মল্লিকার্জুন খাড়্গে: মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কংগ্রেস সভাপতিকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রস্তাব

কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে।

বিজেপি বিরোধী 'ইন্ডিয়া' জোটের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হল দিল্লিতে মঙ্গলবার ১৯ ডিসেম্বর। এই বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনে শরিক দলগুলির মধ্যে আসন বন্টন।

এদিনের বৈঠকে কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে আসন্ন লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোটের প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী করার প্রস্তাব দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়াও অরবিন্দ কেজরিওয়ালও এদিন মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী হিসাবে প্রস্তাব করেন।

মঙ্গলবারের বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মল্লিকার্জুন খাড়্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন। সংসদীয় রাজনীতিতে তার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন। রাজ্যসভায় এখন বিরোধী দলনেতা। তাকেই প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করা হোক।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবের পর বৈঠকে মল্লিকার্জুন খাড়্গে বলেন, "গরিবের অধিকারের জন্য রাজনীতি করেছি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ নেই।"

পরে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী কে হবেন তা পরে দেখা যাবে। এখন সবাই মিলে একসঙ্গে লড়ে আসন সংখ্যা বাড়ানোই লক্ষ্য হওয়া উচিত।”

মঙ্গলবারের বৈঠকের আগে সোমবার ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় মমতা বন্দোপাধ্যায়- অরবিন্দ কেজরিওয়াল বৈঠকে বসেছিলেন। তা ছাড়া মঙ্গলবার ভারতীয় সময় সকালে সমাজবাদী পার্টি নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও বৈঠক হয় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের।

আগামী লোকসভা ভোটে রাহুল গান্ধীকে প্রধানমন্ত্রী পদ প্রার্থী করার ব্যাপারে বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদবের আগ্রহ রয়েছে। একই বিষয়ে ডিএমকে নেতা তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন ও শিবসেনা নেতা উদ্ধব ঠাকরেও ভিন্নমত সহমত পোষন করেন।

ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।

কংগ্রেসের অঙ্ক দলিত, সংখ্যালঘু ভোট

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গে আগামী লোকসভা ভোটে উত্তর প্রদেশের কোনও আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন। তফসিলিদের জন্য সংরক্ষিত কোনও আসন থেকে তাকে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে।

কংগ্রেস সভাপতি দলিত অর্থাৎ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। উত্তরপ্রদেশে জনসংখ্যার ২০ শতাংশ দলিত।

এই প্রস্তাব নিয়ে ইন্ডিয়া জোটের দুই শরিক সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং রাষ্ট্রীয় লোকদলের সভাপতি জয়ন্ত চৌধুরির সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।

উত্তর প্রদেশে দলিত সম্প্রদায় দীর্ঘদিন কংগ্রেসের সমর্থক ছিল। বহুজন সমাজবাদী পার্টির উত্থানের পর দলিত ভোটের সিংহভাগ এই আঞ্চলিক দলের দখলে চলে যায়।

দলিত ভোটারদের সমর্থনেই ২০০৭ সালে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী তৃতীয় বারের জন্য উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন। বর্তমানে দলিত ভোটারদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপিকে সমর্থন করছেন।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, খাড়্গেকে লোকসভায় উত্তর প্রদেশ থেকে আসন দিয়ে দল বার্তা দিতে চায়, কংগ্রেস সরকার গড়ার সুযোগ পেলে খাড়্গের মতো একজন দলিত সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিকেই প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করতে চায়।

যদিও ইন্ডিয়া জোটের শর্ত অনুযায়ী কোনও দলই প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নিয়ে ভোটের আগে কোনও কিছু প্রকাশ করতে পারবে না। কংগ্রেসও তা মেনে চলবে।

এইচডি দেবগৌড়ার পর নরেন্দ্র মোদী ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী যিনি ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত। ভারতে এখনও দলিত সম্প্রদায়ের কেউ প্রধানমন্ত্রী হননি। দলিত সম্প্রদায়ভুক্ত কে আর নারায়ণন রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন।

মল্লিকার্জুন খাড়্গে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে একমাত্র শিখ মনমোহন সিং প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।

কংগ্রেস সূত্রে খবর, দলের বর্তমান সভাপতিকে প্রার্থী করা হলে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু ভোটও কংগ্রেসের দিকে ফিরতে পারে বলেই আশা করছে দল।

খাড়্গে এর আগে তাঁর রাজ্য কর্নাটক থেকে জিতে লোকসভার সাংসদ হয়েছেন। সদ্যই সেখানে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। বিজেপির বিরুদ্ধে জোরদার লড়াইয়ের বার্তা দিতেও কংগ্রেস সভাপতিকে দেশের সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসনের রাজ্যে প্রার্থী করার কথা ভাবা হচ্ছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে।