মঙ্গলবার ১৭ অক্টোবর ভারতে বিবাহের সমতা, যা সমলিঙ্গের বিবাহ মামলা হিসাবেই বহুল আলোচিত হয়েছে, তার এক ঐতিহাসিক রায়ে দেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়ে দিলেন, প্রতিটি ব্যক্তিরই বিয়ে করার অধিকার রয়েছে। কারও যৌন রুচি বা সত্ত্বার ভিত্তিতে বৈষম্য করা যায় না। রাষ্ট্র কারও যৌন সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রণও করতে পারে না। শুধু তাই নয়, সমকামী দম্পতির সন্তান দত্তকের অধিকারকেও সমর্থন জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। কারণ, শীর্ষ আদালতের মতে, বিষমকামী দম্পতির তুলনায় সমকামী দম্পত্তি সন্তানের প্রতি কম যত্নশীল এমন কোনও প্রমাণ নেই।
এদিনের রায় ঘোষণা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, আইনসভার বিষয়ে আদালত হস্তক্ষেপ করবে না। সমকামী বিয়ের অধিকার দেওয়ার ব্যাপারে স্পেশাল ম্যারেজ আইনে কোনও পরিবর্তন করা জরুরি কিনা তা আইনসভা স্থির করবে। একই সঙ্গে সরকারকে নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, কেন্দ্র একটা কমিটি গঠন করে সমকামী যুগলের প্রয়োজনীয়তার সবদিক বিচার করুক। তাদের রেশন কার্ড, পেনশন, গ্র্যাচুইটি, উত্তরাধিকারের বিষয়টি কেন্দ্রকে নির্ধারণ করতে হবে।
সমলিঙ্গ বিয়েকে বৈধতা দেওয়ার মামলায় সংবিধান বেঞ্চ গঠন করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জয় কউল, বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি পিএস নরসিংহকে নিয়ে গঠিত সেই সংবিধান বেঞ্চ মঙ্গলবার জানিয়ে দেয়, বিয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা স্থবির নয়। কোনও মানুষের লিঙ্গ ও তার যৌন রুচি ভিন্ন হতেই পারে। কিন্তু তার মানে তার সমকামী বিয়ে বা একজন রূপান্তরকামীর একজন মহিলাকে বিয়ে করার অধিকার থাকবে না। যৌন সত্ত্বার ভিত্তিতে রাষ্ট্র কোনও বৈষম্য করতে পারে না। সেই মৌলিক অধিকার না দেওয়া হলে সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ বৈষম্যের শিকার হবেন।
টানা দশ দিন ধরে দীর্ঘ শুনানির পর গত ১১ মে সমলিঙ্গ বিয়ে নিয়ে রায় ঘোষণা সংরক্ষিত রেখেছিল শীর্ষ আদালত। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টে শুনানির সময়ে সমকামী সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছিলেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি, রাজু রামচন্দ্রণ, আনন্দ গ্রোভার, গীতা সুথরা, কেভি বিশ্বনাথন, সৌরভ কৃপাল ও মানেকা গুরুস্বামী। তাদের বক্তব্য ছিল, বিসমকামীদের যেমন মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে, তেমনই এলজিবিটিকিউআইএ+ গোষ্ঠীর মানুষদেরও সেই অধিকার এই দেশে থাকা উচিত। রাষ্ট্রের উচিত তা নিশ্চিত করা।
সমলিঙ্গ বিয়েতে আপত্তি করেছিল ভারতে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার। শীর্ষ আদালতে সরকারের আইনজীবীরা বলেছিলেন, কেবলমাত্র একজন পুরুষ ও একজন মহিলার মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্কের অধিকার ভারতীয় আইনে স্বীকৃত রয়েছে। তা খুব সুচিন্তিত ভাবেই করা হয়েছে। সমলিঙ্গ বিয়েকে বৈধতা দিতে গেলে অনেক আনুষঙ্গিক পদক্ষেপও করতে হবে। এরজন্য ক্যাবিনেট সচিবের অধীনে একটি কমিটিও গড়েছে কেন্দ্রের সরকার। এরপর সেই কমিটিকেই বাকি খুঁটিনাটি স্থির করতে হবে।