উত্তর-পূর্ব ভারতের সিকিমে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, হ্রদ ভেঙে পড়া এবং তার জেরে রাজ্যের বিস্তীর্ণ অংশ প্লাবিত হওয়ার মতো বিপর্যয়ের পর পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ভাগে জলপাইগুড়ির তিস্তা নদীর জলে ভেসে আসছে মৃতদেহ। জলস্তর কমতেই একের পর এক দেহ উদ্ধার করছে পুলিশ। জলপাইগুড়ি জেলার তিস্তা নদীর পাড়ে থাকা মাল, ময়নাগুড়ি এবং সদর ব্লকের কোতোয়ালি থানা এলাকার তিস্তার পাড় থেকে মোট ১৮ টি দেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
এদিন উদ্ধার কাজে হাত লাগায় এনডিআরএস, সিভিল ডিফেন্স ও পুলিশ কর্মীরা। দেহগুলিকে উদ্ধার করে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, দেহগুলির মধ্যে সেনা কর্মীদের দেহের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দেহও রয়েছে।
জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন জানিয়েছেন, "বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট ১৮ টি দেহ উদ্ধার হয়েছে। এদের মধ্যে ৬ জনের নাম পরিচয় জানা গিয়েছে। চার জন সেনাবাহিনীর এবং ২ জন পর্যটক। বাকিদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। আমরা দেহ মর্গে পাঠিয়েছি।"
গত কয়েক দিন অবিরাম বৃষ্টি চললেও বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর সকালে তিস্তা নদীর রূপ ছিল অনেকটাই শান্ত। তাই ভরসা পেয়েছিলেন সংলগ্ন এলাকার মানুষ। ত্রাণ শিবির ছেড়ে তাদের অনেকেই রওনা হয়েছিলেন ঘরের পথে। কিন্তু বেলা বাড়তেই আবার জারি হয় বিপদ সংকেত। ফের তিস্তায় জল বাড়ার সতর্কতা জারি করে প্রশাসন। জলপাইগুড়ির তিস্তাচরের মানুষদের ত্রাণ শিবিরে ফিরিয়ে আনা হয়।
এর পাশাপাশি নতুন করে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে এই খবর আসার পর যে সিকিমের ডিকচু ড্যাম থেকে ছাড়া হয়েছে প্রচুর জল। কালিম্পং জেলা প্রশাসনের তরফে এই খবর আসতেই ফের সতর্ক হয়েছে প্রশাসন। ডিকচু বাঁধের জলে জলপাইগুড়িতে তিস্তা ফের ভাসতে পারে বলে আশঙ্কা। জেলা প্রশাসনের তরফে জলপাইগুড়ি সদর, রাজগঞ্জ, ময়নাগুড়ি ও ক্রান্তি এলাকার বিডিও ও এসডিওদের সতর্ক করা হয়েছে। তিস্তার চর থেকে ফের মানুষজনকে সরিয়ে আশ্রয় শিবিরে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। ফলে বৃহস্পতিবার ভারতীয় সময় সকালে ঘরে ফিরেছিলেন যারা, তাদের আবারও শিবিরে নিয়ে আসা হচ্ছে।
বুধবার ভোরের মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত অবস্থা সিকিমের। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চার জেলা নামচি, মংগন পোকিয়ং ও শোরেং। এরমধ্যে পোকিয়ংয়েই মারা গেছেন ৭ জন। নিখোঁজ ৪০ থেকে ৫০ জন। সিকিমের বিভিন্ন এলাকায় ১৪টি ব্রিজ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গেছে। এখনও বৃষ্টি চলায় ব্যহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ। রাস্তা বন্ধ থাকায় আটকে পড়া পর্যটকদের বিমানে নিয়ে আসার কথা ভাবা হচ্ছে।
বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ভেসে যায় সিকিম। উত্তর সিকিমের চুংথাংয়ে দক্ষিণ লোনাক হ্রদের বাঁধ ভাঙায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে তিস্তার জল। জল ছাড়া হয় তিস্তা ব্যারেজ থেকেও। এরফলে নদী সন্নিহিত এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। রাতারাতি ত্রাণশিবিরে সরিয়ে আনা হয় তিস্তা পাড়ের বাসিন্দাদের।