সম্প্রতি এক দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করে ভারতের এলাহাবাদ হাইকোর্ট জানিয়েছে কোনও দাম্পত্যে যদি ভালবাসা না থাকে, পরস্পরের প্রতি আবেগ, অনুভূতি, এমনকী, ন্যূনতম সম্মানটুকুও অবশিষ্ট না থাকে এবং শুধুই ঘৃণা রয়ে যায়, এমন স্বামী-স্ত্রীকে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা নৃশংসতারই নামান্তর।
বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিং এবং অরুণ কুমার সিং দেসওয়াল তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন যে এমন দুজন মানুষকে একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা বিয়ের বন্ধন ভেঙে দেওয়ার চেয়েও সমাজের জন্য বেশি ক্ষতিকর।
ভারতে ২০১৯ সালে পারিবারিক আদালত এক ব্যক্তির বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তার বিয়ে হয়েছিল ২০০২ সালে। ২০১৬ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য একটি ডিক্রি পেয়েছিলেন। তবে তার স্ত্রী সেই ডিক্রি প্রত্যাহার করার জন্য আদালতে একটি আবেদন জমা দিয়েছিলেন যা অনুমোদিত হয়েছিল। এরপর পারিবারিক আদালতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয়। কিন্তু সেই আদালত ওই দম্পতিকে বিবাহ বিচ্ছেদের অনুমতি দেয়নি। তারপরেই পারিবারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যান স্বামী।
স্বামীর পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, ওই ব্যক্তির স্ত্রী, স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে গেলেও এই ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে তার মক্কেলকে প্রবল মানসিক যন্ত্রণার প্রতিদিন কাটাতে হচ্ছে বলে আদালতে জানান তিনি। মামলাকারীর আইনজীবী আরও জানান, ২০০৪ সাল থেকেই আলাদা থাকছিলেন ওই দম্পতি এবং এই আইনি লড়াইয়ের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর তাদের আবার একসঙ্গে থাকা কোনওভাবেই সম্ভব নয়।
এই মামলায় দু পক্ষের কথা শোনার পর আদালত জানিয়েছে, ওই ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ফৌজদারি মামলা দায়ের করা এবং ক্রমাগত আইনি বিরোধিতা করার মাধ্যমে যা যা করেছেন তা নিষ্ঠুরতাই নামান্তর।
এই মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের ২ বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, এখানে দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে এবং সম্পত্তি নিয়েও তাদের মধ্যে গুরুতর বিরোধ রয়েছে। তাছাড়া উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের অভিযোগ এনেছে। পরস্পরের প্রতি তীব্র ঘৃণা থাকা সত্ত্বেও তাদের একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছে। এটা নিষ্ঠুরতা, দাবি এলাহাবাদ হাইকোর্টের।
এলাহাবাদ হাইকোর্ট এই দম্পতির বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন মঞ্জুর করেছে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীকে তিন মাসের মধ্যে তার স্ত্রীকে ১ কোটি টাকা স্থায়ী খোরপোষ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। টাকা দিতে দেরি হলে, রায়দানের দিন থেকে শুরু করে যেদিন টাকা দেওয়া হবে সেই দিন পর্যন্ত ওই ১ কোটি টাকার উপর বার্ষিক ৬ শতাংশ হারে সুদ আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছে আদালত।