যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি আহবান করতে অস্বীকৃতি জানানর জন্য তারা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করবেন।
ডেট্রয়েটের শহরতলী ডিয়ারবর্ণ-এ শনিবার এক সম্মেলনে তারা এ’কথা বলেন।
মিশিগান রাজ্যে ডেমক্র্যাট দল হোয়াইট হাউসকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ইসরাইল-হামাস যুদ্ধে তাঁর নীতির কারণে বাইডেন আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ে যে পরিমাণ সমর্থন হারাতে পারেন, তা ২০২৪ সালের প্রেসিডেনশিয়াল নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
মিশিগান, মিনেসোটা, অ্যারিজোনা, উইসকন্সিন, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, নেভাডা আর পেনসিলভেনিয়া থেকে আসা মুসলিম নেতারা ভাষণ দেয়ার উঁচু একটি ডেস্কের পেছনে জড়ো হন, যেটায় লেখা ছিল, ‘’অ্যাবানডন বাইডেন, সিসফায়ার নাও’’, অর্থাৎ, ‘’বাইডেনকে পরিত্যাগ করো, যুদ্ধবিরতি এই মুহূর্তে।‘’
হামাস-শাসিত গাজায় স্বাস্থ্য মন্ত্রানালয় শনিবার জানায়, ইসরাইলের সাথে চলমান যুদ্ধে ১৫,২০০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের দুই-তৃতিয়াংশ নারী ও শিশু।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণে ১,২০০ জন ইসরাইলি নিহত হয়, যা বর্তমান সংঘাটের সূত্রপাত ঘটায়।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষোভ
মিনিয়াপলিস থেকে আসা জেয়লানি হুসেইন এই সম্মেলন আয়োজনে সহায়তা করেছেন। তিনি বলছেন, যুদ্ধবিরতি সমর্থন করতে বাইডেনের অস্বীকৃতি আমেরিকান মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে তাঁর সম্পর্ক এতই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে যে, তা ঠিক করার কোন রাস্তা নেই।
‘’আমাদের ট্যাক্সের টাকায় শিশু আর গোটা পরিবার নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হচ্ছে,’’ তিনি বলেন। ‘’আমরা আজকে যা দেখছি তা হল, বিপর্যয়ের উপর বিপর্যয়।‘’
হুসসেইন দ্য অ্যাসোশিয়েটেড প্রেসকে বলেন, ‘’আমাদের সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস্য মাত্রায় ক্ষোভ রয়েছে।
‘’যে ব্যাপারটা আমাদের আরও বেশি রাগিয়ে তুলছে তা হল, আমাদের বেশির ভাগ লোক তো আসলেই প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ভোট দিয়েছিল।
‘’আমাকে এক ধর্মীয় নেতা জিজ্ঞেস করেছেন, ‘আমি কী করে আমার ২০২০ সালের ব্যালট পেপার ফেরত পেতে পারি, আমি সেটা ধ্বংস করতে চাই?’, হুসেইন বলেন।
হোয়াইট হাউস মুখপাত্র এর আগে বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসন যুদ্ধে মানবিক বিরতির জন্য চাপ দিয়েছে, যাতে গাজায় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো যায়। তিনি আরও বলেন, ‘’ইহুদীদের বিরুদ্ধে জাতিগত বিদ্বেষের বিপক্ষে লড়াই এবং ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে থাকা, সব সময়ই প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মূল মূল্যবোধ ছিল।‘’
ট্রাম্প বিকল্প নয়
মিশিগান, উইসকন্সিন আর পেনসিলভেনিয়া এক সময় রিপাবলিকান সমর্থনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, কিন্তু ২০২০ সালে তারা ডেমোক্র্যাট দলে ফিরে এসে বাইডেনকে হোয়াইট হাউস জয়ে সহায়তা করে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, সাড়ে ৩৪ লক্ষ আমেরিকান নিজেদের মুসলিম বলে গণ্য করেন, যেটা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১ শতাংশ। পিউ-এর তথ্য অনুযায়ী, মুলসিম জনগোষ্ঠী সাধারণত ডেমোক্র্যাট দলকে সমর্থন করে থাকে।
তবে শনিবার নেতারা বললেন, ফিলিস্তিনি নারী, পুরুষ আর শিশুদের মাঝে হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাবার ফলে, বাইডেনের প্রতি মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন শেষ হয়ে গেছে।
‘’আমেরিকান মুসলিম হিসেবে আমরা ক্ষমতাহীন নই। আমাদের ক্ষমতা আছে। আমাদের যে শুধু টাকা আছে, তাই না, আমাদের ভোট আছে। এবং এই দেশকে তার নিজের কাছ থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা সেই ভোট ব্যবহার করব,‘’ হুসেইন সম্মেলনে বলেন।
তবে বাইডেনকে তিরস্কার করার মানে এই না যে, মুসলিম কম্যুনিটি নেতারা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করেন, হুসেইন বলেন।
‘’আমাদের সামনে শুধুমাত্র দুটো পথ নেই। আমাদের অনেক পথ আছে, এবং আমরা অপশনগুলো ব্যবহার করব,’’ তিনি বলেন