হামাসের নজিরবিহীন হামলার পর নেতানিয়াহু বললেন, ‘আমরা যুদ্ধ করছি’

ইসরাইলের দক্ষিণে অবস্থিত আশকেলন অঞ্চলে গাজা উপত্যকা থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর ঘটনাস্থল থেকে এক নারী ও শিশুকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন পুলিশের কর্মকর্তারা (৭ অক্টোবর, ২০২৩)

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দেশবাসীর উদ্দেশে বলেন, দেশটি গাজা উপত্যকার শাসক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে “যুদ্ধ করছে”।

শনিবার দিনের শুরুতে গাজা উপত্যকার শাসক হামাস ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি বড় আকারের, নানামুখী আক্রমণ শুরুর পর প্রথমবারের মতো টেলিভিশনে বক্তব্য রাখতে যেয়ে এ কথা বলেন নেতানিয়াহু। তিনি রিজার্ভ সেনাদলকে ডেকে পাঠিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, হামাস “এতোটাই চরম মূল্য দেবে যা তারা এখন পর্যন্ত দেখেনি।”

“আমরা যুদ্ধ করছি”, নেতানিয়াহু বলেন। “এটা কোনো ‘অভিযান” নয়, নয় কোনো ‘টহল’, এটা যুদ্ধ।”

একইসঙ্গে, যেসব শহরে হামাসের যোদ্ধারা অনুপ্রবেশ করে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করছে, সেগুলো থেকে তাদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার হামাস ইসরাইলের উদ্দেশে হাজার হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে এবং দেশটির অত্যন্ত সুরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় বেশ কয়েক ডজন সেনা পাঠিয়ে বড় আকারে পেশীশক্তি প্রদর্শন করে, যা একটি বড় ছুটির সময় ইসরাইলকে অপ্রস্তুত করে তোলে।

ইসরাইলের জরুরী সেবা সংস্থা জানায়, চিকিৎসাকর্মীরা ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে ১৬ জন হতাহতকে উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে একজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা আছেন। তিনি গাজা থেকে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের সরাসরি আঘাতে নিহত হন। এই হামলায় আহত অপর ২ ব্যক্তি আশংকাজনক অবস্থায় আছেন।

উভয় পক্ষে হতাহতের আরও খবর এসেছে। তবে কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানায়নি। ইসরাইলি গণমাধ্যম জানায়, দক্ষিণ ইসরাইলে কয়েক ডজন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। গাজায় অবস্থিত ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, “অসংখ্য নাগরিক” আহত হয়েছেন। তবে সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো হয়নি। মসজিদগুলোতে লাউডস্পিকারে নিহত যোদ্ধাদের জন্য প্রার্থনা করা হয়।

হামাস, ইসরাইলের উদ্দেশে ২ হাজারেরও বেশ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। যার ফলে এমন কী দেশটির একেবারে উত্তরে অবস্থিত তেল আবিব ও জেরুজালেমেও সার্বক্ষণিকভাবে আকাশ হামলার সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে থাকে। এই হামলার কারণে গাজার সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। তারা জানায়, ইসরাইলের অন্তত ৭টি অবস্থানে হামাসের যোদ্ধারা অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে এবং সেখানে এখন ২ পক্ষের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধ চলছে। (হামাসের) যোদ্ধারা বেড়া ডিঙিয়ে এবং এমন কী, আকাশপথেও প্যারাগ্লাইডারের সহায়তায় ইসরাইলি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করে বলে জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

অনুপ্রবেশের ঘটনা ঠেকাতে গাজা সীমান্তজুড়ে ইসরাইল একটি বড় আকারের বেড়া নির্মাণ করেছে। এটি মাটির অনেকদূর গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত এবং এতে রয়েছে ক্যামেরা, উন্নত প্রযুক্তির সেন্সর ও সংবেদনশীল শ্রবণ প্রযুক্তি।

এমন সময় এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলো যখন পশ্চিম তীরে বড় আকারে যুদ্ধ চলছে। এ বছর ইসরাইলি সামরিক অভিযানে প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনার পর পশ্চিম তীরে অসংখ্য ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা ও বাসিন্দারা উল্লাস প্রকাশ করতে সড়কে নেমে আসেন।