ভারতের মহারাষ্ট্রে শিক্ষা ও চাকরিতে আসন সংরক্ষণের দাবিতে মারাঠাদের আন্দোলনে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

ভারতের মহারাষ্ট্রে আন্দোলনকারীদের রাস্তা, রেল অবরোধের জেরে অচল হয়ে পড়েছে রাজ্যের একাধিক শহর।

মারাঠা জাতিগোষ্ঠীর সংরক্ষণের দাবিতে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে ভারতের মহারাষ্ট্র। আন্দোলনকারীদের রাস্তা, রেল অবরোধের জেরে অচল হয়ে পড়েছে ভারতের পশ্চিমের এই রাজ্যের একাধিক শহর। বেশ কিছু বাস আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। পুণেতে পুরসভার একটি অফিসে আগুন দেওয়া হয়। প্রবল চাপের মুখে বহু বিধায়ক ও সাংসদ ইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একাধিক দলের এমএলএ, এমপি আছেন। মহারাষ্ট্রে এই আন্দোলন ক্রমে রাজ্যস্থানে গুজ্জর, হরিয়ানায় জাঠ এবং গুজরাতে পাতিদার আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে এমন আশংকা করা হচ্ছে। গত এক দশকে ভারতের এই তিন রাজ্য বারবার সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল হয়েছে।

মহারাষ্ট্রে মারাঠাদের আন্দোলনের প্রধান নেতা মনোজ জেরঙ্গে পাটিল অনশনে অনড়। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তার সমর্থনে প্রচুর মিটিং-মিছিল চলছে সারা রাজ্য জুড়ে। মহারাষ্ট্র সরকার এখনও পর্যন্ত আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেননি।

আন্দোলনকারীদের দাবি, মারাঠাদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষায় ১৬ শতাংশ পদ বা আসন সংরক্ষণের সুবিধা দিতে হবে। প্রশাসনিক কর্তারা দফায় দফায় আলোচনা চালিয়েও আন্দোলন থামাতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ভারতের জাতীয় সঙ্গীতে ‘মারাঠা’ (পাঞ্জাব, সিন্ধু, গুজরাট, মারাঠা, দ্রাবিড়, উৎকল, বঙ্গ) একটি ভৌগোলিক এলাকা হিসাবে উল্লেখ করা হলেও মহারাষ্ট্রে তা আসলে একটি বিশেষ জাতি, যারা নিজেদের এই রাজ্যের আদি বাসিন্দা বলে মনে করেন। মহারাষ্ট্রের রাজ্যের জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ মারাঠারা হলেও, এই জাতি আর্থিক ও সামাজিকভাবে অত্যন্ত পশ্চাৎপদ। যদিও ভোটের রাজনীতিতে তাদের গুরুত্ব বরাবর বেশি। ভোটে সব দলই গড়ে ৪০ শতাংশ টিকিট মারাঠাদের দিয়ে থাকে। এই রাজ্যের এখনও পর্যন্ত কুড়িজন মুখ্যমন্ত্রীর ১২ জনই মারাঠা। তাদের অন্যতম বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিণ্ডে।

রাজনীতিতে গুরুত্ব পেলেও ওই সম্প্রদায়ের আর্থিক ও সামাজিক পশ্চাৎপদতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ করা হয়নি অভিযোগ করে বারে বারেই মারাঠারা আন্দোলন করেছে রাজ্যে। আটের দশকের শুরুতে আন্না সাহেব পাটিল নামে এক ব্যক্তি মারাঠাদের জন্য চাকরি, শিক্ষায় সংরক্ষণের দাবিতে টানা অনশন আন্দোলন করেন। সরকার দাবি না মানায় শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছিলেন তিনি। তার জন্য দিন পনেরোর জন্য অচল হয়ে গিয়েছিল রাজ্য।

সংরক্ষণ দেওয়া নিয়ে জটিলতার কথা বলা হলেও মহারাষ্ট্রে কোনও দলই মারাঠাদের দাবি অস্বীকার করেনি। ২০০৪ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এসএল খাত্রি-র কমিশন মারাঠাদের জন্য সরকারি চাকরি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৬ শতাংশ সংরক্ষণ দেওয়ার সুপারিশ করলেও তা কার্যকর করতে আরও দশ বছর কেটে যায়। ২০১৪-তে রাজ্যের কংগ্রেস সরকার ১৬ শতাংশ সংরক্ষণ কার্যকর করলেও বম্বে হাইকোর্ট তা বাতিল করে ১২ শতাংশ করে দেয়। পরে সংরক্ষণ ৫০ শতাংশের সীমা অতিক্রম করায় সুপ্রিম কোর্ট সংরক্ষণের আদেশটিই বাতিল করে দেয়।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও অবস্থাতেই মোট সংরক্ষণের সীমা ৫০ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অর্থাৎ যে জাতিকে যত শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধাই দেওয়া হোক না কেন, সাধারণ ক্যাটিগরির জন্য ৫০ শতাংশ পদ বা আসন বরাদ্দ রাখতে হবে। ফলে মহারাষ্ট্রে মারাঠা সংরক্ষণ এখনও পর্যন্ত কার্যকর হয়নি।