ভারতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় পূর্ব ভারতের ওড়িশার পুরীতে জগন্নাথ মন্দির। সেই মন্দিরে এবার চালু হচ্ছে দর্শনার্থীদের জন্য ড্রেস কোড। সেই কোড অনুযায়ী পোশাক না পরলে কোনও ভক্তকেই আর দর্শনের অনুমতি দেওয়া হবে না। "মন্দির ধর্মীয় ভাবাবেগের জায়গা, এখানে বিনোদন চলবে না," এমনটাই জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
পুরীর মন্দিরে অশালীন পোশাক পরে দর্শনার্থীরা আসছেন, এমন অভিযোগ না কি উঠছিল বহুদিন ধরে। এই মন্দিরে সেবায়েতদের জন্য নির্দিষ্ট পোশাক বিধি আছে। এবার থেকে দর্শনার্থীদের জন্যও নির্দিষ্ট পোশাক বিধি চালু করল জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। জানা যাচ্ছে, আগামী ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই বিধি লাগু হতে চলেছে দর্শণার্থীদের উপর।
সোমবার ৯ অক্টোবর জগন্নাথ মন্দিরের নীতি আয়োগ সাব-কমিটির বৈঠর হয়। সেই বৈঠকেই পোশাক বিধি নিয়ে আলোচনা হয়। শ্রী জগন্নাথ মন্দির প্রশাসনের প্রধান রঞ্জন কুমার দাস বলেন, “মন্দিরের ঐতিহ্য ও পবিত্রতা বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যবশত, অনেকেই ধর্মীয় ভাবাবেগের তোয়াক্কা না করেই মন্দিরে প্রবেশ করেন। এমন পোশাক পরে মন্দিরে প্রবেশ করেন যা ‘অশালীন’, কোনও মন্দির বা ধর্মীয় স্থানে প্রবেশের উপযুক্ত নয়।”
মন্দির কমিটির প্রধান জানান, ‘অশালীন’ পোশাকের তালিকায় আছে ছেঁড়াফাটা জিন্স (টর্ন জিন্স), স্লিভলেস ড্রেস, শর্ট ড্রেস, বারমুডা বা মেয়েদের হাফপ্যান্টের মতো পোশাক। মন্দির কমিটি দেখেছে, সমুদ্র সৈকতে হাফ প্যান্ট বা বারমুড়া পরে ঘুরছেন যারা, তারা সেই পোশাকেই মন্দিরে ঢুকে পড়ছেন। রঞ্জনবাবুর মতে, "সৈকতে যতখুশি বিনোদন করুন, কিন্তু মন্দির হল ঈশ্বরের বাসস্থান, বিনোদনের জায়গা নয়।" সেজন্যই জগন্নাথ মন্দিরে প্রবেশের ক্ষেত্রে পোশাকবিধি চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পোশাকবিধি চালু করাই নয়, সেটি কার্যকর করার জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। দর্শনার্থীরা কেমন ধরনের পোশাক পরে আসছেন তার উপর নজরদারি রাখার জন্য, জগন্নাথ মন্দিরের ‘সিংহদুয়ারে’ নিরাপত্তারক্ষী এবং ভেতরে ‘প্রতিহারী’-তে সেবায়েত থাকবে। নতুন বছর থেকে পোশাকবিধি কার্যকর করা হলেও মঙ্গলবার ১০ অক্টোবর থেকেই এই বিষয়ে প্রচার শুরু হয়ে যাবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পুণ্যার্থী আসেন। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছু পুণ্যার্থী ধর্মীয় ভাবাবেগে গুরুত্ব না দিয়ে যেমন-তেমন পোশাক পরে দর্শনের জন্য উপস্থিত হচ্ছেন। ছেঁড়া জিন্স, হাতকাটা জামা, বারমুডা প্যান্ট পরে দর্শনের জন্য চলে আসতে দেখা গিয়েছে বহু পুণ্যার্থীকে। দেখে মনে হচ্ছে যেন সমুদ্রের পাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই অভ্যাসটাই বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে।