ভারতে লোকসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ: উমা ভারতী বললেন ওবিসি সংরক্ষণ বাদে মহিলা বিল অর্থহীন

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা এক চিঠিতে উমা বলেছেন, "ওবিসি সংরক্ষণ বাদে মহিলা বিল অর্থহীন।"

বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর ভারতে লোকসভায় পাশ হয়ে গেছে বহু প্রতিক্ষীত মহিলা সংরক্ষণ বিল। কিন্তু মঙ্গলবার বিলটি পেশ হওয়ার পর সেটির কার্যকারিতা নিয়ে নানা রাজনৈতিক মহল থেকেই আপত্তি উঠেছে। এমনকি আপত্তি উঠেছে বিজেপির অন্দরমহল থেকেও। ফলে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোর কৃতিত্ব লোকসভার ভোটের সময় কতটা বিজেপি নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে বিজেপি শিবিরেই।

দলের একাংশের বক্তব্য, বিলটি নিয়ে বিরোধীদের দিকে আঙুল তোলার তেমন অবকাশ নেই। কম-বেশি সব দলই বিলটি নিয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। (যার ফলস্বরূপ বুধবার বিলটি পাশ হয়ে যায়)। কিন্তু কবে সংরক্ষণ চালু হবে বিলে তার উল্লেখ নেই। বরং যে দুটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা ঘিরে কিছুটা অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ, সংরক্ষণ চালু হবে পরবর্তী জনগণনা এবং লোকসভা ও বিধানসভার আসন ও এলাকা পুনর্বিন্যাসের পর। এই দুই ব্যপারে আবার সরকার নীরবতা রক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আরও একটি বিষয়ে বিজেপি শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে যা নিয়ে বিরোধীরা ইতিমধ্যে সরব হয়েছে। বিলে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য পৃথক আসন সংরক্ষণের কথা বলা হলেও উল্লেখ নেই অন্যান্য অনুন্নত বা ওবিসি সম্প্রদায়ভুক্ত মহিলাদের কথা। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম মুখ নীতীশ কুমার প্রশ্ন তুলেছেন, "৬০ শতাংশ মহিলাকে সংরক্ষণের আওতার বাইরে রেখে একটা বিল পাশ করানো হাস্যকর পদক্ষেপ।" অবস্থান বদলে কংগ্রেসও সরব হয়েছে ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের দাবিতে। (বুধবার বিতর্কে সনিয়া গান্ধী নিজের বক্তব্যে এই বিষয়টি তুলে ধরেন)।

এই ইস্যুতেই বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে তুলেছেন মধ্যপ্রদেশের নেত্রী উমা ভারতী। উল্লেখ্য, মহিলা সংরক্ষণ বিলের জন্য যে মহিলা এমপি-রা সংসদে নজরকাড়া ভূমিকা পালন করেছেন উমা তাদের অন্যতম। তিনি একবার সংসদে নিজের আসনের উপর দাঁড়িয়ে উঠে মহিলা বিল পাশ করানোর দাবি জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা এক চিঠিতে উমা সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছেন, "ওবিসি সংরক্ষণ বাদে মহিলা বিল অর্থহীন।"

উমা নিজে মধ্য প্রদেশে ওবিসি সম্প্রদায়ের অন্যতম মুখ। মূলত নিজের সম্প্রদায়ের সমর্থনের জোরে ২০০৩ সালে তিনি মধ্য প্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হন। তিনিই প্রথম গেরুয়া বসনধারী মুখ্যমন্ত্রী। দলের সঙ্গে নানা প্রশ্নে বিবাদের কারণে মূল স্রোত থেকে ছিটকে যাওয়া উমা প্রায়ই দলের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মধ্য প্রদেশে তার মদ বিরোধী আন্দোলন বিজেপির শিবরাজ সিং চৌহান সরকারকে বারে বারে বিপাকে ফেলেছে।

বিজেপির অন্দরমহলের খরব, উমা যে কথা সাহস করে প্রধানমন্ত্রীকে লিখেছেন তা অনেকেরই মনের কথা। প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেও ওবিসি সম্প্রদায়ের মানুষ। সেই প্রসঙ্গ টেনে দলের অনেকেই বলছেন, মহিলা বিল পাশ করানো যেমন ঐতিহাসিক পদক্ষেপ হবে, তেমনই ওবিসি মহিলাদের সংরক্ষণের আওতা থেকে দূরে রাখাটা হবে দলের ঐতিহাসিক ভুল।