২০১৪ সালে ভারতের ঘটনা। সাত মাসের গর্ভবতী অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে বাইকে করে যাচ্ছিলেন চল্লিশ বছরের এক মহিলা। আচমকাই সেই বাইকে ধাক্কা মারে লাগামহীন গতিতে উল্টোদিক থেকে ছুটে আসা একটি গাড়ি। দুর্ঘটনায় সেই মহিলা হারান তার স্বামীকে। তার গর্ভেই মৃত্যু হয় অনাগত সন্তানেরও। সেই ঘটনার ৯ বছর পর গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যুর দায়ে তরুণীকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিল আদালত।
বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত ছিলেন মুম্বইয়ের গোরেগাঁওয়ের বাসিন্দা এই দম্পতি। গোরেগাঁওতে বাইক দুর্ঘটনায় ২০১৪ সালে এই তরুণীর স্বামীর মৃত্যু হয়। নষ্ট হয়ে যায় গর্ভস্থ ভ্রূণও। পরে, দুর্ঘটনায় স্বামীর মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণও পেয়েছিলেন। আর সেই ঘটনার ৯ বছর পর গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যুর জন্য ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মুম্বইয়ের বিশেষ আদালত। যে ভ্রমণ সংস্থার গাড়িটি বাইকে ধাক্কা মেরছিল সেই সংস্থাকেই দিতে হবে ক্ষতিপূরণ।
নিয়ম অনুযায়ী দুর্ঘটনায় কারও মৃত্যুর প্রেক্ষিতে সমস্ত ক্ষতিপূরণই পেয়েছিলেন ওই তরুণী। কিন্তু ভ্রূণ যেহেতু গর্ভস্থ, তাই তার দায় কার উপর বর্তায়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনও ধারণা কারও ছিল না। তাই তা নিয়ে মামলা গড়ায়। আর ভ্রূণের মূল্য মানুষের জীবনের থেকে কোনও অংশে কম নয়। তাই সাত মাসের ভ্রূণটির মূল্যও জীবন্ত মানুষেরই সমান বলেই সংশ্লিষ্ট মামলাটিতে মত পোষণ করে আদালত।
মুম্বাইয়ের বিশেষ আদালত জানিয়েছে, পথ দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হলে বা কোনও ক্ষতি হলে তার আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সংবিধানে রয়েছে। কিন্তু মোটর ভেহিক্যাল অ্যাক্ট-এর ১৬৬ নম্বর ধারায় ভ্রূণের ক্ষয়ক্ষতির কোনও উল্লেখ নেই। সন্তানধারণের ২০ সপ্তাহ থেকেই অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা ভ্রূণের নড়াচড়া অনুভব করতে পারেন। প্রসবকালের প্রায় শেষ মুহূর্তে এসে এমন ঘটনার জন্য ওই মহিলাকে মানসিকভাবেও যথেষ্ট খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি।
সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েক মাস আগে স্বামী ও গর্ভস্থ সন্তানকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তরুণী। ঘটনার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও তিনি পুরোপুরি মানসিকভাবে সুস্থ হননি। রয়েছে শারীরিক অসুস্থতাও। যদিও আর্থিক ক্ষতিপূরণ গোটা ঘটনার ক্ষত সারাতে পারে না। কিন্তু তরুণীর বাকি জীবন কাটানোর জন্য প্রয়োজন অর্থের। তাছাড়া তার চিকিৎসার জন্যও বহু টাকা ব্যয় হয়েছে। সব দিক বিচার করেই আদালত তাকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে।