ভারতে সনাতন ধর্ম নিয়ে ভারতের তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী ও ডিএমকে দলের সুপ্রিমো এমকে স্ট্যালিন-এর পুত্র তথা ডিএমকে-র যুব নেতা উদয়নিধির মন্তব্য ঘিরে উতপ্ত রাজ্য তথা দেশের রাজনীতি। দিন পনেরো আগে চেন্নাইয়ের এক অনুষ্ঠানে তিনি মন্তব্য করেন, সনাতন ধর্ম সামাজিক ন্যায়ের পরিপন্থী। এই ধর্মকে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার মতো নির্মূল করা দরকার।
উদয়নিধি শুধু দলের যুব নেতা নন, তিনি তামিলনাড়ু সরকারে ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী। স্বভাবতই বিজেপি-সহ গোটা বিজেপি শিবির উদয়নিধির কথাকে হাতিয়ার করে ডিএমকের পাশাপাশি বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটের প্রবল সমালোচনা শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর মধ্য প্রদেশের জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সনাতন বিতর্ক হাতিয়ার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন আসন্ন পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটে এই ইস্যুকেই ‘রাম মন্দির’, ‘বজরংবলী’-র মতো ব্যবহার করতে চলেছে বিজেপি শিবির।
বিজেপির ‘সনাতন অস্ত্র’ নিয়ে কংগ্রেস-সহ ইন্ডিয়া জোটের শরিকেরা যখন কিছুটা আশঙ্কিত, বিশেষজ্ঞদের মতে তখন ডিএমকে তা আরও ধারালো করার রাস্তায় হাঁটছে। সনাতন ধর্ম নিয়ে আপত্তি তুলে উদয়নিধির বক্তব্য ছিল এই ধর্ম নারীর অধিকার স্বীকার করে না। সহমরণে বিশ্বাস করে এবং বিধবা বিবাহ মানে না। নারীর প্রতি বঞ্চনার একাধিক দৃষ্টান্তের একটি হল মন্দিরে তাদের প্রবেশাধিকারে বাধা। তামিলনাড়ুর ডিএমকে সরকার সেই প্রথা ভাঙতে তিনজন মহিলার নাম প্রকাশ করেছে যাদের অচিরেই রাজ্যের হিন্দু মন্দিরে পুরোহিতের ভূমিকায় দেখা যাবে।
রাজ্য সরকার কয়েক বছর আগে একটি পুরোহিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। সেটির উদ্ধোধন করার দিন মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেছিলেন, "পুজো করার জন্য নিয়ম কানুন জানলেই হয়। এরজন নারী-পুরুষ, ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ ভাগাভাগি থাকবে কেন?"তিন মহিলা ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেই পুজো প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রী স্ট্যালিন বলেছিলেন, "এটি সমতা স্থাপনের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রয়াস। যখন মহিলারা পাইলট এবং মহাকাশচারী হয়েছেন তখন তাদের পুরোহিত হতে দেওয়া হয়নি। কারণ তাদের অপবিত্র মনে করা হতো। এমনকী নারী দেবতার মন্দিরেও প্রবেশাধিকার নেই।"
বিজেপিও স্ট্যালিন পুত্রের সনাতন মন্তব্য নিয়ে পিছু হটেনি। কর্নাটকের বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বজরংবলীকে অবমাননার অভিযোগ তুলে প্রচারে করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বজরং দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকে প্রধানমন্ত্রী হনুমান দেবতা অর্থাৎ বজরংবলীর অসম্মান বলে প্রচারে চালিয়ে দেন। মধ্য প্রদেশের নির্বাচনী প্রচারে বৃহস্পতিবার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা সময় ব্যয় করেন সনাতন ধর্ম নিয়ে। কাঠগড়ায় তোলেন ইন্ডিয়া জোটকে।
তামিলনাড়ুতে পুরোহিত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত তিন মহিলা পুরোহিতের একজন পঁচিশ বছর বয়সী রম্যা এমএসসি পাশ। সার্টিফিকেট প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, "আমার ইচ্ছা ছিল শিক্ষকতা অথবা ব্যাঙ্কে চাকরি করব। কিন্তু পুরোহিত প্রশিক্ষণের বিজ্ঞাপনটি দেখে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলি। এটাতে অধিকার অর্জনের প্রাপ্তি আছে।"
তামিলনাড়ুর মন্দিরে মহিলারা অনেকেই পূজাপাঠের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কেউই পুরোহিতের মর্যাদা পান না। রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছে, সরকারি প্রশিক্ষণ শিবিরের সার্টিফিকেটধারী মহিলাদের পুরোহিত পদে নিয়োগ করা হবে, জানিয়েছেন তামিলনাড়ুর হিন্দু ধর্ম ও সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান বিষয়ক দফতরের মন্ত্রী পিকে সেকারবাবু।