মঙ্গলবার প্রকাশিত 'সাউথ এশিয়া ডেভেলপমেন্ট আপডেট: টুওয়ার্ডস ফাস্টার, ক্লিনার গ্রোথ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “এ বছর দক্ষিণ এশিয়ার প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ; যা বিশ্বের অন্য যেকোনো উদীয়মান ও উন্নয়নশীল অঞ্চলের চেয়ে বেশি। কিন্তু, এই হার করোনা মহামারীর আগের গতির চেয়ে ধীর এবং উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণের জন্য এটা যথেষ্ট গতির নয়।”
বিশ্বব্যাংক তার হালনাগাদ প্রতিবেদনে আরো বলেছে, “বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারী থেকে একটি শক্তিশালী পুনরুদ্ধার করেছে। কিন্তু, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, আর্থিক খাতে দুর্বলতা, বাহ্যিক চাপ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারী পরবর্তী ২০২৩ অর্থবছরে পুনরুদ্ধার বাধাগ্রস্ত হয়েছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়, “দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন ক্ষেত্র বলছে, মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলায় আর্থিক ও রাজস্ব নীতির পাশাপাশি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা; বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।” এতে আরো বলা হয়, “একটি একক বাজার-ভিত্তিক বিনিময় হার, দেশটির আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহকে আকর্ষণ করতে এবং অর্থপ্রদানের ভারসাম্য ও রিজার্ভ জমাতে সহায়তা করবে।”
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহায়তায়, বাংলাদেশ জীবনযাত্রার অবস্থার উন্নতি করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।এতে বলা হয়,“২০১৬ সালের চরম দারিদ্র্য ৯ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছে দেশটি। যা লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে তুলনীয় এবং দক্ষিণ এশিয়ার গড়ের চেয়ে ভালো।”
বিশ্বব্যাংক বলছে, আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যসীমা ২ দশমিক ১৫ ডলার (২০১৭ ক্রয় ক্ষমতা সমতা ব্যবহার করে) এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) গৃহস্থালি আয় ব্যয় জরিপ ২০২২ এবং ২০১৬ সালের পুনঃনিরীক্ষণের ওপর ভিত্তি করে নতুন দরিদ্রদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেছেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বহুমাত্রিক; এটি শিশু মৃত্যুহার ও অপুষ্টি হ্রাস এবং বিদ্যুৎ, স্যানিটারি টয়লেট ও শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধিসহ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণে উন্নতি সাধন করেছে। শহর ও নগরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এসব অর্জনের মধ্যে, অসমতা গ্রামীণ এলাকায় কিছুটা সংকুচিত হয়েছে; তবে শহরাঞ্চলে প্রশস্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে, জরুরি সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।”
আঞ্চলিক প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধার হ্রাস পেয়েছে এবং আর্থিক কঠোরতা, আর্থিক একত্রীকরণ এবং বৈশ্বিক চাহিদা হ্রাসের সমন্বয় সাধনে, এখানকার অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপর প্রভাব পড়েছে।
ভঙ্গুর আর্থিক অবস্থানের কারণে প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাগুলো নেতিবাচক ও ঝুঁকিসাপেক্ষ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই অঞ্চলটি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরো মন্দা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরো ঘন ঘন এবং তীব্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে পড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইসার বলেন, “দক্ষিণ এশিয়া যখন ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি করছে, তখন এই অঞ্চলের বেশিরভাগ দেশ এক প্রজন্মের মধ্যে উচ্চ আয়ের সীমায় পৌঁছানোর মতো দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে না।”
তিনি আরো বলেন, “দেশগুলোকে জরুরিভিত্তিতে আর্থিক ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা করতে হবে এবং বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জ্বালানি রূপান্তরের ফলে সৃষ্ট সুযোগগুলো কাজে লাগানোসহ প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।”