ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আরডি পদে নির্বাচিত সায়মা ওয়াজেদ

ডব্লিউএইচও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ। ১ নভেম্বর, ২০২৩।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার (এসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক (আরডি) হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ। নির্বাচনে তিনি ৮-২ ভোটে জয়ী হন।

বুধবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রার্থীদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে মনোনীত যথাক্রমে সায়মা ওয়াজেদ ও ড. শম্ভু প্রসাদ আচার্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক কমিটি আজ ভারতের নয়া দিল্লিতে তাদের ৭৬তম অধিবেশনে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পরবর্তী আঞ্চলিক পরিচালক মনোনীত করতে ভোট দিয়েছেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও স্বাস্থ্য সচিব।

সায়মা ওয়াজেদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স (আগে টুইটার) অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমাকে পরবর্তী আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে বেছে নেওয়ার জন্য —ডঐঙঝঊঅজঙ সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে ধন্যবাদ!’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি বিদায়ী আরডি ড. পুনম ক্ষেত্রপাল সিংকে আমাদের অঞ্চলের জনস্বাস্থ্যের জন্য এক দশক ধরে সেবা দেওয়ায় শ্রদ্ধা জানাতে চাই । একই সঙ্গে এই পদের জন্য মনোনয়ন পাওয়া ড. আচার্যের জন্যও বিশেষ শ্রদ্ধা। তার দীর্ঘ ও সফল কর্মজীবনে তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। আমি আশা করি আমাদের অঞ্চল তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হবে।’

সায়মা বলেন, ‘আরও স্বাস্থ্যকর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গড়ে তুলতে আমি প্রস্তুত ।’

এরপর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ২০২৪ সালের ২২ থেকে ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী বোর্ডের ১৫৪তম অধিবেশনে নিয়োগের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে ।

নবনিযুক্ত আঞ্চলিক পরিচালক ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন এবং তিনি পুনরায় একবার নিয়োগের সুযোগ পাবেন।

সায়মা ওয়াজেদের উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে রয়েছে ৩টি আন্তর্জাতিক রেজুলেশনের খসড়া তৈরি করা, যেগুলো পরে জাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলো গ্রহণ করেছে। সেগুলো হলো:

- ২০১৪ সালে ডব্লিউএইচও ৬৭ দশমিক ৮ (কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটেড এফর্টস ফর দ্য ম্যানেজমেন্ট অব অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডার)

- ২০১২ সালে ডব্লিউএইচও-আরসি: সিইএ/আরসি৬৫/আর৮ (কম্প্রিহেনসিভ অ্যান্ড কো-অর্ডিনেটেড এফর্টস ফর দ্য ম্যানেজমেন্ট অব অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅ্যাবিলিটিস)

- ২০১২ সালে ইউএনজিএ: ৬৭/৮২ (অ্যাড্রেসিং দ্য সোশিওইকোনমিক নিডস অব ইনডিভিজুয়ালস, ফ্যামিলিস অ্যান্ড সোসাইটিস অ্যাফেক্টেড বাই অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅর্ডারস, ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারস অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটেড ডিজঅ্যাবিলিটিস)

সায়মা ওয়াজেদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটিতে অর্গানাইজেশনাল লিডারশিপ বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করছেন। তিনি ২০১৯ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকের উপদেষ্টা এবং ২০১৪ সাল থেকে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা প্যানেলের সদস্য।

২০২৩ সালের আগস্টে তিনি চ্যাথাম হাউসে গ্লোবাল হেলথ প্রোগ্রামে সহযোগী ফেলো হিসেবে নিযুক্ত হন, যেখানে তিনি ২০২২ সাল থেকে কমিশন ফর ইউনিভার্সাল হেলথের কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

২০২০ সাল থেকে তিনি ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের জন্য ভালনারেবিলিটির থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অটিজমের জন্য ডব্লিউএইচও এসইএআরও’র শুভেচ্ছা দূত হিসেবে নিযুক্ত হন ।

বাংলাদেশে তিনি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য কৌশলগত পরিকল্পনা ২০২০-২০২৫ এর প্রধান উপদেষ্টা এবং ২০১২ সাল থেকে অটিজম ও এনডিডি সম্পর্কিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি ইউনিভার্সিটির অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ভিজিটিং স্পেশালিস্ট এবং ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথের ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ডব্লিউএইচও এসইএআরও কর্তৃক জনস্বাস্থ্যে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য একটি সাইটেশন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিশিষ্ট অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেমা কোলাইনু কর্তৃক আন্তর্জাতিক চ্যাম্পিয়ন পুরস্কার এবং কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গ্লোবাল মেন্টাল হেলথে উদ্ভাবনী (নারী) নেতা হিসেবে তালিকাভুক্ত।