হিজাব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে কর্ণাটকের শিক্ষাঙ্গনে, জানাল কংগ্রেস সরকার

ভারতের কর্নাটকে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার শিক্ষাঙ্গনে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

ভারতের দক্ষিণের রাজ্য কর্ণাটকে কংগ্রেস সরকার জানিয়েছে, শিক্ষাঙ্গনে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা অচিরেই প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এর আগে কর্নাটকে বিজেপি সরকার শিক্ষাঙ্গনে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, যে যার ইচ্ছামতো পোশাক, খাবার বেছে নিতে পারে। এতে সরকারের কিছু বলার নেই।

এর আগে বিজেপি সরকার হিজাব নিষিদ্ধ করে, শিক্ষাঙ্গনের ইউনিফর্ম পরে ক্লাস করার নির্দেশ দিয়েছিল।

তৎকালীন বিজেপি সরকারের হিজাব নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষেরা। আবার তার পাল্টা প্রচারে নামে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলিও।

সে সময়ে সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আইনি লড়াই কর্নাটক হাইকোর্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একমত হতে পারেননি শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি। ফলে হিজাব মামলা পাঠানো হয়েছে উচ্চতর বেঞ্চে।

গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের শুরুতে হিজাব পরে শিক্ষাঙ্গনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে তখনকার বিজেপি শাসিত কর্নাটক সরকার। রাজ্যের উদুপির একটি কলেজের নির্দেশিকা নিয়েই উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি।

দুই সম্প্রদায়ের মুখোমুখি সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় বিভিন্ন এলাকায়। তারপরই তা নিয়ে মামলা গড়ায় কর্নাটক হাইকোর্টে।

কর্ণাটক হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, হিজাব পরা কখনওই ধর্মাচরণের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হতে পারে না। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে পিটিশন দাখিল করেন মুসলিম ছাত্রীরা।

এরইমধ্যে সেই সময়ের কর্নাটক সরকার শিক্ষাঙ্গনে পোশাক সংক্রান্ত বিধি জারি করে। তাতে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের ঠিক করে দেওয়া পোশাক পরেই ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে যেতে হবে।

সেই বিধিতে বলা হয়, যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পোশাকের কোনও নির্দিষ্ট বিধি নেই, সেখানে এমন কোনও পোশাক পরে যাওয়া যাবে না যা স্বাভাবিক পরিবেশকে বিঘ্নিত করে।

হিজাব বিতর্ক তুঙ্গে উঠলে হিন্দুত্ববাদীরা গেরুয়া উত্তরীয় গলায় ক্লাসে যাওয়া শুরু করেন। কর্নাটক সরকার ওই নির্দেশিকায় উল্লেখ করেছিল, হিজাব, গেরুয়া উত্তরীয় কোনওটাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলবে না। হাইকোর্ট তাতে সিলমোহরও দিয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত মুসলিম ছাত্রীদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়ে সহমত জানান। কিন্তু বিচারপতি সুধাংশু ধুলিয়া সংবিধানের ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয়টিতে গুরুত্ব আরোপ করেন। তার মতে, মুসলিম ছাত্রীদের বক্তব্যের যৌক্তিকতা রয়েছে।

সব মিলিয়ে হিজাব মামলার নিষ্পত্তি হয়নি। উচ্চতর বেঞ্চ কী বলে তার উপরেই আগামী পরিস্থিতি নির্ভরশীল।

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য কার্যকর করতে হলে আগের বিজেপি সরকারের নির্দেশ বাতিল করতে সুপ্রিম কোর্টে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি জরুরি।