আফগানিস্তানে নারীদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় নিষেধাজ্ঞার এক বছর পূর্তি

ফাইল-কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে নারীদের উচ্চশিক্ষায় তালিবানি নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন এক তরুণী। কাবুল, আফগানিস্তান। ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২।

আফগানিস্তানে নারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার অনুমতি দিতে ও শিক্ষার সর্বস্তরে নারীদের সুযোগ-সুবিধা লাভকে নিশ্চিত করতে সে দেশের ক্ষমতাসীন তালিবানকে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।

সরকারি ও বেসরকারি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নারীদের হাজিরা আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল পুরুষশাসিত তালিবান সরকার; চলতি সপ্তাহে সেই ঘটনার এক বছর পূর্তি হল। দরিদ্র আফগানিস্তানই বিশ্বের একমাত্র দেশ যারা সপ্তম শ্রেণির পর থেকে নারী শিক্ষাকে সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি টমাস ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় এই নিষেধাজ্ঞাকে “অসমর্থনযোগ্য” বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক ট্যুইটার) লেখেন, দক্ষিণ এশিয়ার এই সংকট-জর্জরিত দেশের “প্রবৃদ্ধি, সমৃদ্ধি ও নিজের পায়ে দাঁড়াতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়িক নেতা ও শিক্ষাবিদদের প্রয়োজন।”

২০২১ সালের আগস্টে তালিবান ক্ষমতায় ফিরে আসে এবং ইসলামি আইন সম্পর্কে তাদের কঠোর ব্যাখ্যা ও মত চাপিয়ে দেয়। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে আফগান নারীদের সুযোগ-সুবিধার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তারা।

তাদের নীতির আন্তর্জাতিক সমালোচনাকেও উপেক্ষা করেছে তালিবান শাসকরা। তাদের দাবি, স্থানীয় সংস্কৃতি ও ইসলামি আইন অনুযায়ী তারা চলছে।

আফগান নারী, মেয়ে ও মানবাধিকার বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত রিনা আমিরি বৃহস্পতিবার তালিবান সরকারের এই দাবিকে প্রশ্ন করেছেন এবং দেশের অর্ধেক জনগণের প্রাথমিক অধিকার হরণের জন্য অবৈধ শাসকদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

আমিরি এক্স-এ লিখেছেন, “আফগান জনগণের পাশে আমাদের দৃঢ়ভাবে দাঁড়াতে হবে, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের পাশে কারণ তারা আমাদেরকে এই নীতিগুলি মোকাবেলা করার আহ্বান জানিয়েছে। সেই সঙ্গে স্মরণে রাখবেন, তালিবান আফগান সংস্কৃতি থেকে আসেনি, বরং তালিবানি মতাদর্শ থেকে এসেছে।”

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকশো ছাত্রের স্নাতক অনুষ্ঠানে তালিবানের উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী নাদা মহম্মদ নাদিম বলেন, তাঁর সরকার দেশের শিক্ষার উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ আফগানের খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তা প্রয়োজন।

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের বিশেষ দূত রোজা ওটুনবায়েভা নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বুধবার বলেন, মাদ্রাসা নামে পরিচিত শুধুমাত্র ছেলেদের জন্য পরম্পরাবাহী ইসলামি ধর্মীয় স্কুলে সব বয়সী মেয়েদের পড়ার অনুমতি তালিবান দিচ্ছে তালিবান, এমন কিছু প্রতিবেদন তারা যাচাই করছে।

নারীদের প্রতি কঠোর ব্যবহার ও অন্যান্য মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে কোনও দেশই আনুষ্ঠানিকভাবে তালিবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘ আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্বের জন্য তালিবানের মনোনয়নের দাবিকে নাকচ করেছে।