কৃত্রিম মেঘ তৈরিতে ভারতের আইআইটি কানপুরের নজিরবিহীন সাফল্য, দিল্লির দূষণ সামলাতে নামাবেন বৃষ্টি

কৃত্রিম মেঘ তৈরি করার পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ক্লাউড সিডিং’।

কৃত্রিম মেঘ থেকে বৃষ্টি নামানোর গবেষণায় বড় সাফল্য পেয়েছেন ভারতের আইআইটি কানপুরের গবেষকরা। সে জন্য প্রায় বছর ছয়েক সময় লেগেছে তাদের।

কৃত্রিম মেঘ তৈরি করা বা রোপন করার পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় বলা হয় ‘ক্লাউড সিডিং’। যেভাবে ফসলের বীজ বপন করা হয়, তেমন ভাবেই আকাশে মেঘের বীজ বপন করা হয়।

বাতাসে যে সামান্য পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকে তা এই মেঘে ছড়ানো রাসায়নিক কণার চারপাশে ঘণীভূত হয়ে ছোট ছোট বরফ দানা তৈরি করে। তারপর যেভাবে মেঘ থেকে বৃষ্টি হয় তেমনভাবেই এই বরফ দানা বাতাসের সংস্পর্ষে এসে ঘণীভূত হয়ে বৃষ্টির আকারে নেমে আসে। এই পদ্ধতিকে ‘নিউক্লিয়েশন’ বলা হয়।

এবার ভারতের দিল্লি শহরের মারাত্মক বেড়ে যাওয়া বায়ুদূষণ প্রতিরোধে কানপুর আইআইটি-র গবেষকরা এই কৃত্রিম বৃষ্টি নামাবেন রাজধানীতে।
দিল্লিতে বাতাসের গুণগত মান, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের গ্রাফ ক্রমেই নিম্নমুখী। ধোঁয়াশায় বিপর্যস্ত দিল্লিবাসী। ধোঁয়াশার কারণে সারাদিন সূর্য প্রায় দেখাই যায় না।
দিল্লির বাতাসে যানবাহনের ধোঁয়া আর ফসলের গোড়া পোড়ানোর ধোঁয়ায় বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা আর গ্রিন হাউস গ্যাসের মাত্রা সবসময়েই বেশি থাকে। শীতের মুখে তা বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। তখন বাতাসের অ্যারোসল, কুয়াশা, ফসল পোড়া ছাই আর গ্রিন হাউস গ্যাসের সঙ্গে মিলে ঘন কালো ধোঁয়াশা তৈরি করে।
চলতি বছরে এই ধোঁয়াশা শীতের শুরুতেই সাঙ্ঘাতিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের এলাকায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) যথাক্রমে ৪৩৮, ৪৯১, ৪৮৬ ও ৪৭৩। একমাত্র অঝোর বৃষ্টিই পারে এই ধূলিকণা ভরা দূষিত মেঘকে সরিয়ে দিতে। অসময়ের বৃষ্টি নামাতে একমাত্র ভরসা কৃত্রিম মেঘ, অর্থাৎ যে মেঘকে গবেষকরা বিশেষ উপায় তৈরি করেছেন।

এই দূষণের মেঘ সরানোর জন্যই বৃষ্টি নামানোর পরিকল্পনা করছেন বিজ্ঞানীরা। বর্ষাকাল বিদায় নিয়েছে। তাই এখন বৃষ্টি নামাতে হলে কৃত্রিম মেঘ তৈরি করতে হবে। আইআইটি কানপুরের গবেষকরা এই কৃত্রিম মেঘ থেকেই অকাল বৃষ্টি নামাবেন দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকাগুলিতে।

আগামী ২০-২১ নভেম্বর দিল্লিতে এই কৃত্রিম বৃষ্টি নামানো হতে পারে বলে জানা গেছে। আকাশে মেঘ ছড়ানোর জন্য বিমান বা রকেট ব্যবহার করতে পারেন গবেষকরা। ইতিমধ্যেই আইআইটি কানপুরের ক্যাম্পাসে ৫,০০০ ফুট উঁচুতে বিমান উড়িয়ে মেঘের উপর রাসায়নিক ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে মেঘের স্তরকে আরও ঘন করা যায়। কৃত্রিম ভাবে বৃষ্টির জন্য যে ধরনের মেঘের সাহায্য নেওয়া হয়, সেগুলিকে পরিবাহী মেঘ বলা হয়। যে যে এলাকায় দূষণের মাত্রা বেশি সেখানে গিয়েই এই মেঘ ছড়িয়ে আসা হবে। বিশেষ বিমানে করে কৃত্রিম মেঘ দিল্লির আকাশে ছড়াবেন গবেষকরা। তাদের আশা, এই কৃত্রিম মেঘ থেকেই স্বস্তির বৃষ্টি নেমে রাজধানীর আকাশকে দূষণ-মুক্ত করবে।