হাবিবুল আউয়াল: প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না

Your browser doesn’t support HTML5

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, "রাজনৈতিক নেতৃত্বের মধ্যে যে কলহ, বিরোধ আছে সেখানে দূতিয়ালী করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাংবিধানিকভাবে এবং সংবিধানের অধীনে যে আইনগুলো হয়েছে ওর অধীনে নির্বাচনটাকে যেভাবে আয়োজন করা দরকার আমরা সেভাবে করব। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে কি হবে না এটা নিয়ে আমি যেটা দেখতে পাচ্ছি বিগত ১০-১৫ বছর ধরেই আন্দোলন হচ্ছে এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডলে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সেটা নিয়ে দেনদরবার করবেন, তারা বিষয়টাকে মীমাংসা করবেন এবং ওর ভিত্তিতে বিষয়টা কখনো যদি নিরোপিত হয়, পরিবর্তিত হয়, তখন সে পরিবর্তিত অবস্থায় নির্বাচন কেমন অবাধ হবে, সেটা তখন বোঝা যাবে। আমার তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ওর উপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়ে কোন মন্তব্য করা এ পর্যায়ে সমীচীন হবে না। "

গত ১৭ ডিসেম্বর, ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার দাবি করেন ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটারদের ভোট দেয়াতে নিরুৎসাহিত করতে পারে, বা নির্বাচন প্রতিহত করার পক্ষে কোনোরকম সভা সমাবেশ সহ রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশন যে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তাতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় না। নির্বাচনী প্রচারণায় যারা অংশ নেবেন তাদের সাথে যারা নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তাদের সম্ভাব্য সহিংসতা এড়াতেই এই নির্দেশনা তারা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, "তারা যদি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করেন সে বিষয়ে কিন্তু বলা হয়নি। বলা হয়েছে নির্বাচনকে বিঘ্নিত করতে পারে বা নির্বাচনের বিপক্ষে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে এর ধরনের সভা-সমাবেশ থেকে নিবৃত্ত করা...তারা বয়কট করে যাচ্ছে বিগত দু'বছর বা ১০ বছর ধরেই, আপনারা দেখেছেন। সেখানে তো বাধা দেয়া হয়নি। কিন্তু ওই সময়ে এটা কিন্তু খুব ক্রিটিক্যাল। সেজন্যই শুধু ওই কয়েকটা দিনের কথা বলা হয়েছে। ওই সময়টাতে যেন প্রতিপক্ষের এমন কোন সভা-সমাবেশ যেন না হয় যাতে করে পক্ষরা সংঘর্ষে, সহিংসতায় জড়িয়ে পড়তে পারে। সে দিক থেকে আমরা এই বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিতে এনেছি এবং তাদেরকে অনুরোধ করেছি তারা যেন বিষয়টি দেখে।"

২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যারা বর্জন করছে, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো, জামাত,ও কিছু ইসলামপন্থী দল এদের সম্মিলিত ভোট বাংলাদেশের ভোট ব্যাংকের প্রায় ৪০ শতাংশ। এই বিপুল সংখ্যক ভোটারকে তাদের পছন্দ মাফিক প্রার্থী নির্বাচন থেকে বঞ্চিত রেখে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান কি কমিশনের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি আউয়াল বলেন, "না, এ কারণে নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। নিরপেক্ষতা তখনই প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যখন আমি গোপণে কোন রকম কারচুপির সাথে আমরা সংযুক্ত হব।...যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা কেউ কিন্তু বলছেন না যে নির্বাচন কমিশন নৌকাকে সমর্থন করবে বা তারা গোপনে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এ ধরনের কোন অভিযোগ নেই। কিন্তু বিএনপি বা সমমনা দলগুলো, তারা তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। আপনি যেটা বলেছেন সেই বিষয়টা পক্ষপাতিত্বের প্রশ্ন তখনই হতো যখন বিএনপি এবং সমমনা দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো।"

"নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক হয় না কারণ যে আট লক্ষ কর্মচারী যারা নির্বাচন কন্ডাক্ট করবে তারা কিন্তু সকলে ধারকৃত সরকারি কর্মচারী। তাদের উপর নির্বাচন কমিশনকে ডিপেন্ড করতে হবে। তারা যদি সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে কাজ করে এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে জেলা প্রশাসন যারা রিটার্নিং অফিসার তারা পোলিং সেন্টারের ভিতরে যারা ভোট গ্রহণ করবে তারা যেন সততার সাথে, নিষ্ঠার সাথে, ভয়-ভীতিহীন ভাবে পোলিংটা গ্রহণ করে সেটার দেখভাল করে তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে না", বলে জানিয়েছেন কাজী হাবিবুল আউয়াল।

এবারের নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা রাখা প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, যে এবারের নির্বাচনে সি সি ক্যামেরা থাকবে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ২ লক্ষ ৬০ হাজার বুথে নির্বাচন হবে, এজন্য সিসি ক্যামেরা লাগবে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ। কেন্দ্রীয়ভাবে এই সাড়ে তিনলক্ষ সিসি ক্যামেরা মনিটর করা "বস্তুগতভাবে" যেহেতু তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না তাই "অনেক চিন্তা ভাবনা করেই বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে।"

নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে অনুষ্ঠিত হবার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা পলিসি কোনো ভূমিকা রাখবে কিনা এ প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, "ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা নিয়ে আমরা একেবারে মাথা ঘামাচ্ছি না। আমরা যারা নির্বাচন কমিশনে আছি, ভিসার ব্যাপারে আমার কোন স্বার্থ আছে কি নাই, আমি নিজেও এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। এখন যাদের ভিসার খুব প্রয়োজন আছে, ঘন ঘন আমেরিকা বা ইউরোপে যাওয়ার প্রয়োজন আছে তারা হয়তো এটা বিবেচনা করে দেখতে পারে।"

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "ভিসা নীতির ব্যাপারে আমি এর বেশি কিছু বলবো না। আমার এ ব্যাপারে কোনরকম মাথাব্যথা নেই বা কোনরকম আমার উপরে কোন চাপ নেই। নির্বাচন কমিশন এটা নিয়ে একেবারে মাথা ঘামায় না। সরকারের উপর কোন চাপ আছে কিনা আমি বলতে পারবো না।"

ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকারটি নেন, শতরূপা বড়ুয়া।