হামাসের হামলায় ২৯জন নাগরিকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করলো যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর

ইসরাইলে হামাসের হামলায় দেশটির ২৯জন নাগরিকের প্রাণহানির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শনিবার, ১৪ অক্টোবর জানিয়েছেন, "এখন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ২৯জন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিতভাবে জানাতে পারি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এবং তাদের সকলের পরিবারের প্রতি আমাদের গভীর সমবেদনা জানাই। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের কি অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বা মৃতদের পরিচয় সম্পর্কে আমরা এই সময়ে কিছু জানাবো না।"

মিলার আরো জানিয়েছেন, খবর পাওয়া যাচ্ছে না যুক্তরাষ্ট্রের এমন ১৫জন নাগরিক ও একজন পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট-এর ব্যাপারেও তারা অবগত আছেন। স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মীরা তাদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের খবর বের করার জন্য চব্বিশ ঘন্টা কাজ করছে। সেইসঙ্গে ইসরাইলের সাথে গোয়েন্দা তথ্য শেয়ার এবং পণবন্দীদের উদ্ধারের বিষয়ে ইসরায়েলি সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নানা অংশের বিশেষজ্ঞদের মোতায়েন করা সহ জিম্মি সঙ্কটের প্রতিটি দিক নিয়ে ইসরাইলের সরকারের সাথে কাজ করছে তার দেশের সরকার। গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিরাপত্তার কারণে আর কোন মন্তব্য করবেন না বলেও জানান মিলার।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের অনুমান, ১ লাখ ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার আমেরিকান ইসরাইলে রয়েছেন, পর্যটক বা অন্য কোনো কাজের কারণে অবস্থান করছেন।আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ আমেরিকান নাগরিক গাজায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ত্রাণ কর্মী হিসেবে কাজ করছেন বা আত্মীয়দের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছেন।

মঙ্গলবার, ১০ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরাইলের ওপর জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

সেদিন বক্তব্যের আগে বাইডেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে আলোচনা করেন। হামলার পরে ইসরাইলকে সমর্থন করার জন্য বাইডেন এবং তার অন্যান্য সহযোগীরা যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছিলেন সেগুলোর কথা নেতানিয়াহুকে জানান তিনি। বাইডেন নিরাপরাধ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর জঙ্গি হামলাকে "অসুস্থ" কার্যক্রম বলে অভিহিত করেন।

হামাস আক্রমণ শুরু করার পর থেকে বাইডেন তার মন্তব্য এবং বিবৃতিতে বারবার হামাসের হামলার ব্যাপকতা এবং বর্বরতার বিষয়ে তার বেদনার কথা বলেছেন। স্থল, সমুদ্র এবং আকাশপথে হামাসের হামলা ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাদের হতবাক করেছে। এই হামলায় শত শত ইসরাইলি নিহত হয়েছে এবং আরও অনেক ইসরাইলি আহত হয়েছে।

সোমবার, ৯ অক্টোবর হোয়াইট হাউজ নিশ্চিত করেছে, তারা ইতোমধ্যে ইসরাইলকে অতিপ্রয়োজনীয় যুদ্ধাস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করা শুরু করেছে। তারা আরও জানায়, পেন্টাগন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার মিত্রকে দ্রুত আরও কী প্রেরণ করা যেতে পারে দেখার জন্য তাদের তালিকা পর্যালোচনা করছে। ইসরাইল চাইলে যাতে তাদের বিমান সহায়তা বা দূরপাল্লার বিকল্প অস্ত্র সরবরাহ করা যায় সেজন্য রণতরী ফোর্ড ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপটি পূর্ব ভূমধ্যসাগরে পৌঁছেছে।

গত সপ্তাহে ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ও গ্রামগুলোতে হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে ১,৩০০ ইসরাইলিকে হত্যা এবং বহু মানুষকে জিম্মি করে হত্যা করে। এরপর ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী হামাসকে নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করে এবং শুক্রবার ভোরে নিশ্চিত করে, তারা গাজা শহরের বাসিন্দাদের "নিজেদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার জন্য" সেখান থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে তাদের অবহিত করেছে।

গত ৭ অক্টোবর হামাস আকস্মিক হামলা শুরু করার পর থেকে এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৩,২০০ জন প্রাণ হারিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপান ও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।