ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য: বিজেপি শিবিরের প্রচারে বিরোধী আমলে ভারতে জঙ্গি হামলা

ইসরায়েলের ওলগা বিচে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদী। ২০১৭।

শনিবার ৭ অক্টোবর সকালে ইসরাইল-এর উপর হামাস-এর হামলার খবর পাওয়া মাত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই বিষয়ে মতামত জানিয়েছিলেন। ভারত সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন তিনি। ইসরাইলকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বিশ্ব নেতৃত্বকে জঙ্গিপনা, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

এই প্রেক্ষিতেই ভারতের বিজেপি শিবির ইসরাইল-হামাস যুদ্ধকে ভারতের রাজনীতিতে টেনে এনে বিরোধীদের নিশানা করা শুরু করেছে তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় হ্যাসট্যাগ প্রচারে আরএসএস ও বিজেপির অনুগামী সংগঠন এবং ব্যক্তিরা ইসরাইল-এর চলতি পরিস্থিতির সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিগত ইউপিএ জমানার তুলনা টানা শুরু করেছে। কাশ্মীর ও পাকিস্তানকে নিশানা করে বলা হচ্ছে, আজকের ইসরাইল-এর মতো ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতও ইসলামিক জঙ্গিদের দ্বারা বারবার আক্রান্ত হয়েছে।

গত দু’দিন যাবৎ #IStandWithIsrael, #IndiaWithIsrael and #BharatWithIsrael ইত্যাদি হ্যাসট্যাগে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি শিবির। তাতে দাবি করা হচ্ছে, এখনই ইসরাইলকে সমর্থন করে তার পাশে দাঁড়ানো উচিত ভারতের। ইসরাইলকে ভারতের মিসাইল-সহ অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করা দরকার। এই প্রচারে বলা হচ্ছে, ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দেশে ইসলামিক সন্ত্রাসের দিনগুলি ভোলার নয়।

উল্লেখ্য ওই সময় ভারতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। ভারতে তখন সক্রিয় ছিল লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন এবং জয়েস-ই মহম্মদের মতো ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি। বিজেপি শিবিরের হ্যাসট্যাগ প্রচারে বলা হয়েছে হামাস-এর সঙ্গে এগুলির কোনও ফারাক নেই। একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

এই মুহূর্তে ভারতে তৃণমূলের মতো ইউপিএ সরকারের একাধিক শরিক এবং বামেদের মতো সমর্থক দলগুলি বিজেপি বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক। এছাড়া বাজপেয়ী এবং মোদী সরকারে থাকা এনডিএ-র বহু শরিক দলও এখন ইন্ডিয়া জোটের সদস্য। বিজেপি শিবিরের এই আক্রমণকে লোকসভা ভোটের আগে দেশে মেরুকরণের চেষ্টা হিসাবেই দেখা হচ্ছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতকে কাজে লাগিয়ে হিন্দুত্ববাদী ভোটারদের একজোট করার চেষ্টা শুরু হয়েছে।

বিরোধীদের মধ্যে থেকে আবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ২০১৮-র একটি তৎকালীন ট্যুইট-এর বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

তাদের দাবি, ওই পোস্টে মোদী ভারত ও ফিলিস্তিন-এর মধ্যে বন্ধুত্বের পক্ষে সরব হয়েছিলেন।

অন্যদিকে বিজেপি আমলেও ভারতে জঙ্গি হানার ঘটনা আছে। ২০১৯-এ কাশ্মীরে সিআরপিএফের কনভয়ে জয়েস-ই-মহম্মদের হামলায় ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর সময়ে ভারতের সংসদেও জঙ্গি হামলার ঘটে। এছাড়া, ১৯৯৯-এ কার্গিলে পাক জঙ্গি ও সেনার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয় ভারতীয় সেনাকে। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় যাত্রীদের মুক্ত করতে দাগী জঙ্গিদের জেল থেকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় বাজপেয়ী সরকার। মোদীর জমানায় পুলওয়ামার ঘটনা ছাড়াও উরির সেনা ছাউনিতে পাক জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে।