কংগ্রেসের বর্তমানে বন্ধ থাকা দলীয় মুখপত্র ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড এবং ইয়ং ইন্ডিয়া সংস্থার ৭৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি মঙ্গলবার ২১ নভেম্বর বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। বেআইনি লেনদেনের অভিযোগে তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে তদন্তকারী সংস্থাটি জানিয়েছে। গত কয়েক বছর যাবৎ এই ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছিল ইডি। এই মামলাতেই দুই প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদও করেছে তদন্তকারী সংস্থাটি। কংগ্রেসের ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর সম্পত্তি আত্মসাৎ করার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। সম্পত্তির হাত বদলে বেআইনি লেনদেন হয়েছে বলে ইডির অভিযোগ।
কংগ্রেসের বক্তব্য, সম্পত্তির হাত বদল হলেও তাতে কোনও ধরনের অর্থ লেনদেন হয়নি। ফলে যে ক্ষেত্রে টাকা পয়সার লেনদেন হয়নি, সেখানে বেআইনি কারবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন। এই ব্যাপারে দলের অভ্যন্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছে কংগ্রেস এবার আইনি লড়াই চালাবে।
ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন জওহরলাল নেহরু। ১৯৩৮ সালে এই পত্রিকা যখন শুরু হয় তখন পন্ডিত নেহরুর সঙ্গে ছিলেন পাঁচ হাজার স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাদের অনুদানে তৈরি হয়েছিল অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড।
২০০৮ সালে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার যখন ক্ষমতায় তখন দীর্ঘদিন আর্থিক সংকটে ভুগতে থাকা পত্রিকাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। দু বছর পর জন্ম নেয় ইয়ং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটি।
কংগ্রেস জানিয়েছে, ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর মালিক আসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেডকে ঋণমুক্ত করার জন্য আইনি প্রয়োজনে ইয়ং ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড গঠন করা হয়েছিল। সেই সংস্থার ৩৮ শতাংশ করে মোট ৭৬ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর নামে। বাকি ২৪ শতাংশ কংগ্রেস নেতা মতিলাল ভোরা, অস্কার ফার্নান্ডেজ এবং শ্যাম পিত্রদা প্রমুখের নামে বরাদ্দ। প্রথম দু’জন বর্তমানে প্রয়াত। নতুন কোম্পানি ইয়ং ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর ৯০ কোটি টাকা ঋণ মেটানোর বিনিময়ে সংস্থার যাবতীয় সম্পত্তি লিখিয়ে নেয়।
এই বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দিল্লির আদালতে মামলা করেছিলেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তার অভিযোগ ছিল ইয়ং ইন্ডিয়া কংগ্রেসকে মাত্র ৫০ লাখ টাকা দিয়ে ৯০ কোটি টাকা ঋণ মকুব করিয়ে নিয়েছে। উল্টে ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর বাহাদুর শাহ জাফর মার্গের যে বাড়িটি ইয়ং ইন্ডিয়া নিজেদের নামে লিখিয়ে নিয়েছে সেটির বাজারমূল্য প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামী আদালতে প্রশ্ন তোলেন, কংগ্রেস যদি তাদের মুখপত্রের কাছে প্রাপ্য ৯০ কোটি টাকা মকুব করে দিতে চাইত তবে তারা নিজেরাই একটা প্রস্তাব গ্রহণ করে তা করে দিতে পারত। কেন তারা সে পথে না হেঁটে একটি নতুন কোম্পানি তৈরি করল।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, হস্তান্তরের সময় সনিয়া গান্ধী ছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। কিন্তু রাহুল গান্ধী গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না। কেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীর নামে কোম্পানির ৭৬ শতাংশ শেয়ার বরাদ্দ করা হয়েছিল, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
যে প্রতিষ্ঠানের নামে দু হাজার কোটি টাকা মূল্যের বাড়ি রয়েছে, তারা কেন, ৯০ কোটি টাকা ঋণ মেটাতে সদ্য তৈরি কোম্পানিকে সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তর করল, সেই বিষয়ে বিজেপি নেতার প্রশ্ন।
স্বামীর অভিযোগ, এই ভাবে আসলে দলীয় মুখপত্রের বিপুল সম্পত্তি গান্ধী পরিবারের হস্তগত করার চেষ্টা হয়েছে। স্বামীর ২০১২-র মামলার প্রেক্ষিতে দিল্লির আদালত আয়কর দফতরকে প্রথমে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল। আয়কর দফতরের রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আদালত ইডিকে তদন্তভার দেয়। সেই মামলায় ২০১৫ সালে আদালত সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধীকে সশরীরে কোর্টে হাজিরা থেকে মুক্তি দেয়। তদন্তে তাদের তলব করে ইডি।
কংগ্রেসের বক্তব্য, ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর ঋণ মুক্তি, সম্পত্তি হস্তান্তর ইত্যাদির সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ছিল অলাভজনক উদ্যোগ। ইয়ং ইন্ডিয়া ট্রাস্ট হিসাবে কাজ করে। এটির সঙ্গে লাভ লোকসানের কোনও সম্পর্ক নেই। ফলে ৭৬ শতাংশ মালিকানা সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীদের নামে থাকলেও তারা এক পয়সা কোম্পানি থেকে নেননি এবং সম্পত্তিরও তারা ব্যক্তিগতভাবে মালিক নন।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর বক্তব্য, নতুন কোম্পানি তৈরি এবং সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীদের সিংহভাগ মালিকানা দেওয়াটাই রহস্যজনক। সেই কারণেই তিনি ফৌজদারি মামলা করেছেন।