মঙ্গলবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় গাজায় মানবিক অস্ত্রবিরতির পক্ষে ভোট দিয়েছে। ইসরাইল হামাস যুদ্ধের অবসান ঘটাতে বৈশ্বিক সমর্থনের প্রকাশ ঘটেছে এই ভোটে। এই ভোটে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান বিচ্ছিন্নতাও প্রকাশ পেয়েছে।
১৯৩ সদস্যের এই সংস্থার ১৫৩টি সদস্যরাষ্ট্র অস্ত্রবিরতির পক্ষে ভোট দেয়, ১০টি রাষ্ট্র এর বিপক্ষে ভোট দেয় , ২৩ টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল। এই ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার সময় বহু রাষ্ট্রদূত এবং অন্যান্য কুটনীতিকরা আনন্দ উচ্ছাস প্রকাশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল ছাড়া আরও আটটি দেশ এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। তারা হলো অস্ট্রিয়া, চেকিয়া,গুয়াতেমালা,লাইবেরিয়া,মাইক্রোনেশিয়া,নাউরু, পাপুয়া নিউ গিনি এবং প্যারাগুয়ে।
এবার অস্ত্র বিরতির পক্ষে সমর্থন ২৭ অক্টোবরের প্রস্তাবের চেয়ে অনেক বেশি ছিল। সে বার মানবিক অস্ত্রবিরতির পক্ষে ভোট পড়েছিল ১২০, বিপক্ষে ১৪ এবং ৪৫ টি রাষ্ট্র ভোটদানে বিরত ছিল।
এই খসড়া প্রস্তাবে"গাজা উপত্যকার বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক জনগণের দুর্ভোগের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ" প্রকাশ করা হয়। এতে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়া হয়।
এতে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের আওতায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি তুলে ধরে, সকল পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। অবিলম্বে সকল জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বানও জানানো হয় এতে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একই ধরনের একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন । তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মানবিক বিরতিকে সমর্থন করে তবে এমন একটি যুদ্ধবিরতি হামাসের নেতৃত্বকে ভবিষ্যতে হামলার পরিকল্পনা চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলেও মনে করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।
জাতিসংঘের মঙ্গলবারের অধিবেশন সত্ত্বেও মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা এবং গাজায় লড়াই অব্যাহত রয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা ভূখণ্ড জুড়ে রকেট উৎক্ষেপণের স্থান লক্ষ্য করে তারা বিমান হামলা চালিয়েছে। অভিযানের সময় ২৫০টি রকেট, মর্টার শেল এবং রকেট চালিত গ্রেনেড পেয়েছে তাদের স্থল সেনারা।
এদিকে, ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শহরে ইসরাইলি বাহিনী চার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ইসরাইলি ড্রোন হামলায় এসব হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে।
গত ৭ অক্টোবরের ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে গাজা ভূখণ্ডে হামাসকে নির্মূল করতে ইসরাইলের অভিযান শুরু হয়। এ পর্যন্ত পশ্চিম তীরে প্রায় ২৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
মঙ্গলবার “গাজায় স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক সহায়তা” রক্ষার আহ্বান জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। সামরিক চেকপয়েন্টগুলিতে বিলম্ব এবং ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীদের আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জানিয়ে সংস্থাটির মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস বলেন, "গাজার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে রক্ষা করতে হবে। এমনকি যুদ্ধেও।"