এ বছর ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের কারণে বেথলেহেমে বড়দিনের উৎসব বাতিল করা হয়েছে। যার ফলে, অন্যান্য বছর এই সময়টি সরগরম থাকলেও রবিবার যীশু খ্রিস্টের জন্মস্থান হিসেবে বিবেচিত বেথলেহেম পরিণত হয় এক ভুতুড়ে শহরে।
ম্যাঙ্গার চত্বরের প্রথাগত উৎসবমুখর আলোকসজ্জা ও ক্রিসমাস ট্রি ছিল অনুপস্থিত। ছিল না শত শত পর্যটকদের ভিড়, যারা প্রতি বছর ছুটি উদযাপন করতে এখানে ছুটে আসেন। পরিবর্তে ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর কয়েক ডজন সদস্যকে খালি চত্বর পাহারা দিতে দেখা যায়।
বড়দিনের আগের রাতেও সব উপহারের দোকান খোলেনি। প্রবল বৃষ্টির ধারা থেমে আসলে অল্প কয়েকটি দোকান খুললেও সেগুলোতে খুব বেশি ক্রেতার আগমন ঘটেনি।
বড়দিনের উৎসব বাতিল হওয়াতে এই নগরীর অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বেথলেহেমের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশই আসে পর্যটন থেকে—যার বেশিরভাগই বড়দিনের মৌসুমে।
বেশ কয়েকটি প্রধান এয়ারলাইন্স ইসরাইলে তাদের ফ্লাইটগুলো বাতিল করেছে। যার ফলে খুব কম সংখ্যক বিদেশী এখানে আসছেন। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, বেথলেহেমের ৭০টিরও বেশি হোটেল তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে। যার ফলে হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে পরিচালিত ইসরাইলি স্থল ও বিমান হামলায় ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ৫০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে।
এ অঞ্চলের ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে ৮৫ শতাংশই হয়েছে বাস্তুচ্যুত। ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে গত ৭ অক্টোবর অতর্কিত হামলা চালিয়ে হামাসের যোদ্ধারা প্রায় ১,২০০ মানুষকে হত্যা করে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। আটক হন ২৪০ জন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
গাজার যুদ্ধে অধিকৃত পশ্চিম তীরের জীবনযাত্রাও প্রভাবিত হয়েছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে বেথলেহেম ও ফিলিস্তিনের অন্যান্য ইসরাইল অধিকৃত শহরগুলোতে আসা-যাওয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে যেতে সামরিক তল্লাশি চৌকি পার হওয়ার জন্য গাড়ী নিয়ে দীর্ঘ সারিতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে মানুষকে।
এসব বিধিনিষেধের কারণে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি এই অঞ্চল থেকে বের হয়ে ইসরাইলে কাজ করার জন্যেও আসতে পারছেন না।