গাজায় জ্বালানির অভাবে টেলিযোগাযোগ বন্ধ, ত্রাণ বিতরণে জটিলতা

বিধ্বস্ত গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযান চলছে।

সর্বশেষ ঘটনাবলিঃ

  • গাজায় জ্বালানির অভাব ত্রাণ সহায়তা বিতরণের সমন্বয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
  • নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা কমাতে সফল হয়নি।
  • বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালকের মতে, গাজা “অবিলম্বে অনাহারের সম্ভাবনার” সম্মুখীন।
  • ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজার চারটি শহর ছেড়ে যাওয়ার জন্য সতর্ক করেছে, যেটা সম্ভবত এই এলাকায় নতুন ইসরাইলি হামলার পূর্বাভাস।
  • ইসরাইলি বাহিনী গাজার শিফা হাসপাতালের চারপাশে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে।
  • জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ হামাসের হাতে বন্দি সকল জিম্মিদের অবিলম্বে মুক্তি এবং গাজায় “জরুরি ও বর্ধিত মানবিক বিরতির” আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে। ইসরাইল বলেছে প্রস্তাবটি “বাস্তব প্রতিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইনের মতে, গাজার বেসামরিক নাগরিকরা “অনাহারের তাৎক্ষণিক সম্ভাবনার” সম্মুখীন।

ম্যাককেইন বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজায় খাদ্য ও পানির সরবরাহ কার্যত অস্তিত্বহীন এবং যা প্রয়োজন, তার সামান্য একটি অংশ সীমান্ত দিয়ে আসছে।”

”একটি কার্যকর সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে বর্তমান ক্ষুধার চাহিদা মেটানোর কোনো উপায় নেই। গাজায় জীবন রক্ষাকারী খাদ্য আনার জন্য একমাত্র আশা হলো, ত্রাণ প্রবেশাধিকারের জন্য আরেকটি নিরাপদ প্যাসেজ উন্মুক্ত করা,” তিনি বলেন।

গাজায় টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদানকারীদের জেনারেটর চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ার পরে বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে সমস্ত টেলিযোগাযোগ পরিষেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

জিম্মির মৃতদেহ উদ্ধার

এছাড়া শুক্রবার ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) ঘোষণা করে, তারা কর্পোরাল নোয়া মার্শিয়ানোর মৃতদেহ খুঁজে পেয়েছে এবং বের করে এনেছে। সেনাবাহিনী বলেছে, তার লাশ “গাজার শিফা হাসপাতালের সংলগ্ন” পাওয়া গেছে।

ইসরাইলে ৭ই অক্টোবর হামলার সময় হামাস তাকে অপহরণ করে।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা ইহুদিত ওয়েইসের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। তিনি ৭ই অক্টোবর ইহুদি রাষ্ট্রের ওপর হামাসের হামলায় বন্দি ২৪০ জন জিম্মিদের একজন।

সেনাবাহিনী বলেছে, গাজা শহরের শিফা হাসপাতালের কাছে তার লাশ পাওয়া গেছে।

নিহত ইসরাইলি জিম্মি ইহুদিত ওয়েইসের ছেলে ওমের ও পুত্রবধূ জামের এএফপি সংবাদদাতার সাথে কথা বলেন।

ইসরাইলের দাবী, হামাসের প্রত্যাখ্যান

হামাস সামরিক উদ্দেশ্যে হাসপাতালটিকে ব্যবহার করে, এই দাবী জঙ্গি গোষ্টিটি আবার প্রত্যাখ্যান করেছে।

বৃহস্পতিবার দিনের শেষে এক বিবৃতিতে তারা এই দাবীকে “একটি নির্লজ্জ মিথ্যা বর্ণনার পুনরাবৃত্তি, যা দখলদার সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের দুর্বল এবং হাস্যকর পারফর্ম্যান্স দ্বারা প্রদর্শিত হয়েছে,” বলে বর্ণনা করে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য বেনি গ্যান্টজের সাথে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রদানের গতি বৃদ্ধির বিষয়ে কথা বলেছেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তর একথা জানিয়েছে।

গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ইসরাইল গাজায় বৃহৎ বিমান এবং স্থল আক্রমণ শুরু করার পর থেকে ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের ৪০ শতাংশ হলো শিশু।

সাতই অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১২০০ জন নিহত হবার পর প্রতিক্রিয়া হিসেবে ইসরাইল গাজায় অভিযান শুরু করে।

জাতিয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কার্বি বৃহস্পতিবার বলেছেন, হামাস শিফা হাসপাতালকে নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র এবং সম্ভাব্য স্টোরেজ সুবিধা হিসেবে ব্যবহার করার তথ্যের বিষয়ে, যুক্তরাষ্ট্র কোনো ইসরাইলি গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার করবে না বা তার নিজস্ব গোয়েন্দা মূল্যায়নের বিষয়ে বিস্তারিতভাবে জানাবে না।

ইসরাইলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনি নারী এবং শিশুদের বিনিময়ে হামাস গাজায় জিম্মি হিসেবে আটক থাকা অন্তত ৫০ জন নারী ও শিশুকে মুক্তি দেবে- এমন একটি প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

সাতই অক্টোবর ইসরাইলে অতর্কিত হামলা চালানোর সময় হামাস আনুমানিক ২৪০ জন ইসরাইলি এবং বিদেশীকে জিম্মি করে।

হামাস জানিয়েছে, প্রায় ৬৫০ জন রোগী এবং পাঁচ থেকে সাত হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছে।

সেনা অভিযানের অগ্রগতির সাথে সাথে গাজায় ত্রাণ সহায়তা প্রদানের জন্য যুদ্ধবিরতি আরোপ করার ক্রমবর্ধমান এবং তীব্র আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। তবে তারা ফিলিস্তিনিদের উত্তর গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার জন্য দৈনিক চার ঘন্টা মানবিক বিরতি দিয়ে দুটি করিডোর খোলা রাখতে দিতে সম্মত হয়েছে।

জাতিসংঘের সংবাদদাতা মার্গারিট বাশির এবং হোয়াইট হাউসের ব্যুরো চিফ প্যাটসি উইদাকুসোয়ারা এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন। এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য এপি, রয়টার্স এবং এএফপি নেয়া হয়েছে