ভারতের চন্দ্রযান-৩ মিশন সফল হওয়ার পরে এবার ভারতের পরবর্তী লক্ষ্য চাঁদে মানুষ পাঠানো। প্রথম কোনও ভারতীয়ের পা পড়বে চাঁদের মাটিতে, এই লক্ষ্য নিয়েই চন্দ্রযানের পরবর্তী গগনযান মিশন নিয়ে তোড়জোড় চলছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-তে। সেই লক্ষ্য পূরণ সময় ও প্রস্তুতি সাপেক্ষ। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের মহাকাশ গবেষণা ও আগামী মহাকাশ অভিযানগুলো নিয়ে মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন ইসরো কর্তাদের সঙ্গে। মূলত গগনযান মিশনের নানা দিক নিয়ে আলোচনা হয় সেই মিটিংয়ে। সেই সঙ্গেই চাঁদে প্রথম ভারতীয় পাঠানো নিয়েও বড় ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে পাঠানো তথ্য অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী ভারতের মহাকাশ গবেষণার দুটি দিককে মূল লক্ষ্য করতে চাইছেন। এক, পৃথিবীর কক্ষে ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরি যা ২০৩৫ সালের মধ্যে তৈরি করে ফেলার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। দুই, ২০৪০ সালের মধ্যে প্রথম কোনও ভারতীয়কে চাঁদে পাঠানো।
সূত্রের খবর, চাঁদে মানুষ পাঠানোর জন্য সবরকম পরীক্ষানিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বস্তুত, গগনযান মিশনের আগে ২০টি টেস্ট ও তিনটি হিউম্যান রেটেড লঞ্চ ভেহিকল তৈরির পরিকল্পনা নিয়েও কথাবার্তা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস জানিয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে এই মিশনকে বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে বলা হয়েছে।
ইসরো-র গগনযান মিশন হল স্পেস স্টেশন তৈরির প্রথম ধাপ। গগনযানে নভশ্চররা মহাকাশ সফর করে গবেষণা করবেন, তারপর কাজ এগোবে ধাপে ধাপে। স্পেস স্টেশ্ন-এর ওজন হবে ২০ টনের মতো। ভেতরে প্রাথমিকভাবে তিনটে ঘর থাকবে। তিনজন নভশ্চরের থাকার মতো জায়গা থাকবে। নিজেদের স্পেস স্টেশনে বসেই বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারবেন মহাকাশচারীরা। প্রয়োজনে ১৫-২০ দিন টানা থাকতে পারবেন। ইসরো-র পরিকল্পনা ছিল, গগনযান মিশন সফল হলে ২০৩৫ সালের মধ্যেই স্পেস স্টেশন বানানোর কাজ সম্পূর্ণ করা যাবে।
পৃথিবীর কক্ষে কোন জায়গায় স্পেস স্টেশন বসবে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সঙ্গে যেন দূরত্ব থাকে, সেসব দেখে তবেই কাজ শুরু হবে। এর জন্য ইসরো ঠিক করেছে, দুটি রকেটকে আগে পাঠিয়ে হাল হকিকত জেনে নেওয়া হবে। পিএসএলভি রকেটে চাপিয়ে দুটি উপগ্রহ যাবে মহাকাশে। পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে স্পেস স্টেশন বানানোর জায়গা বের করে ফেলবে তারা। এর পর শুরু হবে তা বানানোর প্রক্রিয়া।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) রয়েছে পৃথিবী থেকে ৩৭০ কিলোমিটার উপরে। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা (NASA), রাশিয়ার রসকসমস (Roscosmos), জাপানের জাক্সা (JAXA), ইউরোপের ইসএ (ESA) এবং কানাডার সিএসএ (CSA)— এই পাঁচটি মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের সম্মিলিত চেষ্টায় ১৯৯৮-২০১১ সালের মধ্যে গড়ে উঠেছিল আইএসএস। ভারতের স্পেস স্টেশন তৈরিতেও সাহায্য করবে নাসা। মহাকাশ গবেষণায় এখনই জোট বেঁধেছে নাসা ও ইসরো। আগামী দিনে আরও বৃহত্তর পরিকল্পনা আছে তাদের।