ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণ ভয়ঙ্কর মাত্রায় বেড়ে গেছে। বাতাসের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ও গ্রিন হাউস গ্যাস শরীরে ঢুকে ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি করছে। দিল্লির প্রবল দূষণ সেখানকার বাসিন্দাদের ক্যান্সারের কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এইমস)।
এইমস-এর চিকিৎসক পীযূষ রঞ্জন বলেছেন, দূষিত বাতাস ক্যান্সার, ব্রেন স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে যারা সিগারেট খান, তাদের ক্ষতি বেশি। প্রায় ৭০০০ রকম রাসায়নিক, ধোঁয়ার মাধ্যমে তাদের শরীরে ঢোকে। তার মধ্যে থাকে বেনজিন এবং অ্যালডিহাইডস। এই দু’টি পদার্থই ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
ডা: রঞ্জন জানাচ্ছেন, দূষিত বায়ুতে নানা ধরনের ধূলিকণা থাকে, যা ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। কারখানা ও বিভিন্ন গাড়িতে ব্যবহৃত হওয়া জ্বালানির অংশ শ্বাসের সঙ্গে গিয়ে ঢোকে শরীরে। এরই পাশাপাশি থাকে কাঠের উনুন জ্বালানো কিংবা গাছ পোড়ানোর জেরে তৈরি হওয়া দূষণ। আর এখন পাঞ্জাব, হরিয়াণা থেকে খড়কুটো, ফসল পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়া এসে ধোঁয়াশা তৈরি করছে দিল্লির আকাশে। যানবাহনের ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়ার সঙ্গেই মিশছে ফসল পোড়ানোর বিষাক্ত ধোঁয়া। সব মিলিয়ে বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা বাড়ছে। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, নানারকম রাসায়নিক কণার সঙ্গে মিশে লাগাতার শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকছে ও ফুসফুসে গিয়ে জমা হচ্ছে। এইসব সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণা, যাদের অ্যারোসল বলা হয়, তাদের আলাদা করে দেখতে পাওয়া যায় না। এই অ্যারোসল-ই ক্যান্সারের অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছেন এইমস-এর এই চিকিৎসক।
সর্দি-কাশি-শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে অ্যালার্জি, এমনকি হৃদরোগেরও অন্যতম কারণ দূষণ। বায়ুদূষণের মারাত্মক প্রভাব পড়ে মস্তিষ্কে, পাশাপাশি হৃদরোগের সম্ভাবনা বাড়াতে পারে দূষণ। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ বাড়লে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস-এর গতি বেড়ে যায়। রক্তবাহী ধমনীতে চর্বি জমে এই রোগ হয়। হার্টের ধমনীতে প্লাক বা কোলেস্টরলের স্তর জমতে থাকে। হার্ট অ্যাটাকের এটিও বড় কারণ।
দূষণ এই রোগের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। তাছাড়া হৃদস্পন্দনের ছন্দ বদলে দিতে পারে দূষণ। বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণা শরীরে ঢুকতে থাকলে হার্টরেট বেড়ে যেতে পারে।
দূষিত পরিবেশে বেশিদিন থাকলে ১০০ জনের মধ্যে ৩ জনেরই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। বাতাসে ভাসমান পার্টিকুলেট ম্যাটার (পিএম বা সূক্ষ্ম ভাসমান কণা) হার্টের সমস্যার অন্যতম কারণ। পিএম ছাড়াও দূষিত বাতাসে থাকে নাইট্রোজেন, সালফার ও কার্বন মনোক্সাইড। এগুলির প্রভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে থাকে। সাম্প্রতিক বহু গবেষণায় উঠে এসেছে, বায়ুদূষণের ফলে ক্যান্সার, হৃদরোগ এমনকি অবসাদও বাড়তে পারে। বায়ুদূষণের মাত্রা যদি প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম কমানো যায়, তা হলে শ্বাসরোগ, হৃদরোগের মাত্রা তিন শতাংশ কমতে পারে।