বাংলাদেশে শনিবার (২৮ অক্টোবর) সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডনাল্ড লু। শনিবারের রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় ভয়েস অফ আমেরিকাকে পাঠানো এক বার্তায় ডনাল্ড লু আরও বলেছেন, সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সকল সহিংসতার ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করবে।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে পাঠানো বার্তায় ডনাল্ড লু বলেন, "যুক্তরাষ্ট্র ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে সংঘটিত রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছে। একজন পুলিশ অফিসার ও একজন রাজনৈতিক কর্মীর নিহত হওয়া ও একটি হাসপাতালে আগুন দেয়ার, যে ঘটনাগুলোর খবর জানা গেছে তা গ্রহণযোগ্য নয়, যেমন নয় সাংবাদিকসহ নাগরিকদের ওপর চালানো সহিংসতা। আমরা সব পক্ষকে শান্ত থাকার ও সংযম দেখানোর আহবান জানাই। সম্ভাব্য ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্রে আমরা সকল সহিংসতার ঘটনাগুলোকে পর্যালোচনা করবো।"
শনিবারের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনা
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল, কাকরাইল ও নয়াপল্টন এলাকায় শনিবার (২৮ অক্টোবর) পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ পুলিশ আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহত পুলিশ সদস্যের পরিচয় জানা যায়নি।
ওদিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের গুলিতে শামীম মোল্লা নামের একজন যুবদল নেতা নিহত হয়েছেন।
সংঘর্ষ, ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির শনিবারের (২৮ অক্টোবর) মহাসমাবেশ কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার (২৯ অক্টোবর) সারাদেশে হরতাল আহবান করেছে বিএনপি। বিএনপি অভিযোগ করেছে যে আ্ওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশ যৌথভাবে তাদের সমাবেশে হামলা করেছে। পুলিশ বলেছে, বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইট-পাটকেল নিক্ষেপকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিভিন্ন অলিগলি ও রাস্তায় ক্রমাগত রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়তে দেখা যায় পুলিশকে। তখন বিজয়নগর থেকে কাকরাইল পর্যন্ত এলাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে, সমাবেশে যোগ দিতে, বিএনপির নয়াপল্টনের কেনদীয় কার্যালয়ের সামনে হাজার হাজার মানুষ সমেবেত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের ঘোষণা: বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র
২৪ মে, ২০২৩-এ বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের লক্ষ্যে নতুন ভিসা নীতির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ভিসা নীতির ঘোষণা দিতে গিয়ে এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, "...আমি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করা্র উদ্দেশ্যে অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ২১২ (এ) (৩) (সি) (‘৩সি’) ধারার অধীনে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এই নীতির অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যেকোনো বাংলাদেশি ব্যক্তির জন্য ভিসা প্রদান সীমিত করবে। এর মধ্যে বর্তমান ও প্রাক্তন বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র মে মাসের ৩ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এমন কর্মের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার ব্যবহার, জনগণকে তাদের সংগঠনের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত রাখা এবং রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, বা মিডিয়াকে তাদের মতামত প্রচার থেকে প্রতিরোধ করার লক্ষ্যে যেকোনো রকম ব্যবস্থার ব্যবহার”।
ওই বিবৃতিতে তিনি বলেন, “অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব সকলের- ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ এবং মিডিয়ার। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে যারা চায় তাদের সকলকে আমাদের সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি”।
ভিসা বিধিনিষেধ "থ্রি সি"
বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের মুখপাত্র ব্রায়ান শিলার ভয়েস অফ আমেরিকাকে “থ্রি সি”'র ব্যাখ্যা দিয়েছেন এইভাবে, "“থ্রি সি” নামক ভিসা বিধিনিষেধ নীতি গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ণ করছে এমন যেকোন ব্যক্তির ওপর এই ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে। এখানে গুরুত্বপূর্ণ শব্দটি হলো "যেকোন ব্যক্তি"। এমন ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে।"
সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রথম পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩) এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বাংলাদেশিদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, “শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে সমর্থন করতেই এ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে আগ্রহীদের সমর্থন করতে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত অঙ্গীকারের অংশ এটি।”
মিলার জানান, “এর মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা, বিরোধী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন।”
এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ইউএনবি থেকে নেওয়া হয়েছে।