প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ ভয়ে পুলিশের সামনে নামগুলো বলেনি: সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান

Your browser doesn’t support HTML5

এ বছরের মার্চ মাসে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশের অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান সামির ভাই মাহিনুর আহাম্মেদ খানের ওপর হামলা হয়।
মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতি বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‍্যাপোর্টিয়ার ম্যারি ললার, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে), বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস সহ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা সংগঠন এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছে। তারা দ্রুত এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করে অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং জুলকারনাইনের পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বানও জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের আমলে বিদেশে বসবাসরত সাংবাদিক ও ভিন্নমতালম্বীদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে নানারকম মামলা, হামলা ও হয়রানির অভিযোগ বেড়েই চলেছে। সাংবাদিক তাসনিম খলিল, কনক সারওয়ার, ভিন্নমতালম্বী এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্যসহ অনেকেরই বাংলাদেশে বসবাসরত পরিবারের সদস্যরা এধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, হচ্ছেন।
এ প্রেক্ষাপটে গত মে মাসের তারিখ ভয়েস অফ আমেরিকার কথা বলে জুলকারনাইন সায়ের খানের সাথে। এ সাক্ষাৎকারে তিনি মূলত তার ভাইয়ের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-এ করা তার বিরুদ্ধে মামলা ইত্যাদি নিয়েও তার বক্তব্য জানান।
জুলকারনাইন সায়ের ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান যে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত অনুসন্ধানী রিপোর্ট 'অল দা প্রাইমিনিস্টার'স মেন্'-এ হুইসেল ব্লোয়ার ও আন্ডার কভার সাংবাদিক হিসেবে তিনি কাজ করেন। বহুল আলোচিত এ রিপোর্ট বাংলাদেশ সরকারকে বেশ কিছু শক্ত প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করায়। তিনি দাবি করেন, "কিন্তু, বরাবরের মতই বাংলাদেশ সরকার সবগুলো অভিযোগই শুধু অস্বীকারই করে না, যারা যারা এই ডকুমেন্টারির সাথে জড়িত ছিল তাদের সবার বিরুদ্ধেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মিথ্যা প্রচারণা চালায়।" বাংলাদেশে বসবাসরত তার আশি বছর বয়সী নানীকে বেশ কয়েকবার মধ্যরাতে বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, তার ছোট ভাই, যার ওপর এ বছরের মার্চ মাসে হামলা হলো তাকেও বেশ ক'বার প্রশ্ন করা হয়, বিভিন্ন অফিসে যেতে বলা হয়।
জুলকারনাইন দাবি করেন তার করা বিভিন্ন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন বাংলাদেশ সরকারকে শওকত জবাবদিহিতার মুখোমুখি করে। এ ধরণের জবাবদিহিতার মুখোমুখি হবার নজির বাংলাদেশে সাংবাদিকতার বর্তমানে যে ট্রেন্ড তাতে খুব একটা দেখা যায় না বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে তার করা একটি প্রতিবেদনে দেখানো হয় যে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য, আব্দুস সোবহান মিয়া গোলাপ, যুক্তরাষ্টের নিউ ইয়র্কে নয়টি ফ্লাট বাড়ি কিনেছেন। তিনি যে সময় এই ফ্লাটবাড়িগুলো কিনেছিলেন, সে সময় তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ এ বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তার এই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে এবিষয়ে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। তার কিছুদিন পরই ১৭ মার্চ ২০২৩ তার ছোট ভাইর ওপর হামলাটি করা হয়।
সিপিজে জুলকারনাইন সায়ের-এর বরাত দিয়ে বলেছে যে, স্থানীয়রা বলেছে, এ হামলার সাথে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত কিন্তু এ ব্যাপারে যখন তার ভাই মামলা করেন তখন সেখানে তাদের নাম উল্লেখ না করে কেন চারজন অজ্ঞাতনামার নামে মামলাটি করা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে জুলকারনাইন সায়ের খান বলেন, স্থানীয় যারাই এই হামলার ঘটনা দেখেছে তারা বলেছেন যে হামলাকারীদের তারা চিনতে পেরেছেন এবং এরা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের সাথে তারা কাজ করে ও চলাফেরা করে। পুলিশকে বলা হলেও, যেহেতু প্রত্যক্ষদর্শীরা কেউ ভয়ে পুলিশকে নামগুলো বলেনি, তাই পুলিশকে বলার পরও মামলায় কারো নাম পুলিশ লেখেনি।
তিনি আরো বলেন, তার ভাই-এর উপর যখন হামলা হয় তখন মোবাইলে সে দৃশ্য ধারণ করে হামলাকারীরা। হামলাকারীরা তার ভাইকে পেটানোর সময় বলে "তোর ভাই প্রাইমিনিস্টারকে নিয়ে লিখে! সে কি জার্নালিস্ট আমরা দেখবো।"
তার বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন-এর মামলা প্রসঙ্গে সায়ের ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, এ নিয়ে তিনি কিছু জানেন না। তিনি এমনকি কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেন নি কারণ তিনি তো জানেনই কি হবে। তাছাড়া যে আইনজীবী তিনি নিয়োগ দেবেন তিনিও নানা হয়রানির ও নজরদারির মধ্যে পড়ে যেতে পারেন বলেন আশংকা প্রকাশ করেন জুলকারনাইন সায়ের।