সমালোচনার মুখে ক্রিকেটার তানজিম সাকিবের ‘দুঃখ প্রকাশ’

আমার মা একজন নারী, আমি নারী বিদ্বেষী হতে পারি না: ক্রিকেটার তানজিম

যে বাংলাদেশে হাজার-হাজার নারী গার্মেন্টসে চাকরি করে জাতীয় উন্নয়নে ‘বিস্ময়কর অবদান’ রেখেছেন, সেই দেশের এক তরুণ ক্রিকেটার নারীদের চাকরি করা নিয়ে আপত্তি তুলে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তানজিম হাসান সাকিব নামের ২০ বছর বয়সী ওই পেসার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইলে বেশ কয়েক বছর আগে নারীদের নিয়ে, অন্য ধর্মের উপাসনার মাধ্যম নিয়ে, নিজ দেশের জাতীয় দিবস নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট দেন। জাতীয় দলে একটিমাত্র ওয়ানডে খেলে আলোচনায় আসার পর তার পুরনো সেই পোস্টগুলো ভাইরাল হলে ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মাধ্যমে তিনি ক্ষমা চেয়েছেন বলে মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দাবি করেছেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান জালাল ইউনুস। তবে যাকে নিয়ে এত আলোচনা, সেই তিনি ফেসবুকে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে এখনো কিছু লেখেননি।

এই ঘটনার পর ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ পোস্টগুলোকে ‘একান্ত ব্যক্তিগত মতামত’ হিসেবে দেখছেন, কেউ বলছেন মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা, কেউ আবার তার মানসিকতায় পরিবর্তন আনার আহ্বান জানাচ্ছেন।

নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে ক্রিকেট দুনিয়ায় ‘শাস্তি’ পাওয়ার নজির একাধিক আছে। প্রতিবেশি ভারতের তারকা দুই ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডিয়া ও লোকেশ রাহুল কফি উইথ কারান অনুষ্ঠানে নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বিপাকে পড়েন। সমালোচনার মুখে অস্ট্রেলিয়া থেকে তাদের সেই সময় দেশে ফেরত পাঠায় ভারতীয় বোর্ড। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকায়ও এই নজির আছে।

এদিন মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জালাল ইউনুস। তিনি জানান, "দুঃখ প্রকাশ করায়, তানজিম সাকিবের বয়স বিবেচনায় এবং সামনে বিশ্বকাপ থাকায় বোর্ড এযাত্রায় তাকে ছাড় দিয়েছে। তবে ভবিষ্যতে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।"

কী ছিল তানজিম সাকিবের পোষ্টে

তানজিম সাকিবের অন্তত চারটি পোস্ট নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। এরমধ্যে একটি কিশোর বয়সের। বাকিগুলো প্রাপ্তবয়স্ক সময়ের। পোস্টগুলো গত কয়েক দিনে ভাইরাল হওয়ার পরও ফেসবুক থেকে তিনি সরাননি। বোর্ডের পক্ষ থেকে যোগাযোগের পর ডিলিট করেছেন। তবে কয়েকটি পোস্ট এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত রয়ে গেছে। তাকে সমর্থন করে তার যেসব বন্ধু ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন কয়েক ঘণ্টা আগে তাদের একটি পোস্ট তাকে শেয়ারও দিতে দেখা গেছে।

তানজিম সাকিবের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুক্ত হন। আইসিসি এবং বাংলাদেশ বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী সেই সময় তার বয়স ছিল ১১ বছর ১০ মাস ২৯ দিন। ফেসবুকের নীতিমালা অনুযায়ী, ১৩ বছর হলে তবেই কেবল অ্যাকাউন্ট খোলা যায়। এর আগে যারা খোলেন, তাদের ‘নকল জন্ম তারিখ’ দিতে হয়।

ফেসবুকের নীতিমালায় বলা আছে, ‘‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করা মানে আমাদের নীতিমালা লঙ্ঘন করা। ১৩ বছরের কম বয়সী কারো হয়ে যদি কেউ অ্যাকাউন্ট খোলে, সেটিও এর মধ্যে (নীতিমালা লঙ্ঘন) পড়ে।’’

সদ্য শেষ হওয়া এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে অভিষেকে দুই উইকেট নেওয়া ডানহাতি পেসার তানজিম ২০১৪ সালে ফেসবুক খোলার পর থেকেই ধর্মীয় অনুশাসন বিষয়ক পোস্ট শেয়ার করতে থাকেন। শুরুতে এরমধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে বিতর্কিত পোস্ট দেওয়া শুরু করেন।

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি লেখেন, ‘‘স্ত্রী চাকরি করলে স্বামীর হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে সন্তানের হক আদায় হয় না, স্ত্রী চাকরি করলে তার কমনীয়তা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পরিবার ধ্বংস হয়, স্ত্রী চাকরি করলে পর্দা নষ্ট হয়, স্ত্রী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়।’’ চলতি বছরের এপ্রিলেও তিনি এধরনের পোস্ট শেয়ার করেছেন।

আরেকটি পোস্টে (তারিখ অজানা) তানজিম লিখেছেন, ‘‘ভার্সিটির ফ্রি মিক্সিং আড্ডায় অভ্যস্ত মেয়েকে বিয়ে করলে আর যাই হোক, নিজের সন্তানের জন্য একজন লজ্জাশীল মা দিতে পারবেন না।’’

২০১৪ সালে তিনি একটি পোস্ট শেয়ার করেন, যেখানে বাংলাদেশের বিজয় দিবসকে উদযাপন করতে নিষেধ করা হয়। এছাড়া এশিয়া কাপে খেলার সময় দলের অন্যরা যখন জাতীয় সঙ্গীতে মুখ মিলিয়েছেন, তখন তাকে চুপ থাকতে দেখা গেছে।

তানজিমের পোস্টগুলো 'ব্যক্তিগত'

তানজিমের পোস্টগুলোকে ব্যক্তিগত উল্লেখ করে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘ও যা করেছে ব্যক্তিগত ভাবনা থেকে করেছে। এটা ভালো মনে করেছে, তাই পোস্ট দিয়েছে।’’

সাবেক প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ পোস্টগুলোকে এভাবে দেখছেন, ‘‘এটা আসলে যার-যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। একটা ছেলে যে পরিবার থেকে আসে, সেই পরিবারই প্রাথমিকভাবে এসব ব্যাপার টেককেয়ার করে। আজকে ফেসবুক না থাকলে আপনি কিন্তু জানতেন না যে ওর মনের ভেতর কী আছে। আপনি জেনেছেন পোস্টগুলো থেকেই। তাও কয়েক বছর আগের পোস্ট। একটা ছেলে এখন সরি বলেছে। বোর্ড ব্যাখ্যা দিয়েছে। এরপর তো আর কথা থাকে না।’’

মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সংবিধান

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "আমাদের সংসদ আইন করে বাক স্বাধীনতাটাকে সীমিত করছে। যেখানে আপনি এটা বলতে পারবেন না, ওটা বলতে পারবেন না।"

বাংলাদেশের সংবিধানের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং আবার মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে কেউ যদি ভিন্ন মত ও ভিন্ন ধর্ম কিংবা ভিন্ন বর্ণের প্রতি কটুক্তি কিংবা বিদ্বেষ প্রকাশ করে, তাহলে সংবিধানে কি বলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ড. শাহদীন মালিক বলেন, যে দেশ যত বেশি অগতান্ত্রিক সেই দেশে বাক স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ করে তত বেশি আইন করা হয়।

ওদিকে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ও রাজনীতি বিশ্লেষক ড. বদিউল আলম মজুমদার ভয়েস অফ আমেরিকা বলেন, "আমাদের সংবিধান অনুযায়ী বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি কিছু বিধিনিষেধও আরোপ করা আছে। কিন্তু অনেক দেশের সংবিধানেই বাক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ নাই।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার ব্যাপারে নাগরিকের বাক স্বাধীনতা থাকবে না বলা হয়েছে। বিদেশী রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করা সংক্রান্ত এবং জনশৃঙ্খলা কিংবা অন্য ধর্মের প্রতি কটুক্তি করা হলে জনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে। ফলে শালীনতা ও নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমানতা কিংবা মানহানি বা অপরাধ সংগঠনে প্ররোচনা সম্পর্কে বাক স্বাধীনতা প্রযোগ করা যাবে না বলেও আমাদের সংবিধানে বলা হয়েছে।"

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, "আমাদের দেশে বাক স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। আইন করে কিছু যুক্তিসঙ্গত ক্ষেত্রে বাক স্বাধীনতাকে রোধ করা যায়। এটা একটা মৌলিক অধিকার। এই মৌলিক অধিকার সাধারণত আইন করেও রোহিত করা যায় না। কিন্তু আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বাক স্বাধীনতাকে সীমিত করা হয়েছে।"

নারী ক্রিকেটাররা নীরব

তানজিম সাকিবের পোস্টগুলোর বিষয়ে নারী মানবাধিকার কর্মীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হলেও বাংলাদেশ নারী জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান কিংবা সাবেকরা একদম ‘চুপ’। নারী দলের সাবেক এক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, ‘‘আমি বোর্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাই এবিষয়ে বোর্ড থেকে কথা বলা নিষেধ আছে। অন্য কেউ বলে কি না, আপনাকে জানাচ্ছি।’’

এর কয়েকটি মিনিট পর এই প্রতিবেদকের হোয়াটসঅ্যাপে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সরি। আমাদের আসলে অনুমতি নেই। দুই-তিনজন সাবেক ক্রিকেটারকে আমি বলেছি। তারাও কথা বলতে চায় না।’’

'নারীবিদ্বেষ' বা 'মিসজিনি'

ফেসবুকে অনেক নারীই সাকিবের তানজিমের পোস্টগুলোকে নারীর প্রতি অবমাননাকর বলে মন্তব্য করে সমালোচনা করেছেন।

তানজিম সাকিবের পোস্টের বিষয়ে ফেসবুকে যারা তীব্র সমালোচনা করছেন তাদের একজন তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, উদীচী ও মহিলা পরিষদের পরিবেশ উপপরিষদ কর্মী এবং মহিলা পরিষদ কলাবাগান শাখার আহবায়ক সৈয়দা রত্না। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। একজন ক্রিকেটার ভালো খেলছেন, এটা আমরা প্রশংসা করি। পাশাপাশি তাকে ভালো মানুষও হতে হবে। এমনিতে আমাদের দেশে কিছু একটা হলেই নারীবিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে। কিছু মানুষ হামলে পড়ে। তবে হ্যাঁ, কোনো প্রতিভাবান ক্রিকেটার যদি নিজের ভুল বুঝতে পারেন, ক্ষমা চান, মানসিকতায় পরিবর্তন আনেন, তাহলে সাধুবাদ পাবেন।’’

‘‘বিসিবির সঙ্গে তার কী কথা হয়েছে, সেগুলো আমরা জানি না। এখন তিনি যদি অনুতপ্ত হন, যদি মনে করেন এই মানসিকতা থেকে সরে যাবেন, তাহলে ঠিক আছে। একটা মানুষকে তো আর ছুঁড়ে ফেলা যায় না, তাকে বদলানো যায়, চেষ্টা করা যায়।’’

ওদিকে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও কলাম লেখক শাহানা হুদা রঞ্জনা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "শুধু ক্রিকেটার সাকিবের ঘটনা নয়, আমরা যদি একটু পেছনের দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারবো দেশে প্রতিনিয়ত, নানাভাবে নারী বিদ্বেষ বাড়ছে। 'বাংলাদেশে ইন্টারনেটে পর্নোগ্রাফির সহজ বিস্তার এবং নারীর প্রতি সহিংসতা' শীর্ষক একটি গবেষণা বলছে যে দেশীয় অনলাইন ও মিডিয়াতে নারীর প্রতি অবমাননাকর, নারীর অশালীন দেহ প্রদর্শন, যৌন আবেদনময় ও পর্নোগ্রাফিক কনটেন্ট বা আধেয় বাড়ছে। নারীর পোশাক বা আচরণ দেখে মুহূর্তেই কোন মেয়েকে "ভাল মেয়ে’বা ”মন্দ মেয়ে" হিসাবে বিচার করার প্রবণতা বাড়ছে। এবং "মন্দ মেয়ে" বলে মনে হলে তাদের উপর আক্রমণের মানসিকতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আক্রমণ করাটাকেও আক্রমণকারীরা যৌক্তিক বলে মনে করেন। যে নারী স্বাধীনভাবে চলতে চান, তাদের প্রতি অন্য মানুষ কটুক্তি, সমালোচনা, তির্যক মন্তব্য ও অপমানজনক আচরণ করতেই পারেন, এমনটাও মনে করেন।"

তিনি আরও বলেন, "আসলে নারীর পোশাকের প্রতি অন্য নারী ও পুরুষের যে ক্ষোভ এর সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। এর সাথে সম্পর্ক আছে হীনতা, নীচতা, নিজেদের পরাধীন জীবন, বন্দীত্ব, যৌন ঈর্ষা ও নিজের স্বামী, স্ত্রী বা ছেলেকে নিয়ে অনিরাপত্তার বোধ (ইনসিকিউরিটি)। অন্য নারীকে পোশাক ও আচরণের জন্য যারা হেয় করেন, সেটা প্রধানত হলো নিজের ভেতরে থাকা নারীবিদ্বেষ (ইন্টার্নালাইজড মিসজিনি)। আমাদের দেশে ইন্টার্নালাইজড মিসজিনি বাড়ছে। এই বিদ্বেষ থেকেই ব্যাপক সংখ্যক নারী, নারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন, আর পুরুষতো আছেই।"

বোর্ডের বক্তব্য

তানজিমের বিষয়ে জানতে চাইলে জালাল ইউনুস সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘ক্রিকেট অপারেশন্স থেকে তানজিম সাকিবের সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মিডিয়া কমিটির পক্ষেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তার বক্তব্য হচ্ছে যে কাউকে আঘাত করার উদ্দেশ্যে তার এরকম পোস্ট দেওয়ার কথা না। যে পোস্টগুলো সে দিয়েছে, সে মনে করে নিজের থেকে দিয়েছে। কাউকে উদ্দেশ্য করে বা কোনো একটা কিছু টার্গেট করে এই পোস্ট দেওয়া হয়নি। এটা দেওয়ার পরে কারো যদি আঘাত লেগে থাকে, তাহলে মনে করছে যে হি ইজ সরি ফর দ্যট।’’

‘‘একটা কথা এসেছে নারীর ব্যাপারে। সে বলেছে, ‘এইটার আমি দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আসলে আমি নারীবিদ্বেষী নই।’ পুরোটাই সে ডিনাই করে বলেছে, ‘আমার মা একজন নারী। সুতরাং কোনোদিনই আমি নারীবিদ্বেষী হতে পারি না।’ আমরা তাকে সতর্ক করেছি। ভবিষ্যতে কোনো পোস্ট (বিতর্কিত) দিলে ক্রিকেট বোর্ড থেকে সেটা মনিটর করা হবে।’’

জালাল ইউনুসের এই বক্তব্যের সময় সিনিয়র এক সাংবাদিক বলেন, ‘‘তানজিম সাকিব বছরের পর বছর এ ধরনের পোস্ট দিয়েছেন নিজের ফেসবুক পেজে। আইসিসির নীতিমালার সঙ্গে পোস্টগুলো সরাসরি সাংঘর্ষিক। এগুলো নারীর প্রতি অবমাননাকর এবং ভিন্ন ধর্ম নিয়ে বিদ্বেষ ছড়ায়। এমন পোস্ট যিনি দিয়েছেন, তার সঙ্গে কি কথা বলার প্রয়োজন পড়ে? না কি কোনো ব্যবস্থা নিয়ে তারপর কথা বলা উচিত ছিল?’’

জবাবে জালাল ইউনুস বলেন, ‘‘সে বলেছে, ‘পোস্টগুলোর জন্য আমি দুঃখিত।’ আমরা (বোর্ড) তার সঙ্গে কথা বলেছি। সতর্ক করেছি, ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের পোস্ট না দেওয়া হয়। সে বলেছে, ‘অবশ্যই এধরনের পোস্ট থেকে বিরত থাকব।’ সে একটা বড় কথা বলেছে যে সে নারীবিদ্বেষী নয়। বলেছে, ‘আমার মা-ই তো একজন নারী।’ আমরা তাকে অবজার্ভ করবো। তার পরিবারও এব্যাপারে খুবই শঙ্কিত। এধরনের একটা সিচুয়েশন হবে তারাও আশা করেনি। পরিবারও দুঃখিত।’’

তানজিম সাকিবকে ছাড় দেওয়ার যুক্তি হিসেবে জালাল ইউনুস বলেন, ‘‘যেহেতু সামনে বিশ্বকাপ, সে একটা ইয়াং ছেলে, বয়স কম। এজন্য তাকে সতর্কই করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন মনিটর করবো। যদি অমন কিছু থাকে, অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাবো।...পোস্টগুলো সে ডিলিট করে ফেলেছে। আমাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে আলাপ হয়নি।’’

‘‘তানজিম সাকিব বিজয় দিবস মানেন না, অন্য সম্প্রদায়ের মূর্তি প্রসঙ্গেও দিয়েছেন আক্রমণাত্মক পোস্ট। তার সতীর্থ লিটন দাসই সেই সম্প্রদায়ের। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে তার ভাবনা আসলে কী,’’ এমন প্রশ্নের জবাবে জালাল ইউনুস বলেছেন সেই আগের কথাই, ‘‘যখন একবার সে দুঃখ প্রকাশ করেছে, তখন নিশ্চয়ই সে দুঃখ পেয়েই বলেছে।’’

এই প্রতিবেদন তৈরীতে সহযোগীতা করেছেন গোলাম সামদানী ও আফরিন শাহনাজ।