ভারতের উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশীতে ১৭ দিন অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে সুড়ঙ্গে আটকে ছিলেন ৪১ জন শ্রমিক। শুধু ছিল কাজের জন্য বৈদ্যুতিক বাতি। অবশেষে মঙ্গলবার ২৮ নভেম্বর মুক্তি পেয়েছেন উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকেরা। সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে সেই আতঙ্কের অভিজ্ঞতা শোনালেন এক শ্রমিক।
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে যে ৪১ জন আটকে ছিলেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক। ঝাড়খণ্ডের খুঁটি জেলার বাসিন্দা জমরা ওঁরাও ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। ধস নামার কারণে বাকি ৪০ জন শ্রমিকদের সঙ্গে ৩২ বছর বয়সি জমরা সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছিলেন। মঙ্গলবার টানেল থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “১২ নভেম্বর ভোরে সুড়ঙ্গে কাজ করার সময় একটা বিকট শব্দ শুনতে পাই। তারপর চোখের সামনেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে সুড়ঙ্গের একাংশ।”
প্রাণ বাঁচাতে তখন সকলেই দৌড়াদৌড়ি করতে শুরু করেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। অন্ধকূপ থেকে বেরোনোর সুযোগ পাননি কেউই। খানিকক্ষণের মধ্যে সকলেই বুঝতে পারেন যে তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সুড়ঙ্গে আটকে পড়েছেন।
প্রতিটা মুহূর্ত আতঙ্কে থাকলেও আশা ছাড়েননি শ্রমিকেরা। বারে বারেই তাদের মনে হত, এই বোধহয় কেউ বাঁচাতে আসবে। খিদে, ভয় সবকিছু ঘিরে ধরলেও নিজেরাই একে অপরকে সাহস জোগান। জমরাওয়ের কথায়, “সবাই অস্থির হয়ে পড়েছিলাম। সাহায্যের জন্য প্রার্থনা শুরু করি। কিন্তু আশা ছাড়িনি।”
সুড়ঙ্গে আটকে পড়ার পর টানা ২৪ ঘণ্টা অভুক্ত থাকতে হয়েছিল শ্রমিকদের। তারপর খাবার পাঠাতে পেরেছিল প্রশাসন। জমরা জানিয়েছেন, প্রথম বার খাবার হিসাবে এসেছিল মুড়ি এবং এলাচ। সেই খাবার খেয়েই লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শক্তি পেয়েছিলেন তারা। শ্রমিকেরা আশ্বাস পান, যে উদ্ধারকারীর দল ঠিক তাদের কাছে পৌঁছবে।
কংক্রিটের সুড়ঙ্গের মধ্যে সময় পার করতে এক সময় মোবাইলের গেমই শ্রমিকদের ভরসা হয়ে উঠেছিল। জমরা জানিয়েছেন, মোবাইলে লুডো খেলে অনেকটা সময় পার করেছেন তারা। বাইরে থেকে চার্জার পাঠিয়ে দেওয়ায় ফোন চার্জ করতে অসুবিধা হয়নি।
তবে নেটওয়ার্ক ছিল না। তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। শুধু মোবাইলের গেম নয়, ১৭ দিন সুড়ঙ্গের মধ্যে শ্রমিকেরা একে অপরের ছিলেন ভরসা। তাই নিজেদের সুখ-দুঃখের কথা বলে, মনোবল বাড়িয়েও সময় কাটাতেন তারা।
স্ত্রী এবং তিন সন্তানকে রেখে মাসে ১৮ হাজার টাকা বেতনে সুড়ঙ্গে কাজ করতে গিয়েছিলেন জমরা। ১৭ দিন ধরে পরিবারের কাছে ফেরার জন্য প্রতি মুহূর্তে ছটফট করেছেন তিনি। তবে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলেও আগামী দিনে সুড়ঙ্গের কাজে হাত দেবেন কি না, সেই সিদ্ধান্ত বাড়িতে পৌঁছে নেবেন তিনি, এমনটাই জানিয়েছেন ঝাড়খন্ডের এই শ্রমিক।