ভারতের উত্তরাখন্ডে ভয়াবহ টানেল দুর্ঘটনার পর কেটে গেছে ৬০ ঘণ্টা। এখনও সেই ভেঙে পড়া সুড়ঙ্গের মধ্যেই আটকে রয়েছেন ৪০ জন শ্রমিক। পর্যাপ্ত আলো, বাতাস সবেরই অভাব রয়েছে। তাদের প্রাণটুকু রক্ষা করার জন্য উদ্ধারকাজ শুরু হওয়ার পরেই ধ্বংসস্তূপের মধ্যে ঢোকানো হয়েছে ৯০০ মিটার লম্বা পাইপ। তার মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছিল অক্সিজেন।
সেই পাইপের সাহায্যেই এবার ছেলের সঙ্গে কথা বললেন আটকে পড়া এক শ্রমিক। তিনি জানিয়েছেন, তিনি একদম ঠিক আছেন। আটকে থাকা বাকি শ্রমিকেরা যাতে উদ্ধারকাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে পারেন, সেই কথা বুঝিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
গত রবিবার ১২ নভেম্বর উত্তরাখন্ডের উত্তরকাশী জেলায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ে একটি নির্মীয়মাণ টানেল। ওই টানেলটি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে তা সিলকিয়ারার সঙ্গে ডান্ডালগাঁওকে সংযুক্ত করত। চারধাম রোড প্রজেক্ট-এর অংশ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল এই সুড়ঙ্গটি। এটি চালু হলে উত্তরকাশী থেকে যমুনোত্রী ধাম পর্যন্ত রাস্তার দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যেত।
সেই সুড়ঙ্গের ভিতরেই প্রায় ২০০ মিটার চওড়া জায়গা জুড়ে ধস নেমেছিল। সেখানেই আটকে আছেন ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের ৪০ জন শ্রমিক। বড় বড় পাথর, বোল্ডার ভেঙে পড়ে টানেলের একটি বড় অংশ বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পাথরের অপর প্রান্তেই আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা। বর্তমানে সুড়ঙ্গের ভিতরে ধসে পড়া ওই পাথর কাটার চেষ্টা চলছে। শ্রমিকদের প্রতিনিয়ত পাইপের মাধ্যমে অক্সিজেন ও পানীয় জল পাঠানো হচ্ছে।
সেখানেই ৬০ ঘণ্টা ধরে আটকে রয়েছেন গব্বর সিং নেগি। কোটদ্বারের বাসিন্দা নেগি এই প্রজেক্টে একজন সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করেন। তার ছেলে আকাশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, অক্সিজেন পাঠানোর পাইপলাইনের মাধ্যমে তার সঙ্গে কথা রয়েছে নেগির। তিনি জানিয়েছেন, তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার এবং জল পাঠানো হচ্ছে। সকলেই সুস্থ রয়েছেন। বাকি ৩৯ জন যাতে এই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার মতো জোর পান, তার জন্য তাদের শক্তি জোগাচ্ছেন তিনি। উদ্ধারকারী দলের তরফে জানানো হয়েছে, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভেতর করে আনা যাবে সকলকে।
যে সংস্থা টানেল তৈরির বরাত পেয়েছিল, সেটির সঙ্গে ২২ বছর ধরে যুক্ত রয়েছেন নেগি। তার ভাই জানিয়েছেন, "আমার ভাই অত্যন্ত অভিজ্ঞ। সেই কারণেই ওর সঙ্গে থাকা সকলে সুস্থ রয়েছে।"
সুড়ঙ্গের ভিতরে উদ্ধারকারী দলের থেকে ৪০ মিটারেরও কম দূরত্বে আটকে রয়েছেন শ্রমিকরা। এর মধ্যে পাথর কেটে ২১ মিটারের বেশি রাস্তা পরিষ্কার করা হয়ে গেছে। এখনও প্রায় ১৯ মিটার পাথর কাটা বাকি। এই দূরত্ব কাটিয়ে উঠতে পারলেই শ্রমিকদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
সোমবার ১৩ নভেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে হরিদ্বার থেকে ট্রাকে করে মোট ৮টি পাইপ নিয়ে আসা হয়। আরও পাইপ সেখানে নিয়ে আসা হবে। ধ্বংসস্তূপ কেটে সেগুলিকে সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রবেশ করাতে কতক্ষণ সময় লাগবে তা অবশ্য স্পষ্ট করা হয়নি। উদ্ধারকাজ শুরুর প্রথমে ৩০ মিটার চওড়া পাথর কেটে বেশ কিছুটা ভিতরে পৌঁছে গিয়েছিলেন উদ্ধারকারী দল। কিন্তু সুড়ঙ্গের উপর থেকে মাটি ধসে পড়তেই ফের কিছুটা রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। ঝুরো মাটি ধসে যাতে ফের বিপত্তি না হয়, সেই কারণে ‘শটক্রেটিং’ নামক এক বিশেষ পদ্ধতিতে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে কংক্রিট স্প্রে করা হচ্ছে। এর ফলে মাটি ধসে পড়ার সম্ভাবনা কমেছে।
ইতিমধ্যে শ্রমিকদের হাঁটাচলা ও নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য সুড়ঙ্গের ভিতরে ৪০০ মিটার বাফার জোন তৈরি করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে গর্ত করে সেখানে হাইড্রোলিক জ্যাক ব্যবহার করে ৯০০ মিলিমিটার চওড়া পাইপ ঢোকানো হবে। এরপরে অ্যাগুয়ার মেশিন ব্যবহার করে আটকে পড়া শ্রমিকদের বের করে আনার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্ধারকারীদের।