ভারতের উত্তর-পূর্বের জনজাতি দাঙ্গা বিধ্বস্ত মণিপুরে হত্যার ভিডিও ভাইরাল, পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে নয়

ভারতের মণিপুরের কংপোকপি এবং থৌবল জেলার সীমানায় আগুন লাগানোর ঘটনা। ৪ মে, ২০২৩।

ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর গত মে মাস থেকে কুকি ও মেইতেই - এই দুই জনজাতির রক্তক্ষয়ী দাঙ্গায় ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছে।

সারা দেশ শিউরে উঠেছিল সেখানে দুই মহিলার উপর সহিংসতার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায়। দেখা গেছিল, নগ্ন অবস্থায় হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দুই মহিলাকে। গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন তারা। গত জুলাই মাসে অগ্নিগর্ভ মণিপুরের এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল। উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ।

সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে মণিপুরের আরও এক হিংসার ভিডিও। এক ব্যক্তির গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে উন্মত্ত জনতা। সবচেয়ে তাৎপর্য্যপূর্ণ হল, গত ৪ মে যে দিন দুই কুকি মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ঘটনা ঘটেছিল, ওইদিনই কংপোকপি এবং থৌবল জেলার সীমানায় এই আগুন লাগানোর ঘটনাটি ঘটেছিল বলে পুলিশের দাবি।

রাজধানী ইম্ফল থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে থৌবল জেলায় দুই কুকি মহিলাকে বিবস্ত্র করে ঘোরানো এবং গণধর্ষণের ঘটনায় সরব হয়েছিল গোটা দেশ। ঘটনায় দোষী কাউকে ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বিরেন সিং। ইতিমধ্যেই অভিযুক্ত বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রকাশ্যে এসেছে এক নির্যাতিতায় বয়ানও। জানা গিয়েছে, ওই দিন মেইতেই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা তার বাবা এবং ভাইকে হত্যা করে বলে তিনি জানান। তাই সেই প্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে পুড়িয়ে খুনের ভিডিওটি ওই ঘটনার বলেই অনুমান পুলিশের।

২১ বছরের ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, গত ৪ মে-র ঘটনাটি বি ফাইনম গ্রামের কাছে থৌবল জেলায় তৌবু গ্রামের পাশে ঘটেছিল। নির্যাতিতা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণ-সহ একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন। তিনি ‘জ়িরো এফআইআর’ দায়ের করেন সাইকুল থানায়।

ঘটনার দিন প্রায় ১০০ জন দুষ্কৃতী গ্রামে ঢুকেছিল বলে জানান নির্যতিতা। তিনি বলেন, ‘‘অনেকের হাতে একে-৪৭, ইনসাস সহ আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ছিল। গ্রামে ঢুকে তারা নির্বিচারে বাড়িতে আগুন ধরায়, গুলি চালায়।।’’ সেসময় নির্যাতিতার পরিবারের তিন মহিলা এবং দু’জন পুরুষ অর্থাৎ তার বাবা এবং ভাই দৌড়ে পাশের জঙ্গলে ঢুকে পড়েন। কোনোক্রমে তখন তারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। এরপর নংপোক সেকমাই থানা থেকে পুলিশকর্মীরা গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। কিন্তু থানায় ফেরার পথে ফের রাস্তায় দুষ্কৃতীরা তাদের উপর চড়াও হয়।

নির্যাতিতা জানিয়েছেন, এরপরই তিন মহিলাকে খুনের ভয় দেখিয়ে জোর করে বিবস্ত্র করানো হয়। গণধর্ষণের শিকার হন তারা। একইসঙ্গে তার বাবা এবং ভাইকে হামলাকারী জনতা খুন করেছিল বলেও জানিয়েছেন তিনি। আর নির্যাতিতার বয়ানের প্রেক্ষিতেই নতুন এই ভিডিয়োটি ঘিরে ফের মণিপুরের হিংসার চিত্র সামনে এসেছে।