ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নির্বাচনের ২৮ বছর পর প্রাপ্য চাকরি পেলেন আবেদনকারী

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভবন।

ভারতের শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে নির্বাচনের ২৮ বছর পর প্রাপ্য চাকরি পেলেন ভারতের এক ব্যক্তি। অঙ্কুর গুপ্তা নামে এই ব্যক্তি ১৯৯৫ সালে পোস্টাল বিভাগে চাকরির জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। ২৮ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপে অবশেষে সেই চাকরি পেলেন তিনি।

১৯৯৫ সালে পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদের জন্য আবেদন করেছিলেন অঙ্কুর। প্রি-এডুকেশন প্রশিক্ষণের জন্য তিনি নির্বাচিত হলেও পরে মেরিট লিস্ট থেকে তার নাম বাদ পড়ে। কর্তৃপক্ষ জানায়, তিনি ভোকেশনাল স্ট্রিম মারফত ইন্টারমিডিয়েট স্তরের পড়াশোনা শেষ করেছেন, যা এই পদে আবেদনের জন্য বৈধ নয়।

এই ঘটনার পরেই সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল-এর দ্বারস্থ হয়েছিলেন অঙ্কুর সহ অন্যান্য অসফল চাকরিপ্রার্থীরা। ১৯৯৯ সালে সেই ট্রাইব্যুনাল অঙ্কুরদের পক্ষেই রায় দেয়। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল-এর সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ২০০০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট। ১৭ বছর মামলা চলার পর পোস্টাল বিভাগের দাখিল করা সেই পিটিশন বাতিল করে দেয় হাইকোর্ট। এরপর রিভিউ পিটিশন দাখিল করা হলে চার বছর পর সেটিও খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ উচ্চ আদালত। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় পোস্টাল ডিপার্টমেন্ট।

ভারতের শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং দীপঙ্কর দত্তের একটি বেঞ্চ জানিয়েছে, কোনও প্রার্থী নিয়োগের অধিকার দাবি করতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু একবার মেধা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে তার ন্যায্য আচরণ পাওয়ার কিছু অধিকার রয়েছে। "যদি তার প্রার্থীপদ খারিজ না করে দেওয়া হয় এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে দেওয়া হয়, এবং শেষ পর্যন্ত মেধাতালিকায় তার নাম থাকলেই তিনি নিয়োগের অধিকার পেয়ে যাবেন না ঠিকই, কিন্তু এটাও ঠিক যে তার ন্যায্য এবং বৈষম্যহীন আচরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে," জানিয়েছে আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা উল্লেখ করে আরও জানিয়েছে, কোনও প্রার্থীকে এভাবে ইচ্ছেমতো তালিকায় নাম ওঠার পরেও বাদ দিয়ে দেওয়া যায় না। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, "যদি আবেদনকারীকে শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে বাদ দেওয়া হত তাহলে আলাদা কথা ছিল। কিন্তু এমনটা নয় যে তিনি অযোগ্য বলে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।" আদালত জানিয়েছে, "তার যোগ্যতা রয়েছে বলেই পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পর মেধা তালিকায় বেশ উপরের দিকে আবেদনকারীর নাম ছিল, তার ইন্টারভিউ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল, নির্বাচন প্রক্রিয়াতেও পাস করেছিলেন তিনি এবং তার পরেই ১৫ দিনের জন্য প্রশিক্ষণে পাঠানো হয়েছিল তাকে।"

সব কিছু বিবেচনা করে আদালত জানিয়েছে, অন্যায্যভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল আবেদনকারীকে। সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির এই বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, আগামী এক মাসের মধ্যে পোস্টাল অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে নিয়োগ করতে হবে অঙ্কুর গুপ্তাকে। যদি এই মুহূর্তে কোনও পদ শূন্য না থাকে, তাহলে তার জন্য অতিরিক্ত পদ তৈরি করে নিয়োগ দিতে হবে।

তবে আপাতত প্রবেশনার হিসেবে নিয়োগপত্র দেওয়া হবে তাকে। প্রবেশন পিরিয়ডের শেষে স্থায়ী কর্মী হিসেবে অঙ্কুরকে নিযুক্ত করার জন্য পোস্টাল বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। আর যদি কর্তৃপক্ষ মনে করে প্রবেশন পিরিয়ডের ওই কর্মীর কাজ সন্তোষজনক নয়, তাহলে আইন মেনেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

তবে সুপ্রিম কোর্ট এ কথাও জানিয়েছে, যেহেতু অঙ্কুর গুপ্তা এই ২৮ বছরে প্রকৃতপক্ষে কাজ করেননি, তাই এই সময়ের টাকা এরিয়ার হিসেবে প্রাপ্য নয় তার। এছাড়া ১৯৯৫ সালের ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বাকি যে প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের তুলনায় কোনও অংশেই 'সিনিয়ারিটি'র দাবি করতে পারবেন না অঙ্কুর।