আগামী কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তান সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় উষ্ণায়ণের চরম প্রভাবের আশঙ্কা আবহাওয়াবিজ্ঞানীদের

আগামী কয়েক দশকে ভারত-পাকিস্তান সহ সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় উষ্ণায়ণের চরম প্রভাবের আশঙ্কা আবহাওয়াবিজ্ঞানীদের।

আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, আগামী কয়েক দশকে ভারতের একাধিক জায়গায় তাপপ্রবাহ এতটাই তীব্র হয়ে উঠবে যে কার্যত ধ্বংসের সম্মুখীন হবে নাগরিক জীবন। তাপমাত্রা সহনশীলতার সীমা ছাড়িয়ে যাবে। এক ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহের কবলে পড়বে ভারত-পাকিস্তান। ক্ষতিগ্রস্ত হবেন প্রায় ২২০ কোটি মানুষ।

ভারতের কিছু এলাকায় আগামী কয়েক বছরে তাপমাত্রা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছতে পারে যেখানে কোনও ভাবেই আর মানিয়ে নিতে পারবেন না মানুষ। পাশাপাশি, তীব্র খরা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে।

মাস দুয়েক আগে রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটির যৌথ রিপোর্টে উষ্ণায়নের কারণে দক্ষিণ এশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তাপপ্রবাহের আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, হর্ন অব আফ্রিকা তথা আফ্রিকার মূল মহাদেশীয় ভূখণ্ডের পূর্বতম অঞ্চল, সাহিল অঞ্চল (উত্তর আফ্রিকা এবং পশ্চিম এশিয়াকে নিয়ে গঠিত অঞ্চল) এবং দক্ষিণ ও পশ্চিম এশিয়ায় তাপপ্রবাহের প্রভাব পড়বে সবচেয়ে বেশি। এ বার দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশ ভারতকে নিয়ে একই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে। তাপপ্রবাহের রেশ পড়বে পাকিস্তানেও।

আবহাওয়াবিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্ব উষ্ণায়ণের জেরে জলবায়ু বদলই এর প্রধান কারণ। এমন দাবদাহের জন্য দায়ী যথেচ্ছ দূষণ, গাছ কেটে নগরোন্নায়ন ও অত্যধিক তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। ঋতুচক্র থেকে ছ'টি ঋতু যেন হারিয়ে গেছে।

২০২৪ সালে আবার এল নিনো-র ফিরে আসার সম্ভাবনা প্রবল। এর জেরেই নাকি পৃথিবীর তাপমাত্রা চূড়ান্ত বেড়ে যাবে। তীব্র তাপপ্রবাহ, মাটি ফেটে যাওয়া, জল শুকিয়ে যাওয়া, খরার প্রাদুর্ভাব দেখবে বিশ্ববাসী। প্রশান্ত মহাসাগরের চিলি ও পেরু উপকূল এবং মহাসাগরের মধ্যাঞ্চলে তৈরি হওয়া সেই এল নিনো-র জেরে এ বার বদলে যেতে পারে ভারতের বর্ষার মরসুম। উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যেতে পারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।

২০১৫ সালে এমন এল নিনো-র কব্জায় পড়েছিল ভারত। প্রচণ্ড খরায় শুকিয়ে গিয়েছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বহু এলাকা। সে বছর সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও কমে গিয়েছিল উল্লেখযোগ্য ভাবে। তার আগে ২০০৯ সালেও এল নিনো-র প্রভাবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কষ্ট পেতে হয়েছিল ভারতের অধিবাসীদের। পূর্ব ও মধ্য প্রশান্ত মহাসাগরে জন্মানো এল নিনো বড়সড় প্রভাব ফেলেছিল ভারতের বর্ষার মরশুমে। ২০০২ ও ২০০৪ সালের এল নিনো-র ততটা প্রভাব পড়েনি এ দেশে। তবে ২০২৪ সালে ফের এল নিনো-র সতর্কতা জারি হয়েছে।

চলতি বছরে যেমন উত্তপ্ত এপ্রিল দেখা গেছে, তাতে এল নিনো-র প্রভাব পড়ার আশঙ্কাই করা হচ্ছে। তবে খরা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাসের জন্য এল নিনো ছাড়াও অন্য অনেক কারণ রয়েছে। গাছ কেটে নগরোন্নয়ন খামখেয়ালি আবহাওয়ার অন্যতম কারণ। এই কারণেই পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান শহর কলকাতা এখন হিট-আইল্যান্ড-এ পরিণত হয়েছে।