হামাসের হাতে জিম্মিদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা

হাইম জাক/জিপিও-র দেওয়া এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, শ্যারন হার্তজম্যান (ডানে) এক আত্মীয়কে আলিঙ্গন করছেন। রামাত গান, ইসরাইল। ২৫ নভেম্বর, ২০২৩।

প্লাস্টিকের চেয়ারই বিছানা। রুটি ও ভাত দৈনন্দিন খাবার। শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা। হামাসের হাতে সাত সপ্তাহ জিম্মি থাকার পর ইসরাইলে ফিরে এসেছে অনেকে। তাদের বন্দিবাসের পরিস্থিতি সংক্রান্ত অনেক তথ্য উঠে আসতে শুরু করেছে।

যুদ্ধবিরতি চুক্তি মোতাবেক গত তিন দিনে মুক্তিপ্রাপ্ত ৫৮ জন পণবন্দি সাধারণ মানুষের চোখের বাইরে রয়েছে। এদের বেশিরভাগই ইসরাইলের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা হাসপাতালে ভর্তি।

ইসরাইলের উপর রক্তক্ষয়ী আন্তঃসীমান্ত হামলার সময় হামাস জঙ্গিরা একদল মানুষকে গাজায় নিয়ে যাওয়ার প্রায় দুই মাস পর বেশিরভাগ জিম্মিই স্থিতিশীল শারীরিক অবস্থায় রয়েছে বলে ধারণা। প্রসঙ্গত, হামাসের ওই হামলায় ১২০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

জিম্মিদের অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তবে, মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের পরিবারের লোকেরা তাদের প্রিয়জনদের অভিজ্ঞতার বিস্তারিত বিবরণ দিতে শুরু করেছে।

মেরাভ রাভিভের তিন আত্মীয়কে শুক্রবার মুক্তি দিয়েছে হামাস। তিনি বলেন, তাদের অনিয়মিত খাবার দেওয়া হতো এবং তারা মূলত ভাত ও রুটি খেয়ে থেকেছে। তিনি আরও জানান, তার এক কাজিন কেরেন ও কাকিমা রুথ মুন্ডারের ওজন মাত্র ৫০ দিনেই সাত কিলোগ্রাম করে কমে গেছে। তার ৯ বছর বয়সী ভাইপো ওহাদ মুন্ডার জিকরিকেও রোগা লাগছে।

৮৫ বছর বয়সী মুক্তিপ্রাপ্ত পণবন্দি ইয়াফা আদারের নাতনি আদভা আদার বলেন, তার ঠাকুমার ওজনও হ্রাস পেয়েছে।

হামাসের হাতে জিম্মি জীবনের পূর্ণ ছবিটি পাওয়া যায় ৮৫ বছর বয়সী ইয়োচেভেদ লিপসিচৎজের বিবরণ থেকে। চলতি যুদ্ধবিরতির আগে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। মুক্তির পর লিপসিচৎজ বলেছিলেন, গাজার মাটির তলায় “মাকড়সার জালে”র মতো ছড়িয়ে থাকা সুড়ঙ্গের মধ্যে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। তিনি আরও জানান, ফিলিস্তিনি জঙ্গিরা “আমাদের বলেন যে, তারা কুরআনে বিশ্বাসী মানুষ এবং তারা আমাদের আঘাত করবে না।” লিপসিচৎজ বলেন, জিম্মিদের সঙ্গে ভাল আচরণ করা হয়েছে এবং ওষুধসহ চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা হয়েছে তাদের জন্য।

তিনি জানান, রক্ষীরা জায়গাগুলিকে পরিষ্কার রেখেছিল। জিম্মিদের দৈনিক একবার খাবার দেওয়া হত। তাতে থাকত চিজ, শশা ও পিটা ব্রেড। তিনি আরও জানিয়েছেন, তার জিম্মিকারীরাও একই খাবার খেত।

প্রাথমিকভাবে ইঙ্গিত ছিল যে, সাম্প্রতিক মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের ভূ-গর্ভে রাখা হয়েছিল। ৭২ বছর বয়সী আদিনা মোশে শুক্রবার ছাড়া পেয়েছেন। তার ভাইপো ইয়াল নৌরি বলেন, দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহ অন্ধকারে থাকার কারণে তার কাকিমাকে “সূর্যের আলোতে মানিয়ে নিতে হয়েছিল।”

তিনি বের হয়ে জানতে পারেন যে জঙ্গিরা তার স্বামীকে হত্যা করে এবং তার ছেলের পরিবার অলৌকিকভাবে বেঁচে যায়।

তবে, মুক্তিপ্রাপ্ত অধিকাংশ জিম্মিই ভাল শারীরিক অবস্থায় রয়েছে এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে ও কথা বলতে পারছে।

১৮ জন বিদেশী নাগরিককেও মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এদের বেশিরভাগই থাইল্যান্ডের নাগরিক।