যেমন আসামে। ফলে আমাদের নির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং সেটা আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি,” বললেন আগরওয়াল।

কোভিড-পরবর্তী অর্থনীতি

তিনি যোগ করলেন আরও একটা কথা। “তবে সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দলে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি এবং তিনি এখনো জনপ্রিয়তায় বিরোধীদের থেকে কয়েকশো মাইল এগিয়ে। যেভাবে তাঁর নেতৃত্বে কোভিড-পরবর্তী পর্যায়ে অর্থনীতির স্বাস্থ্য উদ্ধারে কাজ হয়েছে, তাতে বিজেপির জেতা নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়।”

গত লোকসভা নির্বাচনের বছরখানেক আগে ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে কাশ্মীরের প্রয়াত সাংবাদিক সুজাত বোখারীর শ্রীনগরের বাড়িতে এক নৈশভোজে বর্ষীয়ান সম্পাদক প্রেমশংকর ঝা এই প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে আশা প্রকাশ করেছিলেন যে, বিজেপি-বিরোধী শরিকদের মধ্যে জোট হবেই, তাঁরা ইতিমধ্যেই নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছেন।

“গতবারের (২০১৪) মতো জোট হীন নির্বাচন হবে না,” বলেছিলেন অভিজ্ঞ সম্পাদক।

সেই জোট হয়নি। আগামী বছরের (২০২৪) নির্বাচনে সেই জোট দানা বাঁধবে কিনা, আসন সমঝোতা হবে কিনা, সে প্রশ্ন এখনো ভাবাচ্ছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের, বিজেপি ক্ষমতায় আসার দশ বছর পরেও।