ভারতের দিল্লিতে কৃষি ভবনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের হেনস্থার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে রাজভবন অভিযানের পরিকল্পনা

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

মঙ্গলবার ৩ অক্টোবর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে কৃষি ভবনে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত সাক্ষাৎ না হওয়ায় অবস্থানরত তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ও সাংসদদের উপরে হওয়া পুলিশি হেনস্থার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করার দাবি জানালেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ৪ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে এই দাবি জানান তিনি।

তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের কথায়, "কৃষি ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনা হোক। তাহলেই তো স্পষ্ট হয়ে যাবে বিজেপি নাকি তৃণমূল, কারা সত্যি কথা বলছে।"

কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে এবং রাজ্যের বকেয়া আদায়ের দাবিতে গত সোমবার ২ অক্টোবর থেকে দিল্লিতে ধর্না অবস্থানে বসেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। মঙ্গলবার যন্তরমন্তরে সমাবেশ শেষে কৃষি ভবনে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন অভিষেকের নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। তাদের অভিযোগ, দেড় ঘণ্টা বসিয়ে রেখেও দেখা করেননি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী। উল্টে চুলের মুঠি ধরে মহিলা সাংসদদের সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতা, সাংসদরা।

অন্যদিকে এই পরিস্থিতির জন্য তৃণমূলকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বিজেপি। বুধবার সন্ধ্যায় এই বিষয়েই কলকাতায় ফিরে বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে পাল্টা দাবি জানিয়েছেন অভিষেক। তার কথায়, সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনলেই সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।

মঙ্গলবারের ঘটনার তীব্র নিন্দা করে অভিষেক বলেন, "ন্যক্কারজনক ঘটনা। যেভাবে মহিলা সাংসদদের নির্যাতন করা হয়েছে, চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেছে, ন্যূনতম সৌজন্যতা পর্যন্ত দেখায়নি তা দেশের গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।"

ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিল্লি থেকেই কলকাতায় রাজভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন অভিষেক। এদিন তিনি বলেন, "কেন্দ্রের প্রতিনিধি রাজ্যপাল। তার চোখ কান দিয়ে কেন্দ্র রাজ্যের পরিস্থিতি দেখেন। রাজ্যপাল এতদিন রাজ্যের বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন। আমরা মনে করি, কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে উনি নিশ্চয় আমাদের সময় দেবেন।"

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস।

বুধবার কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের উদ্দেশে অভিষেক বলেন, "আপনি তো কেন্দ্রের প্রতিনিধি। অনেক জ্ঞানী মানুষ। এতদিন রাজ্যের বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন। গণতন্ত্র বিপন্ন, অধিকারের কথাও বলেছেন। কেন্দ্রের প্রতিনিধি হিসেবে ২০ লক্ষ বঞ্চিত মানুষের টাকা পাইয়ে দেওয়ার দায়িত্বও আপনাকেই নিতে হবে।"

আনুষ্ঠানিকভাবে বুধবারই রাজ্যপালের কাছে চিঠি পাঠাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল। মঙ্গলবার দিল্লি থেকেই অভিষেক জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদে এক লাখ মানুষকে নিয়ে যাওয়া হবে রাজভবনে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতিও। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর দুপুরে কলকাতায় জড়ো হবেন তৃণমূল কর্মীরা। সেখান থেকেই মিছিল করে তারা জাবেন রাজভবনে।

কেন্দ্রের বঞ্চনার প্রতিবাদে দিল্লি কর্মসূচিতে বাংলা থেকে ৫০ লক্ষ বঞ্চিত মানুষের চিঠি নিয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সাধ্বী প্রজ্ঞা নিরঞ্জন দেখা না করায় ওই বিপুল পরিমাণ চিঠি ফের বাংলায় ফেরৎ এনেছে তৃণমূল। অভিষেক জানান, বৃহস্পতিবার রাজভবনে নিয়ে যাওয়া হবে ওই ৫০ লক্ষ চিঠি।

রাজভবন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতেই কেরলে গিয়েছেন রাজ্যপাল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার তিনি ফিরবেন কিনা বুধবার ভারতীয় সময় সন্ধ্যা পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কিছু জানাতে পারেনি রাজভবন। রাজ্যপালের দেখা না করা প্রসঙে অভিষেক বলেন, "উনি এই ক'মাসে অনেক কথা বলেছেন। আশা করি উনি দেখা করবেন, বাংলার বঞ্চিত মানুষের মুখ থেকেই তাদের বঞ্চনার কথা শুনবেন।"

সংবাদ সূত্রের খবর, অভিষেকের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কাছে যাবেন ৪০ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। ওই দলে থাকবেন বেশ কয়েকজন বঞ্চিত প্রাপকও।