ভারতের উত্তরাখণ্ডে একটি নির্মীয়মাণ টানেল ভেঙে পড়ে চাপা পড়লেন শ্রমিকরা। সুড়ঙ্গের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অন্তত ৪০ জন শ্রমিক টানেলের ভেতরেই আটকা পড়ে রয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে রবিবার ১২ নভেম্বর ভোররাতে। উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশী জেলায় ওই টানেলটি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হলে তা সিলকিয়ারা-র সঙ্গে ডান্ডালগাঁওকে সংযুক্ত করত। চারধাম রোড প্রজেক্ট-এর অংশ হিসেবে তৈরি করা হচ্ছিল এই সুড়ঙ্গটি। এটি চালু হলে উত্তরকাশী থেকে যমুনোত্রী ধাম পর্যন্ত রাস্তার দূরত্ব ২৬ কিলোমিটার কমে যেত।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোর চারটে নাগাদ সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা টানেলটির ১৫০ মিটার লম্বা একটি অংশ আচমকাই পুরো ধসে পড়ে। ঘটনার খবর পেয়ে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা সেখানে হাজির হন। উপস্থিত হন উত্তরকাশী জেলার সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ অর্পণ যদুবংশী। দুর্ঘটনা ঘটার অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা।
অন্তত ৪০ জন শ্রমিক ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে রয়েছেন। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল সূত্রে জানা গেছে, টানেলের মুখ পরিষ্কার করতে গেলে ২০০ মিটার পর্যন্ত কংক্রিটের স্ল্যাব সরাতে হবে আগে। একটি সরু জায়গা বের করে সেখান দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে ধ্বংসস্তূপের ভিতর অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি জানিয়েছেন, ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকেই উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তিনি। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ছাড়াও জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর একটি দলও পৌঁছে গেছে দুর্ঘটনাস্থলে।
এখনও পর্যন্ত কোনও শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দুর্ঘটনার পর কেটে গিয়েছে ৩০ ঘন্টা। এখনও উত্তর কাশীর সুড়ঙ্গে শ্রমিকেরা আটকে রয়েছেন। রবিবার দিনভর উদ্ধারকাজের পর সোমবার ১৩ নভেম্বর সকালেও শ্রমিকদের বের করে আনার কাজ চলছে। সুড়ঙ্গের ভিতরে পাইপ দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।
উত্তরাখণ্ডের রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মী দুর্গেশ রাঠোদি জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তুপের মধ্যে দিয়েই প্রতিনিয়ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। পাহাড় থেকে নতুন করে ধস নামায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। সুড়ঙ্গের একটি অংশ ভেঙে পড়া পাথর, সিমেন্টের চাঁইয়ে সম্পূর্ণ আটকে রয়েছে। আর ওই অংশেই শ্রমিকেরা আটকে আছেন বলে আশঙ্কা উদ্ধারকারী দলের। স্টেট ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্স (এসডিআরএফ)-এর তরফে জানানো হয়েছে, আটকে পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, এখনও পর্যন্ত তাদের কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।
পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দল সূত্রে জানা গিয়েছে, টানেলের মুখ পরিষ্কার করতে গেলে ২০০ মিটার পর্যন্ত আগে কংক্রিটের স্ল্যাব সরাতে হবে। সুড়ঙ্গের মুখ পাথরে আটকে গিয়েছে। কিন্তু সেই পাথর সরাতে গেলে ফের উপর থেকে পাথর গড়িয়ে পড়ছে। ফলে রবিবার সারা রাত উদ্ধারকাজ চললেও এখনও শ্রমিককদের বের করে আনা সম্ভব হয়নি।তবে দুর্ঘটনার কারণ কী, তা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে।