ফ্রান্সে কর্তৃপক্ষ বলছে, মানব পাচার নিয়ে তদন্তের জন্য যে ভাড়া করা বিমানকে আটক করা হয়েছিল, সেটা ২৭৬ জন ভারতীয় নাগরিককে নিয়ে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। যাত্রীদের নিকারাগুয়া যাবার পথে ফ্রান্সের এক গ্রামীণ বিমান বন্দরে চার দিন ধরে আটকে দেয়া হয়।
শ্যাম্পেন অঞ্চলের ভাটরি বিমান বন্দরের বাইরে থেকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর রিপোর্টাররা দেখতে পান, লেজেনড এয়ারলাইন্সের এ-৩৪০ বিমান ক্রু এবং যাত্রী ওঠার পর টেক-অফ করছে।
আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে, ৩০৩ জন যাত্রীর মধ্যে ২৭৬ জন ভারতের মুম্বাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন, আর ২৫ জন ফ্রান্সে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। প্রশাসন জানায়, তাদেরকে প্যারিস চার্লস ডে গল এয়ারপোর্টে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য নির্ধারিত একটি বিশেষ জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
যেসব যাত্রীরা ফ্রান্সে আটকা পড়েছিলেন, তাদের মধ্যে আছে ২১-মাসের এক শিশু এবং কয়েকজন অপ্রাপ্তবয়স্ক যারা বিমানে একা ছিল।
বাকি দু’জন যাত্রীকে প্রথমে মানব পাচার সংক্রান্ত তদন্তে আটক করা হয়েছিল, কিন্তু সোমবার বিচারকের সামনে হাজির হবার পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়, জানিয়েছে প্যারিস প্রসেকিউটারের দফতর।
বিচারক তাদের এই মামলায় ‘সহায়তাকারী সাক্ষী’ হিসেবে মনোনীত করেন, যা ফরাসি আইনে একটি বিশেষ ব্যবস্থা। এর ফলে আরও তদন্তের জন্য সময় পাওয়া যাবে, এবং ‘সাক্ষী’কে অভিযুক্ত করা যেতে পারে, বা মামলা বাতিলও হয়ে যেতে পারে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ফুজেইরাহ বিমান বন্দর থেকে নিকারাগুয়ার রাজধানী মানাগুয়া যাওয়ার পথে লেজেনড এয়ারলাইন্সের এ-৩৪০ বিমান জ্বালানির জন্য ভাটরি বিমান বন্দরে থামে। তবে ফরাসি পুলিশ অজ্ঞাত সূত্রে খবর পায় যে, বিমানে মানব পাচারের শিকার যাত্রী আছেন, এবং তারা বিমানকে আটকে দেয়।
যাত্রীদের আসল গন্তব্যস্থল যুক্তরাষ্ট্র বলে যে ধারনা ছিল, সে বিষয়ে তদন্তকারীরা কোন মতামত দেয় নি। এ’বছর মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্ত দিয়ে ভারতীয়দের অনুপ্রবেশ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিমান যাত্রার লক্ষ্য কী ছিল, তা জানার জন্য ফরাসি কর্তৃপক্ষ কাজ চালাচ্ছে। বিদেশিদের বেআইনি ভাবে কোন দেশে প্রবেশ বা থাকার সাহায্য করছে, এমন কোন সংগঠিত অপরাধ গোষ্ঠীর কার্যক্রম নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে প্রসেকিউটারের দফতর জানিয়েছে।
তবে সোমবার তারা বলে নি যে, তারা এখনো মানব পাচার সন্দেহ করছে কি না।
লেজেনড এয়ারলাইন্সের আইনজীবী লিলিয়ানা বাকাইওকো বলেন, কয়েকজন যাত্রী ভারতে ফেরত যেতে চায় নি, কারণ তারা নিকারাগুয়া ভ্রমণের জন্য পয়সা খরচ করেছে। বিমান সংস্থাটি মানব পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে।
কয়েক দিনের জন্য পুলিশ ভাটরি এয়ারপোর্ট-এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। বিমান বন্দরে আটক যাত্রীদের জন্য খাবার-দাবার, গোসল করা ইত্যাদির ব্যবস্থা করে স্থানীয় কর্মকর্তা, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা।
রবিবার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করার লক্ষ্যে জরুরি শুনানির জন্য টার্মিনাল বিচারক, আইনজীবী আর দোভাষী দিয়ে ভরে গেলে, বিমান বন্দর একটি অস্থায়ী আদালতে পরিণত হয়।
রবিবারের শুনানিতে কয়েকজন আইনজীবী, কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া এবং যাত্রীদের অধিকার নিয়ে প্রতিবাদ করেন। তাদের মতে, পুলিশ এবং প্রসেকিউটার অজ্ঞাত সূত্রের খবরকে অতিমাত্রায় গুরুত্ব দিয়েছে।
নিকারাগুয়া সহ কয়েকটি দেশ মানব পাচার নির্মূল করার জন্য ন্যূনতম পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মনে করে।
নিকারাগুয়াকে অনেক লোক নিজ দেশের দারিদ্র বা সংঘাত থেকে পালাতে অভিবাসনের জন্য ব্যবহার করে, কারণ সেখানে সহজে ঢোকা যায়, এমনকি অনেক দেশের জন্য ভিসার প্রয়োজন হয় না।