ভারতের দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন-এর পুত্র উদয়নিধি সপ্তাহ দুই আগে সনাতন ধর্মকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার মতো নির্মূল করার ডাক দেন। তারপর থেকে এই বক্তব্য ঘিরে উত্তাল দেশের রাজনীতি।
এরই মাঝে সনাতন ধর্মের পর এবার হিন্দি ভাষার বিরুদ্ধে সরব হলেন উদয়নিধি। ডিএমকে-র এই যুবনেতা বৃহস্পতিবার ১৪ সেপ্টেম্বর হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
সপ্তাহ দুই আগেই সনাতন ধর্ম নিয়ে করা তার বিতর্কিত মন্তব্য এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত। বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মধ্য প্রদেশে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ থেকে ইন্ডিয়া জোটকে নিশানা করেছেন। ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিক তামিলনাড়ুর শাসক দল ডিএমকে। উদায়নিধির বক্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "ইন্ডিয়া জোটের নেতারা সনাতন ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলছেন।" এর বিরুদ্ধে সকলকে পাল্টা জোট বাঁধার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। গত সপ্তাহে মন্ত্রীদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, উদয়নিধির বক্তব্যের কড়া জবাব দিতে।
বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর হল হিন্দি দিবস। প্রতি বছরের মত এবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরকারি অনুষ্ঠানে হিন্দির উপযোগিতা ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন ভারতে যোগাযোগের একটি ভাষা হল হিন্দি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন উদয়নিধি। তার বক্তব্য "হিন্দি নিয়ে এভাবে বড়াই করা এক ধরনের ছেলেমানুষি। মাত্র চার পাঁচটা রাজ্যের মানুষের ভাষা হল হিন্দি। সেটা কী করে গোটা দেশের মানুষের যোগাযোগের ভাষা হতে পারে?"
এই প্রসঙ্গেই তামিল তেলুগু, মালায়ালি এবং কন্নড় ভাষার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, "তামাম দাক্ষিণাত্যের সঙ্গে হিন্দির কোন সম্পর্কই নেই। তাহলে এই ভাষা কি করে ভারতের ভাষা হতে পারে?"
হিন্দি দিবসের অনুষ্ঠানে অমিত শাহ বলেছেন এই ভাষার বিকাশের পাশাপাশি সব আঞ্চলিক ভাষার উন্নতিতেই সরকার আগ্রহী। তার বক্তব্য হিন্দির প্রসার ঘটা মানে অন্য ভাষা হারিয়ে যাওয়া নয়। কিন্তু উদয়নিধি হিন্দির উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন।
রাজনৈতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়েছে ডিএমকে নেতৃত্ব কেন হঠাৎ করেই সেইসব ইস্যুতে সরব হচ্ছে যা উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে মেরুকরণের রাজনীতিকে উস্কে দেয়, তা নিয়ে। এদিকেউদয়নিধির সুরে সনাতন ধর্মের নিন্দায় মুখর হয়েছেন ডিএমকে-র প্রবীণ নেতা এ রাজাও।
রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বারাণসীর পাশাপাশি তামিলনাড়ুর মাদুরাই অথবা কন্যাকুমারীর মত মন্দির শহর থেকে এবার প্রার্থী হতে পারেন। মোদী নিজে প্রার্থী হয়ে তামিলনাড়ু সহ দাক্ষিণাত্যে বিজেপির হাওয়া তুলতে চান। এই সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই ঘর গোছাতে প্রতি আক্রমণ শুরু করেছে ডিএমকে। তাদের নিজস্ব ভোট ব্যাংক সংহত করতে চাইছে তারা। বরাবরের মতো তাদের হাতিয়ার তামিল জাতীয়তাবাদ।
উল্লেখ্য, উত্তর ভারতে সনাতন ধর্ম নিয়ে যে আবেগ কাজ করে দক্ষিণ ভারতে তা নেই। সেখানে সনাতন ধর্মকে আলাদা মর্যাদা দেওয়া হয় না। প্রাচীন তামিল ধর্ম গ্রন্থে সনাতন ধর্ম বলে কোনও কথার উল্লেখ নেই।
শুধু তাই নয় হিন্দু ধর্মের বর্ণভেদ প্রথা, গোঁড়ামির বিরুদ্ধেও দক্ষিণ ভারত সরব। সেখানে অতীতের রাজনৈতিক এবং সামাজিক আন্দোলনের মূল অভিমুখ ছিল বর্ণভেদ প্রথার বিরোধিতা এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষের অগ্রগতি। দক্ষিণ ভারতের এই রাজনীতির সঙ্গে উত্তর ভারতের কার্যত কোন মিল নেই।
উত্তর ভারত একদিকে যেমন সনাতন ধর্মকে মানে, একই সঙ্গে হিন্দির প্রতি তার অনুরাগ বেশি। অন্য দিকে দক্ষিণ ভারত বরাবর হিন্দি বিরোধী। দক্ষিণ ভারতে হিন্দি বিরোধী আন্দোলনের গর্ভগৃহ বলা চলে তামিলনাড়ুকেই।